কালার ইনসাইড

এক আফসোসের নাম হুমায়ূন ফরীদি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/02/2018


Thumbnail

২০১২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি, ৫৯ বছরে বসন্তের প্রথম সকালে পাড়ি জমান না ফেরার দেশে। সেই থেকে শোবিজ অঙ্গনে এক আফসোসের নাম হুমায়ূন ফরীদি। এই স্থায়ী আফসোসটা ক্ষনে ক্ষনেই জেগে উঠে। কান পাতলেই শোনা যায়। কি অভিনেতা কি পরিচালক, হোক সেটা সিনেমা, নাটক, টেলিফিল্ম অথবা মঞ্চের- সবারই এক আফসোস- এমন শক্তিমান অভিনেতা ছাড়া মনের মতো চরিত্র ফুটিয়ে তোলা মুশকিল। সেই মনের মতো চরিত্রটি ফুটিয়ে তোলার মানুষটি আর নেই! সবার দীর্ঘশ্বাস-‘এ দেশে এ ক্যারেক্টার কেবল ফরিদী ভাই-ই পারতেন। কিন্তু ফরিদী ভাই তো...’

হুমায়ূন ফরীদিকে নিয়ে তাঁর এক ভক্তের মন্তব্য-

ছোট বেলায় সংশপ্তক নাটকটি দেখে একটা লোকের ঊপর আমার প্রচন্ড রাগ হত। ভাবতাম! এই লোকটা এত খারাপ কেন। একটু বড় হলে অভিনয় ব্যাপারটাকী কিছুটা বুঝতে শিখি। ঠিক তখনই ওই লোকটার প্রেমে পড়ি, প্রেমে পড়ি তার অভিনয়ের। সেই লোকটি হচ্ছেন হুমায়ুন ফরীদি। কি অসাধারন অভিনয়! ঠিকঠাক অভিনয়টা দেখার জন্য তাঁর বিকল্প খুবই কম আছে। টিভি খুলেই যদি কখনো হুমায়ুন ফরীদির কোনও নাটক বা সিনেমা দেখতাম, তাহলে আমি সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত টিভি বন্ধ করতাম না। কিন্তু যখন এই লোকটার মৃত্যুর খবর শুনলাম, অবশ্য তখন আমি কাদিঁনি, তবে কোথায় যেন একটা শুন্যতা আনুভব করলাম। মনে হলো আমার কি যেন একটা হারিয়ে গেল। আমার বাংলাদেশ কি যেন একটা হারালো। কোন একটা স্থান যেন শুন্য হলো। যেটা কখনো আর পূরণ হবার নয় ………

বেসরকারী এক টেলিভিশনে একবার হুমায়ূন ফরীদির একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উপস্থাপক ছিলেন লেখক ইমদাদুল হক মিলন। সেই সাক্ষাৎকার থেকেই কিছু কথা তুলে ধরছি।

প্রথমেই তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় যে তিনি নাকি দিনে ৪-৫বার ভাত খান। এ প্রশ্নের জবাবে ফরীদি বলেন, তিনি আসলে অল্প আহার করেন। মানুষ তিনবেলায় যা খায়, তিনি অল্প অল্প করে ৪-৫ বারে তা খান। তবে প্রতিবার যে ভাত খান তা ঠিক নয়। আইটেম হিসেবে রুটি, সবজিও খান তিনি।

এরপর প্রশ্ন করা হয় তার নাম নিয়ে। তিনি বলেন ‘ফরীদি’ লেখা সহজ বলেই তিনি শব্দটি এভাবে লেখেন, এছাড়া বিশেষ কোন কারণ নেই। আর তার মার নাম ছিল ফরিদা ইসলাম, সেখান থেকেই তার নামকরণ হয়েছে।

এরপর তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, তার অভিনয় করাটা তার পরিবার দ্বারা কোনভাবে প্রভাবিত কিনা। তিনি এর উত্তরে ‘না’ বলেন। এবং আরও বলেন, তার বাবা একবার অভিনয় করেছিলেন। তবে তার পরিবার থেকে তিনি প্রভাবিত হননি।

যুদ্ধের পর নৈরাশ্য থেকেই তিনি অভিনয়ে যোগ দেন। অনেকে বলে তিনি যাত্রায় অভিনয় করতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন তিনি শুধু এক মৌসুম যাত্রায় কাজ করেছেন। যাত্রার মাধ্যমে তার অভিনয় জীবন শুরু এটা ভুল কথা।

‘একজন ভালো অভিনেতা দিনের চব্বিশ ঘণ্টাই অভিনয় করে চলেন,’ বলতেন তিনি। কিন্তু তিনি আমাদের ছেড়ে ওপারে চলে গেলেন চিরতরে, এটা কোন অভিনয় নয়। সত্যিই তিনি চলে গেলেন আমাদের উদাস করে। তাকে আর আমরা কখনও ফিরে পাব না।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আক্ষেপ করে প্রয়াত নন্দিত অভিনেতা হুমায়ুন ফরীদি সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আচ্ছা, এই মানুষটি কী অভিনয়কলায় একটি একুশে পদক পেতে পারেন না! এই সম্মান কী তার প্রাপ্য না?’ বেঁচে থাকতে ফরীদি তা পাননি। তবে মরণোত্তর একুশে পদক পাচ্ছেন তিনি। অভিনয় অঙ্গনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই স্বীকৃতি এবার দিলো সরকার। 


বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭