ইনসাইড পলিটিক্স

ফের রাজনীতির পালে বিএনপির অশনিসঙ্কেত


প্রকাশ: 22/01/2023


Thumbnail

যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আসছে ২৫ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে দেশব্যাপী জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি। ওইদিন দুপুর ২টায় কেন্দ্রীয়ভাবে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে দলটি। বিষয়টি অবহিত করে সমাবেশের জন্য মাইক ব্যবহার ও সার্বিক সহযোগিতা চেয়ে গত ১৯ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর আবেদনও করা হয়েছে। বিএনপির প্রেস উইং সূত্র গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

এদিকে আজ রোববার (২২ জানুয়ারি) এক বিবৃতিতে ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী সমাবেশের কর্মসূচি সফল করে ১০ দফা দাবিতে চলমান গণ-আন্দোলনকে বেগবান করতে দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীসহ জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অন্যদিকে বিএনপির এই সমাবেশকে দেশের রাজনীতির পালে ফের অশনিঙ্কেত বলে বলে অবিহিত করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কেননা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং মির্জা আব্বাস গত ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬ টায় কারামুক্ত হয়েছেন। বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশকে সামনে রেখে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন নিহত এবং অর্ধ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এতে আহত  হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও। পরদিন ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে তাঁদের বাসা থেকে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে তাঁদের ৭ ডিসেম্বরের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এই মামলায় এক মাস কারাভোগের পর জামিন পান এই দুই নেতা। 



সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) হাইকোর্ট রুলসহ এই দুই নেতার ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। এই আদেশ স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ পরদিন বুধবার আবেদন করে, যা আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। চেম্বার আদালত ওই আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ বিএনপির এই দুই নেতার ছয় মাসের জামিন আদেশ বহাল রাখেন।

সূত্রমতে,গত ১৬ জানুয়ারি (সোমবার) চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে সংঘর্ষে পুলিশসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। ওই দিন আটক করা হয় অন্তত ২০ জন বিএনপির নেতা-কর্মীকে। এদিন ট্রাফিক পুলিশের একটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয় বিএনপি সমর্থকরা। সড়কে যানবাহন ও দোকান ভাংচুর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে। পরে এ ঘটনায় ২৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ১ হাজার ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা হলে শেষ পর্যন্ত পুলিশ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি একটি ক্ষুদ্র ঘটনা। কিন্তু গত ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১০০ দিনে বিএনপি-জামায়াত ১৫৩ জন মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল। বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোলবোমার তান্ডবে আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার মানুষ। ৫ শতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিল। এ সময় বোমা হামলা হয়েছে ৫ শতাধিক। সরকারি এবং অন্যান্য স্থাপনায় অগ্নিসংগোগের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ৫০টির অধিক। এ সব ঘটনার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার মিরাসানী রেলস্টেশনের টিনশেড অফিসকক্ষে আগুন দিয়ে সব নথিপত্র পুড়ে দেয় বিএনপি-জামায়াত। 

এছাড়াও, গত ১০ই ডিসেম্বর ঘিরে যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল, সেটি মূলত বিএনপি নেতা আমানুল্লাহ আমানের দেয়া এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই। তিনি ঢাকায় একটি রাজনৈতিক সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে বলেছিলেন, ১০ই ডিসেম্বরের পরে বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হবে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে। তার সেই বক্তব্যের পরে স্বভাবতই সবার মধ্যে এক ধরনের উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছিল এই ভেবে যে ১০ই ডিসেম্বর কি তাহলে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে? কিন্তু তার সেই বক্তব্য শুধু বক্তব্যই হিসেবে থেকে গেছে। যদিও পরিবর্তন ঘটবার মতো যৌক্তিক কোনো কারণ ছিল বলে আমাদের মত দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করেনি।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি রাজধানীর মতিঝিলে রাজউক ভবনের সামনের সড়কে একটি বাস এবং একটি প্রাইভেট কারে আগুন দেয় বিএনপি-জামায়াত। এই বছরের ৯ জানুয়ারি রাজধানীর মগবাজার এলাকায় বিএনপি-জমায়াতের কর্মীদের নিক্ষিপ্ত পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে ছয় দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ডাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান প্রাভেটকার চালক আবুল কালাম। তার স্বজনদের আহাজারিতে তখন হাসপাতাল এলাকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। 

এসব ঘটনার উদ্ধৃতি দিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ঘটনাগুলো হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামাত সংগঠিত করেছিল। এমন অহরহ ঘটনা রয়েছে। এতে কত শত সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, তা বিভিন্ন গণমাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতার দাবিতে যে নৈরাজ্য চালিয়েছে, তা দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। তাই বিএনপির কোনো সমাবেশ বা কর্মসূচি হলেই জনগণ ভয় পায়। বিএনপির কোনো সমাবেশ বা কর্মসূচি মানেই দেশের রাজনীতির পালে একটি অশনিসঙ্কেত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, আগামী ২৫ জানুয়ারি আবারও সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। এই সমাবেশ কি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হবে? এই সমাবেশ কি জনসাধারণের কথা বলবে? নাকি আবার সেই আতঙ্ক, অশনিসঙ্কেত? এখন দেখার বিষয় বিএনপি আগামী ২৫ জানুয়ারি কি করে?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭