ইনসাইড গ্রাউন্ড

জুভেন্টাসের আর্থিক কেলেঙ্কারি


প্রকাশ: 23/01/2023


Thumbnail

দলবদল নিয়ে অনিয়ম এবং আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে জুভেন্টাসের ১৫ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে ইতালিয়ান ফুটবল ফেডারেশন। ফলে সিরি আর' চলতি মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের থেকে ১০ নম্বরে নেমে যেতে হয়েছে তুরিনের বুড়িদের। এই মৌসুম তো বটেই ঘটনা ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে ক্লাবটির আগামী মৌসুমকেও। জুভেন্টাসের সামনে এখন যে বন্ধুর পথ তার পাড়ি দিতে না পারলে আগামী মৌসুমে ইউরোপের শীর্ষ প্রতিযোগিতায় প্রতিন্দন্দ্বীতা করতে পারবে না দলটি।

ঘটনাটি গেল শুক্রবারের। ২০২১ সালে জুভেন্টাসসহ ১০টি ক্লাবের দলবদলের বাজারে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছিলো সিরি ফুটবলের তদারকি কমিশন। ২০১৮ থেকে ২০২১ মৌসুম পর্যন্ত তাদের কাছে ৬২টি অভিযোগে জমা পড়ে। যার ৪২টিই জুভভেন্টাসের বিপক্ষে। সে বছরই মে মাসে তাদের বিরুদ্ধে "প্রিজমা' মামলা করেন তুরিনের এক প্রসিকিউটর। তবে গত বছর এপ্রিলে জুভেন্টাসসহ অভিযুক্ত ১০ ক্লাবকে মামলা থেকে অব্যাহৃতি দেন আদালত।

তবে নতুন করে আসা তথ্য-উপাত্তের কারণে জুভেন্টাসের বিরুদ্ধে পুনরায় তদন্ত শুরু করা হয়। মূলত "প্লাসভালেঞ্জা"পদ্ধতির মাধ্যমে নিজেদের আর্থকভাবে লাভবান এবং দলবদলের বাজারে নিজেদের আর্থিক অবস্থা যা তার থেকে ভালো দেখিয়ে প্রতি বছর কয়েক মিলিয়ন ইউরো অবৈধভাবে মুনাফার খাতায় যোগ করছিলো জুভরা। কোন ফুটবলারের ট্রান্সফার ফি'কে, সেই ফুটবলারের সাথে চুক্তির সময়কাল অনুযায়ী সমানভাবে বিন্যস্ত করে ক্লাবটি। চুক্তি শেষ হওয়ার আগে যদি সে ফুটবলারকে ছেড়ে দেয়, সেখান থেকে তারা ট্রান্সফার ফির অর্থ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ বাড়তি মুনাফা তুলে নেয়, যা সরাসরি ক্লাবের বার্ষিক মুনাফায় জমা হয়। যা উয়েফার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। আর কারণেই কালসিওপোলি বিতর্কের ১৭ বছর পর আবারো পায়ের নিচের মাটি কেঁপে উঠলো ইতালির অন্যতম সফল ক্লাবটির।

মূলত আর্থার মেলো এবং মিরালেম পিয়ানিচের একটি দলবদলকে কেন্দ্র করে বিষয়টি সামনে চলে আসে। ২০২০ সালের গ্রীষ্মে বার্সেলোনা থেকে জুভেন্টাসে যোগ দেন আর্থার মেলো। আর জুভেন্টাস ছেড়ে বার্সায় যান পিয়ানিচ। তবে এই দুই ফুটবলারের দলবদল একই চুক্তির আওতায় হয়নি। সেসময় বার্সা জানিয়েছিলো, আর্থারের জন্য ৭২ মিলিয়ন ইউরো দেবে জুভেন্টাস। আর পিয়ানিচকে টানতে ৬০ মিলিয়ন ইউরো খরচ হয় বার্সার। ফলে দুই ফুটবলারের অদল-বদলে কাতালান ক্লাবটিকে পুরো অর্থ না দিয়ে বাড়িত থাকা ১২ মিলিয়ন ইউরো পরিশোধ করে তুরুনের ক্লাবটি। কিন্তু তখন আর্থিক জটিলতায় নিমজ্জিত বার্সাকে মৌসুম শেষে স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনকে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুনাফা দেখাতে হলে অর্থের প্রয়োজন ছিলো। সেসময় এটিকে ফুটবলীয় চুক্তি নয় বরং বাণিজ্যিক চুক্তি হিসেবে অ্যাখা দেয়া হয়। একই ধরনের ঘটনা ঘটে ২০১৯ সালে যখন ৩৭ মিলিয়ন ইউরোতে জুভেন্টাসে আসে দানিলো আর ৬৫ মিলিয়ন ইউরো ট্রান্সফার ফি'তে ম্যানসিটিতে পাড়ি জমায় জোয়াও কনসালো।

এছাড়াও তুরিনের বুড়িদের বিরুদ্ধে ফুটবলারদের বেতন থেকে অর্থ কমিয়ে বাড়তি মুনাফার অভিযোগও রয়েছে। ইতালির শীর্ষ ক্রীড়া মাধ্যম গাজ্জেতা দেল্লো স্পোর্ত জানায়, কোভিড-১৯ এর সংকটের কারণে স্টেডিয়ামে দর্শক নিষিদ্ধ হলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে ক্লাবগুলো। সেসময় নিজেদের বেতন কমিয়ে ক্লাবগুলোকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয় ফুটবলাররা। জুভেন্টাস বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেসময় কাগজে-কলমে ফুটবলারদের চার মাসের সমপরিমাণ অর্থ ছাড়ের হিসাব দেখালেও, আসলে ফুটবলাররা ছাড় দিয়েছেন মাসের বেতন। কর ফাঁকি দিতে এই পন্থা বেছে নেয় ক্লাবটি।

এই রায়ে জুভেন্টাসের ভবিষৎ হুমকির মুখে পড়লেও, সিরি আর ক্লাবগুলোর জন্য এই রায় একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যদিও আর্থিক বিষয়ে মিথ্যাচারের অভিযোগে এর আগেও ইতালিয়ান ক্লাবগুলো শাস্তি পেয়েছে। ২০০৮ সালে এসি মিলান তাদের নগর প্রতিন্দন্দ্বীদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠলেও তা প্রমাণিত হয়নি। তবে অনুরুপ অভিযোগে ২০১৮ সালে পয়েন্ট কেটে নেয়া হয়ে সেসেনার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭