লিভিং ইনসাইড

বসন্ত কেন রোমান্টিক?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/02/2018


Thumbnail

মাঘের শেষ, শীতের বিদায়ঘণ্টা বেজে গিয়ে আজকের ভোরের সুর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতিতে ফাগুণের আগমনী গান জানান দিচ্ছে ঋতুরাজ বসন্তের। ইট কাঠের জঞ্জালে ভরা ধুলো ময়লার নগরে আটপৌরে বাসন্তি শাড়ির সাথে মাথায় হাতে তৈরি ফুলের মুকুট, অঙ্গে জড়ানো গাদা ফুলের মালা কিংবা নীল সাদা পাঞ্জাবী পরে অলিগলি ঘুরাতে; ব্যস্ত শহরে রিকশায় কিংবা পার্কে বসে বসন্তের আসল ছোয়া স্পর্শ করা যায় না অভিযোগকে পাশ কাটিয়ে সবাই মেতে ওঠেন বসন্তোল্লাসে। কারণটা এমনি এমনি নয়। বসন্তের রয়েছে সেই মাদকতা। বসন্তের রূপ-যৌবন, আবেদন, মাতাল করা সৌন্দর্য হৃদয়ে দিয়ে যায় প্রাণের সঞ্চারনী দোলা। বসন্ত মনের অনেক গভীরে ভালোবাসার বীজ বুনে দেয়। সেই ভালবাসায় আকুল হতে চায় সবাই। গ্রামীণ কিংবা শহুরে জীবনে মানব মনে বসন্তের আগমন ছন্দ তোলে মৃদু হিল্লোলে । রোমান্স ভর করে প্রত্যেকেরই।

প্রকৃতি স্ব-উদ্যোগে আগমন জানায় কোকিলকে। আমাদের সংস্কৃতির অস্তিত্বের অনেকটা স্পর্শ করে বসন্তের আগমনী গান শোনায় বসন্তের কোকিল । ভোরের আলো ফুটে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ থেকে ধেয়ে আসা দমকা হাওয়া, প্রথম সূর্যে কোকিলের কুহূ কুহূ ডাক, ঘরের আঙ্গিনায় বড় আমের গাছটির মুকুলের মো মো গন্ধ, পলাশ-কৃষ্ণচূড়ায় ছেয়ে থাকা হেঁটে চলা মেঠোপথ প্রকৃতিকে যেমন নাড়া দেয় তেমনি মানুষের মনেও দোলা দিয়ে যায়। ভোরবেলায় কাকের কা কা ডাকের ভীড়েও কোকিলের কুহু কুহু, ড্রেনের পচা দুর্গন্ধ,ধুলোবালি,যান্ত্রিকতায় আপনার মনকে করে তোলে রঙিন।

গাছে গাছে সুশোভিত ফুল, ফাগুনের রক্ত রাঙা সবুজ পত্র কাননের মাঝে ঝিরি ঝিরি বসন্ত বাতাসের হিমেল হাওয়ায় ঢেউ খেলে যায়, ধান ক্ষেতে দিয়ে যায় দোল। সেই দোলের হাওয়ায় নেচে ওঠে মানুষের মনও। গাছে গাছে পত্র-পল্লবের আড়ালে আবডালে লুকিয়ে থাকা বসন্তের দূত কোকিলের মধুর কুহুকুহু ডাকে ব্যাকুল হয় অনেক বিরোহী অন্তর। প্রেম জাগায় মনে। প্রকৃতির মতন প্রেম-উপন্যাস বিমুখ নিরস লোকটির মনেও গ্রহণ লাগে প্রেম-ভালোবাসার। গায়ের মেঠো পথে কিংবা নাগরিক জঞ্জালে ভরা ইট-কাঠের ধুলোবালির নগরে হিমেল হাওয়ায় বাসন্তী রঙা নারীর আঁচল উড়ে যাওয়ার দৃশ্য হৃদয়ে প্রাণের সঞ্চারণ করে। বসন্তের মাতাল করা রুপ-সৌন্দর্য মানব মনকে রোমান্টিক করে না? এমন নজির খুব কমই হাজির করতে পারবেন বিরস লোকটিও। বসন্ত প্রাণে প্রাণে দোলা দেয়। সে এক নীরব নিবিড় দোলা, সে যার প্রাণ আছে সেই বোঝে। বসন্তকে তাই রোমান্টিক না বলার উপায় আছে?

সাধারণ মানব মনকে যেমন বসন্তের হাওয়া ছুঁয়ে যায়, তেমনি সেই আদিকাল থেকে বাদ যাননি কবি সাহিত্যিকেরাও। গল্প কবিতায় জয়গান গেয়েছেন বসন্তের। বিদ্রোহ ছেড়ে কাজী নজরুল ইসলাম বসন্তের বন্দনায় মেতেছেন। প্রতিবাদ ভুলে কবি সুকান্ত জানতে চেয়েছেন, ‘বসন্তেরই হাওয়া,তোমার নবীন প্রাণে প্রাণে,কে সে আলোর জোয়ার আনে?’ হেমন্ত প্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশের কাছে বসন্ত এক ভিন্ন রূপ বলেই হয়তো তিনি কবিতায় বসন্তকে এনেছেন অনেকটা নীরবে-নিভৃতে, তবুও তিনি বসন্তের টান উপেক্ষা করতে পারেননি। আধুনিক কবি,উত্তরাধুনিক কবিদের কবিতায়ও বসন্ত বন্দনা লক্ষ করা যায়। হেলাল হাফিজ,নির্মলেন্দু গুণ,সুফিয়া কামাল,ফররুখ আহমদ সবাই বসন্তের দোলায় মেতেছেন। আর বর্ষা প্রেমিক হলেও বসন্ত নিয়ে রবী বাবুর কবিতা গান বাঙালির মুখে মুখে।


বাংলা ইনসাইডার/এসআর/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭