ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সবাই কি ক্ষমা পাবে?


প্রকাশ: 23/01/2023


Thumbnail

দল বা সংগঠনে থেকে দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করা, দলের সাথে নানা রকম প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা এবং দলীয় নিয়মনীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে দল থেকে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। এর মধ্যে গত কাউন্সিলের মিটিংয়ে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল, ছোটখাটো অপরাধ করেছিল, তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। সাধারণ ক্ষমার আওতায় প্রথম সাধারণ ক্ষমার পুরষ্কার পেয়েছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। 

তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃতদের এই তালিকা বেশ দীর্ঘ। বাকিদের ক্ষেত্রে কি হতে পারে? এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে মেয়র জাহাঙ্গীর যদি সাধারণ ক্ষমা পেতে পারেন, তবে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত অন্যান্য নেতাদের ক্ষেত্রে কি হবে? তারা কি সবাই ক্ষমা পাবেন? 

এছাড়া, দলের নিয়ম ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পৌরসভা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন, এমনকি সংসদ নির্বাচনও করেছিল অনেকেই। ফলে দলীয় সংবিধান অনুযায়ী বহিষ্কৃত হন এসব নেতা। এদের মধ্যে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেন অন্যতম। এছাড়াও আছেন অনেকে। তাদের কী হবে?

অন্যদিকে, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন না করলেও দলের নিয়ম-নীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন অনেকেই। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. মুরাদ হাসান। রয়েছেন রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এবং কাটাখালি পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্বাস আলী। রয়েছেন আরও অনেকেই। তারা কি ক্ষমা পাচ্ছেন?   

জানা গেছে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ঢাকা-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আওলাদ হোসেনকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত করে তাকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর ৪নং আসনের অন্তর্গত থানা, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের যে সকল নেতাকর্মীরা ড. আওলাদ হোসেনকে সহযোগিতা করছেন, তাদেরকে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। এই নির্দেশ উপেক্ষা করে যদি কোনো নেতাকর্মী ড. আওলাদ হোসেনকে সহযোগিতা করেন তাদের বিরুদ্ধেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সূত্রমতে, বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচন না করলেও দলের নিয়ম-নীতি ভঙ্গসহ বিভিন্ন কারণে দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ও জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ড. মুরাদ হাসান। নানা বিষয়ে বিতর্কিত কথা বলে আলোচনা ও সমালোচনার শীর্ষে আসেন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জামালপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান। সবশেষ এক চিত্রনায়িকার সঙ্গে তার আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ফাঁস হওয়া ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যে কারণে ডা. মুরাদ হাসানকে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে বাধ্য হয়েই অব্যাহতি নিতে হয়। পরে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। 

সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল বসানোয় আপত্তি তোলা, কটূক্তি ও বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে এবং কাটাখালি পৌরসভার মেয়র থেকে আব্বাস আলীকে বহিষ্কার করা হয়। রাজশাহীর কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী একটি ঘরোয়া বৈঠকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ উঠে। এ সংক্রান্ত তার একটি অডিও কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তাকে রাজশাহীর পবা পৌরসভার আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ এবং কাটাখালি পৌরসভার মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

অডিও কথোপকথনে মেয়র আব্বাস বলেছিলেন, ‘একটু থাইমি গেছি গেটটা নিয়ে, একটু ডিজাইন চেঞ্জ করতে হচ্ছে। বড় হুজুরের সঙ্গে আমাদের এক লোক বসেছিলে, বলেছে যে ম্যুরালটা দিছে বঙ্গবন্ধুর, এটা ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক সঠিক না। এ জন্য আমি ওকে থুব না। সব করবো, যা কিছু আছে, খালি শেষ মাথাতে মানুষ যেটা মাইন্ড করবে না ওড্যাই। আমি দেখতে পাচ্ছি যে, ম্যুরালটি ঠিক হবে না দিলে। আমার পাপ হবে। তো কেন দিব? দিব না, আমি তো কানা লোক না, আমাকে বুঝাই দিছে। এ জন্য আমি ওটাকে চেঞ্জ করছি।’ 

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন সময়ে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ এবং কথা বলার কারণে আওয়ামী লীগ থেকে অনেক নেতাই বহিষ্কৃত হয়েছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ সাধারণ ক্ষমার আওতায় এসেছেন। তবে সবাইকে ক্ষমা করা হবে, ঠিক তা নয়। অপরাধ বিবেচনায় ছোটখাঠো অপরাধ যারা করেছেন, ইতিমধ্যেই তারা সাধারণ ক্ষমা পাচ্ছেন। অপরাধ বিবেচনায় কেউ কেউ ক্ষমা পেতে পারেন। উপজেলা এবং পৌরসভা পর্যায়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তাদের অনেককেই সাধারণ ক্ষমার আওতায় এনে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পুনরায় সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে।             

সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগে অনুষ্ঠিত জাতীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের ক্ষমা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে মোতাবেক দলের সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ব্যক্তিগতভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে ক্ষমার বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়। জাহাঙ্গীর আলমের চিঠিটি গত ১ জানুয়ারি ইস্যু করা হয়। 

সূত্র আরও জানায়, ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই অডিওতে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করতে শোনা যায় মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। এ ঘটনায় ওই বছরের ১৯ নভেম্বর তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে বেশকিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৫ নভেম্বর তাকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।    

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মেয়র জাহাঙ্গীর যে ধরনের দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ করেছেন, এমন আপরাধ করে অনেকেই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। যেহেতু মেয়র জাহাঙ্গীর সাধারণ ক্ষমার আওতায় এসেছেন, সেহেতু অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও এই সাধারণ ক্ষমা আশা করা যেতেই পারে। তবে লঘু দণ্ড এবং গুরু দণ্ড বিবেচনায় এ ক্ষমা হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় কারা আসছেন? কে কে সাধারণ ক্ষমা পেয়ে আওয়ামী লীগ থেকে পুরষ্কৃত হচ্ছেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭