ইনসাইড আর্টিকেল

স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি ৬৯-এর গণঅভ্যূত্থান


প্রকাশ: 24/01/2023


Thumbnail

বাংলাদেশে অনেক গণ আন্দোলন হয়েছে তবে ১৯৬৯ সালের গণ আন্দোলনকেই একমাত্র ১৯৬৯ সালের গণ অভ্যূত্থানরূপে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এর একটি কারণ এমন ও হতে পারে যে ১৯৫২ সালের পর গণতন্ত্র রক্ষায় এবং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের দাবি দাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এটিই ছিলো একমাত্র আন্দোলন যা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছেছিলো। আজ ২৪ জানুয়ারি, ঐতিহাসিক গণ অভ্যূত্থান দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তিকামী নিপীড়িত জনগণের পক্ষে জাতির মুক্তি সনদ খ্যাত ছয় দফা এবং পরবর্তী সময়ে ছাত্র সমাজের দেওয়া ১১ দফা কর্মসূচির প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হয়েছিল এ গণঅভ্যুত্থান।

১৯৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান এর পটভূমি নিয়ে ভাবলে প্রথমেই চলে আসে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের কথা। সেই সময়গুলোতে অনবরত প্রচার করা হতো যেইসব কথা তার মূল কথা হলো- "ইংরেজ শাসন থেকে মুক্তির চেয়ে হিন্দু জাতীয়তাবাদের ষড়যন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে ইসলামী মূল্যবোধ ও আদর্শের আলোকে পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণ ও আত্মবিশ্বাসের আকাঙ্ক্ষাই ছিলো পাকিস্তান আন্দোলনের  মূল কথা। ১৯৬৯ সালের যুদ্ধ শেষ হলো তাশখন্দ চুক্তির মাধ্যমে। পাকিস্তান যে কাঙ্ক্ষিত জয় পায়নি তার প্রমান তাশখন্দ চুক্তি করতে বাধ্য হওয়া। এই অঞ্চলের বাঙ্গালীরা এইসব প্রচার প্রপাগান্ডার  পর ও অনুধাবন করতে পেরেছিলো যে পূর্ব পাকিস্তানকে অরক্ষিত রাখা হয়েছে। ভারত যদি পূর্ব পাকিস্তান আক্রমন করতো তবে নিমিষেই তা দখল করতে পারতো৷ এতদিন কেন্দ্রীয় সরকার যে তত্ত্ব দিয়ে আসছিলো তা হলো, পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা পশ্চিম পাকিস্তানে নিহিত৷  পরবর্তীতে দেখা গেলো তা শূন্যগর্ভ বক্তব্য মাত্র। পাকিস্তান ভারত যুদ্ধ এভাবেই প্রভাব ফেলছিলো বাঙ্গালীর উপর। এরপর ১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের শাসন, শোষণ ও বঞ্চনা থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্ত করতে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। এতে স্বাধিকার আন্দোলনের গতি তীব্র হলে পাকিস্তানি শাসকেরা একে নস্যাৎ করতে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। এ মামলার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী ছাত্র-শ্রমিক-জনতা দুর্বার ও স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন গড়ে তোলে। এবং পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের লক্ষ্যে ১৯৬৯ সালের ১৯ জানুয়ারি সংগ্রামী জনতা স্বৈরাচারী আইয়ুব দমন-পীড়নের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। এবং  ২০ জানুয়ারি পাক পুলিশের গুলিতে শহীদ হন গণঅভ্যুত্থানের নায়ক শহীদ আমানুল্লাহ আসাদুজ্জামান (শহীদ আসাদ)। আসাদের আত্মদানের পর তার রক্তামাখা শার্ট নিয়ে তাৎক্ষণিক মিছিল বের করে ঢাকা বিশ্ব্যবিদ্যালয়ের ছাত্ররা। শহীদ আসাদের আত্মদানের পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালনের মধ্য দিয়ে ঢাকায় সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ২৪ জানুয়ারি এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের সৃষ্টি হয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় প্রধান অভিযুক্ত বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য রাজবন্দীদের মুক্তি ও পাকিস্তানি সামরিক শাসন উৎখাতের দাবিতে ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সান্ধ্য আইন ভঙ্গ করে সাধারণ জনতা মিছিল বের করে।

এছাড়াও ঊনসত্তরের এদিন ঢাকায় সচিবালয়ের সামনের রাজপথের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র কিশোর মতিউর ও রুস্তমসহ  আরও কয়েকজন শহীদ হন। প্রতিবাদে সংগ্রামী জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনগণ আইয়ুব মোনায়েম চক্রের দালাল, মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িতে এবং তাদের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয়। জনগণ আইয়ুব গেটের নাম পরিবর্তন করে আসাদ গেইট নামকরণ করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এক তাত্পর্যপূর্ণ মাইলফলক। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা, পরবর্তীতে ১১ দফা ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পথ বেয়েই রক্তাক্ত সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি অর্জন করে মহান স্বাধীনতা। ১৯৬৯ এর শেষের দিকে ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির মৃত্যুবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা দেন- আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রদেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’। যা ছিল ‘প্রদেশ’, জনগণের অবিসংবাদিত নেতার কণ্ঠে ‘দেশ’ হিসেবে তা স্বীকৃত হয়ে যায় সে দিনটি থেকে। পরের বছর সত্তরের নির্বাচনে এই বাংলাদেশের জনগণ ৬-দফার প্রশ্নে ম্যান্ডেট প্রদান করে। একাত্তরের মহান মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই ‘দেশ’ পরিণত হয় স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রে। ২৪ জানুয়ারি মহান গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য এভাবেই পূরণ হয়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭