ইনসাইড থট

খালেদার প্রতি কি নিষ্ঠুর শেখ হাসিনা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 13/02/2018


Thumbnail

বেগম জিয়া দণ্ডিত হয়ে কারাগারে আছেন। কারাগারে তাঁর দিন কাটছে কষ্টে। ৭৩ বছর বয়সী দুবারের প্রধানমন্ত্রী নির্জন কারা প্রকোষ্ঠে দিন কাটাচ্ছেন। অনেকেই মনে করছেন, সরকার তার প্রতি ‘নিষ্ঠুর’ আচরণ করছেন। কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে এমনটাও বলছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। দু:স্থ, অসহায়দের প্রতি তাঁর সীমাহীন দয়ামায়া। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি মানবিকতার এক নতুন উচ্চতায় পৌছেছেন। বিশ্বব্যাপী তাঁকে বলা হয় ‘মাদার অব হিউম্যানিটি।’ সেই তিনি কীভাবে বেগম জিয়ার প্রতি এত ‘নিষ্ঠুর’ হলেন?’ অনেকে বলছেন ‘শেখ হাসিনার আচরণের সঙ্গে এই ঘটনা যায় না। পুরনো কারাগারে না রেখে বেগম জিয়াকে তো তার বাড়িতেও আটকে রাখা যেত। কিংবা কোনো বাড়ি ভাড়া করে রাখা যেত।’ এই ভাবনায় যারা আপ্লুত তাদের জন্য প্রথমেই প্রয়াত ড. ওয়াজেদ মিয়ার বই ‘বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে কিছু স্মৃতি’ বইটার দিকে দৃষ্টি ফেরাতে চাই। বইয়ে আমরা পাই, মুক্তিযুদ্ধের পর জাতির পিতার কাছে আসেন তৎকালীন উপ সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। তিনি (জিয়া) জানান যে, খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর বনিবনা হচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু তাঁকে ধমক দেন এবং জিয়াউর রহমানকে স্ব স্ত্রীক বাড়িতে দাওয়াত দেন। জাতির পিতার এ উপলক্ষ্যে তিনটি শাড়ি কেনেন। একটি দেন পুতুলকে (বেগম খালেদা জিয়ার ডাক নাম), অন্য দুটি দেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাকে। বঙ্গবন্ধু বেগম জিয়াকে তাঁর আরেকটি মেয়ে বলে সম্বোধন করেন এবং তাঁদের (জিয়া দম্পতিকে) সুখে শান্তিতে বসবাসের নির্দেশ দেন।’

যাকে জাতির পিতা সন্তান হিসেবে আপ্যায়ন করেছিলেন, জিয়াই ৭৫ এর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী। তিনি ১৫ আগস্টের ক্যু পরিকল্পনার কথা জেনেও খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি বরং তাঁদের কর্মসিদ্ধিতে সহায়তা করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার কিছুদিনের মধ্যেই জিয়াউর রহমান এক সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন। ক্ষমতায় আসেন এরশাদ। অবৈধ, অগণতান্ত্রিক, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। ঘটনার দূর্বিপাকে বেগম জিয়াও বিএপির নেতৃত্ব নেন। এরপর শুরু হয় স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই। দুই নেত্রী এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। শেখ হাসিনা জানতেন বেগম জিয়ার স্বামী তার পিতার খুনি, তারপরও শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের অধিকার আদায়ের স্বার্থে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন দুদফা। এমনকি ৯১ এর ‘সুক্ষ কারচুপির’ নির্বাচনও মেনে নিয়ে শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্রের স্বার্থে বেগম জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন।

কিন্তু ৯১ এ ক্ষমতায় এসেই বেগম জিয়া ৭৫ এর ১৫ আগস্টের খুনিদের রক্ষায় তাঁর স্বামীর পথই অনুসরণ করলেন। আত্মস্বীকৃত খুনিদের কূটনৈতিক চাকরিতে পদোন্নতি দিলেন। কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, যা ৭৫ এর আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করেছিল-তা বাতিল করতে অস্বীকৃতি জানালেন।

৯৬ এ ২১ বছর পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেলো আওয়ামী লীগ। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হলো। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার শুরু হলো। এসময়ই বেগম জিয়া এক বিভৎস কাণ্ড করে বসলেন। ৯৬ এর ১৫ আগস্ট হঠাৎ ঘটা করে তাঁর জন্মদিন উৎসব পালন শুরু করলেন। ১৫ আগস্ট শুধু এক শোকের দিন নয়, জাতীয় কলঙ্কের দিন। বেগম জিয়া ১৯৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখন তিনি ১৫ আগস্ট জন্মদিন করেননি। তাছাড়া তার বিয়ের কাবিন, পাসপোর্ট এমনকি স্কুলের সার্টিফিকেট কোথাও ১৫ আগস্ট জন্ম তারিখ নয়। বেগম জিয়া ওই জন্মদিন করেছিলেন স্রেফ আত্মস্বীকৃত খুনিদের প্রতি একাত্মতায়। তীব্র জনমতের চাপে গত দুই বছর এই বিভৎসতা বন্ধ করেছেন বেগম জিয়া। কিন্তু তাঁর হিংস্র রূপতো জাতি দেখেছে। শেখ হাসিনাও তো একজন রক্ত মাংসের মানুষ। এরকম একজন যে আপনার পিতার মৃত্যুদিবসে কুৎসিত উৎসব করে তাকে আপনি কি চোখে দেখবেন? তার প্রতি আপনার কতটুক সহানুভ‚তি জাগবে?

১৫ আগস্টের পর এলো ২১ আগস্ট। বেগম জিয়া ক্ষমতায়। তার ছেলে তারেক জিয়া ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে শেখ হাসিনাকে হত্যার নীল নকশা প্রণয়ন করল। ২০০৪ এর ২১ আগস্টে বঙ্গবন্ধু অ্যভিন্যুতে কি নারকীয় তান্ডব ঘটানো হয়েছিল, তা নতুন করে না বললেও চলে। শেখ হাসিনা সেদিন বেঁচেছিলেন অলৌকিক ভাবেই। প্রিয় পাঠক, আপনার ঘাতকের প্রতি আপনি কি আচরণ করবেন? তারপরও, শেখ হাসিনার অনেক সহ্য ক্ষমতা। তিনি বিষ হজম করেন, তিনি নীলকন্ঠ। সেজন্যই তো বেগম জিয়া ন্যায় বিচার পেয়েছে। সেজন্যই বিচার দীর্ঘ নয় বছর গড়িয়েছে। হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ঘুরে নিন্ম আদালত রায় দিয়েছে। শেখ হাসিনা যদি প্রতিহিংসা পরায়ন হতেন, তাহলে তো ২০১৪ তেই বেগম জিয়াকে গ্রেপ্তার করতে পারতেন, কিংবা ২০১৫ তে। কিন্তু তিনি তা করেননি। এই রায় দিয়েছে কোর্ট। এটা তাই শেখ হাসিনার নিষ্ঠুরতা নয় প্রতিহিংসাও নয়। এটা হলো বেগম জিয়ার প্রাপ্য প্রায়শ্চিত। তিনি যে সাজানো জন্মদিন করে খুনিদের জন্য উৎসব করেছিলেন, এই কারাভোগ তারই পরিণতি। তিনি যে ২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যার দুরভিসন্ধি করেছিলেন, এ সেই পাপেরই ফল। জিয়া অরফানেজ মামলা তো কেবল উপলক্ষ্য মাত্র। প্রতিহিংসা এবং নিষ্ঠুরতার যে আগুন বেগম জিয়া জ্বালিয়েছিলেন সে আগুনে আজ তিনি দগ্ধ হচ্ছেন।


Read In English: http://bit.ly/2BVkSDX


বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭