ইনসাইড টক

‘বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি হিসেবে ‘বাকশাল’ ঘোষণা করেছিলেন’


প্রকাশ: 25/01/2023


Thumbnail

বঙ্গবন্ধু সারাজীবনই সংসদীয় গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন এবং সংসদীয় গণতন্ত্রের রাজনীতিই তিনি শুধু করেছেন। তাঁর নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, তিনিও সংসদীয় গণতন্ত্রই করার পক্ষে ছিলেন এবং এই রাজনীতিই করেছেন। বঙ্গবন্ধু সরকার যখন প্রতিষ্ঠিত হলো একটি মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এবং স্বাধীনতার স্বাদ যখন বাঙালি পেলো। তখন দেখা গেলো কিছু অতি বামপন্থী বা বামপন্থী বা অতি ডানপন্থী, তারা সন্ত্রাস, নৈরাজ্য- এসব সৃষ্টি করলো, বঙ্গবন্ধুর সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য। তখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জন্ম হলো। তাদের কিছুটা হচ্ছে বিপ্লবের অর্থাৎ রোমান্টিক বিপ্লবের কথা বলে এবং কিছু অতি মৌলবাদীতাও ছিল অনেকের মধ্যে। বঙ্গবন্ধু আসলে সবাইকে মিলে- রাজনীতিবিদ, সকল শ্রেণির মানুষ, জনগন- সবাইকে নিয়ে কাজ করার নেতা ছিলেন। তিনি সবাইকে ভালোবাসতেন। এমনকি তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকেও তিনি শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন, তাদের প্রতি তাঁর মমতা সব সময়ই ছিল।- বলছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জেষ্ঠ্য সচিব এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) বর্তমান চেয়ারপার্সন আবদুস সামাদ ফারুক।  

আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, তখন এই যে একটা স্বাধীন, নবীন রাষ্ট্রের পুনর্গঠন দরকার, উন্নয়ন দরকার, সংস্কার দরকার। সেইজন্য সকল দল,মতের লোকদের নিয়ে একটি প্লাটফর্মে কাজ করার জন্য তিনি (বঙ্গবন্ধু) মূলত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি বা ‘বাকশাল’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন। এটা একটি নতুন ধারনা। 

২৫ জানয়ারি ঐতিহাসিক ‘বাকশাল’ দিবস, ‘বাকশাল’ কেন করা হয়েছিল? ‘বাকশাল’র মূল উদ্দেশ্য কি ছিল? ‘বাকশাল’ আসলে কি? এবং এর বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার- এসব বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক জেষ্ঠ্য সচিব এবং সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) বর্তমান চেয়ারপার্সন আবদুস সামাদ ফারুক এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য সাবেক জেষ্ঠ্য সচিব আবদুস সামাদ ফারুক- এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার- এর নিজস্ব প্রতিবেদক আল মাসুদ নয়ন।

আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, এটার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। বাঙালির ভেতরে সব সময়ই লক্ষ্য করা গেছে, একটা গোষ্ঠী থাকে, যারা সব সময়ই ষড়যন্ত্র, অপপপ্রচার এগুলো চালায় এবং এটা আমরা ঐতিহাসিকভাবেই দেখি। এজন্য তাঁর (বঙ্গবন্ধু) বিরুদ্ধেও অপপ্রচার হয়েছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু তাঁর (বঙ্গবন্ধু) উদ্দেশ্যটা মহৎ ছিল। সবাইকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে একটি রাজনৈতিক সংস্কার করা, সরকার পরিচালনা করা, সেখানে সরকারি কর্মচারীরাও- সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল- সবাইকে নিয়েই একটি জাতীয় ঐকমত গড়ে তোলা। আরেকটা ছিল আমরা লক্ষ্য করি, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অনেক জায়গায়ই কিন্তু একদলীয় সরকার আছে। যেমন রাশিয়া একদলীয় সরকার, চীন একদলীয় সরকার, ভিয়েতনাম একদলীয় সরকার- তারা এক দলেই সরকার পরিচালনা করে। সেখানেও যে উন্নয়ন হচ্ছে না, তা নয়। যথেষ্ঠ উন্নয়ন হচ্ছে, সেখানে সামাজিক উন্নয়নের অগ্রগতিও সাধিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেটা পরীক্ষামূলকভাবে অনেকটা করেছিলেন, তাতে আমাদের দেশের অগ্রগতি সাধিত হবে।  

অনেকেই বলে থাকেন ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য বঙ্গবন্ধু পারিবারিকভাবে তাঁর বিভিন্ন লোকজনদেরকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন- এমন কথা প্রসঙ্গে আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, ক্ষমতা তো উনার হাতেই ছিল, ক্ষমতার কুক্ষিগত কি করবে? পরবর্তী ইলেকশন বা ৭৩ এর নির্বাচন বা এর পরেও যদি নির্বাচন হতো, নির্বাচনে তিনিই (বঙ্গবন্ধু) বিজয়ী হতেন। আর ওখানে যে প্লাটফর্ম ছিল, সকল দলকে এক জায়গায় নিয়ে আসলে ক্ষমতা কিভাবে একজনের হাতে থাকে? ক্ষমতা তো সেক্ষেত্রে বিকেন্দ্রীকরণ হয়ে যায়। যেকোনো পার্টির প্লাটফর্ম থাকে, সেখানে তো একজনের সিদ্ধান্তে হবে না। পার্টিতে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকে।

বাকশাল ব্যবস্থা প্রবর্তণের জন্য জাতীয় সংসদে সংবিধানের যে চতুর্থ সংশোধনী আনা হয়েছিল, সেখানে ২৯৪ ভোটে পাশ হয় সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী, কয়েকজন ছাড়া আর কেউ সেখানে বিরোধীতা করেনি। কিন্তু পরে কেন অনেকে বিরোধীতা শুরু করলেন?- এমন প্রশ্নের উত্তরে আবদুস সামাদ ফারুক বলেন, মুক্তিযুদ্ধেও কিছু দল-মত তারা বিপক্ষে ছিল। আবার কেউ কেউ আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, কিন্তু সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও তাজ উদ্দিনের সরকার যেভাবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিল, সেই সরকারে সাথে না করে, তারা অন্যভাবে কাজ করেছে। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলেছে, মিথ্যা অপপ্রচার করেছে। এগুলো আসলে হচ্ছে অপপ্রচার। মানে নিজেরা নেতৃত্বে না আসার ব্যর্থতাকে মেনে নিতে না পেরে, একটি সফল নেতৃত্বকে ভুলুণ্ঠিত করা বা একে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। তারা যেহেতু নেতৃত্বে আসতে পারেনি, যুদ্ধ বা স্বাধীনতা আনতে পারেনি, তাই তারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এটার বিরোধীতা করেছে। এই প্রেক্ষিতেই তারা অপপ্রচার চালিয়েছে।

বাকশাল আসলে কি ছিল? মূলত কি করতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু?- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটি ছিল একটি সকল মত, সকল পথের মানুষকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসা, এটি একটি রাজনৈতিক সংস্কার, শাসনতান্ত্রিক সংস্কার এবং মূল কথা হচ্ছে, মানুষের অধিকার-উন্নয়ন এবং মানুষের শান্তি-সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করা। এই যে হানাহানি-নৈরাজ্য, আগুন দেওয়া পাটগুদামে- এগুলোকে বন্ধ করে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনা। এর মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লবের ঘোষনা দিয়েছিলেন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা, মানুষের উন্নয়নটা শান্তি-সমৃদ্ধিতে আনয়ন করা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭