ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি দিশেহারা হয়ে উপর্যোপরি সভা-সমাবেশ ঘোষণা করছে


প্রকাশ: 26/01/2023


Thumbnail

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারসহ দশ দফা দাবি আদায়ে আগামী সপ্তাহে রাজধানীর চার স্থানে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি। এমনটাই ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। এই সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমান, সদস্য সচিব আমিনুল হক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুসহ উপস্থিত ছিলেন অনেকেই। এর আগে গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারি) 'গণতন্ত্র হত্যা দিবস' গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে একটি সমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি। এদিনও ১০ দফা দাবিতে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ করবে বলে ঘোষণা দেয় দলটি। 

বিএনপির একের পর এমন উপর্যোপরি আন্দোলন এবং সমাবেশের ঘোষণাকে অহেতুক বলে মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, বিএনপি দিশেহারা হয়ে এমন একর পর এক উপর্যোপরি সভা-সমাবেশের ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে বিএনপি জানান দিতে চায়, তার রাজপথের আন্দোলনে সোচ্চার রয়েছে। কিন্তু এসব আন্দোলনের ঘোষণা সরকার বা জনগন কেউই আর তেমনভাবে আমলে নিচ্ছে না। কেননা বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের যে ১০ দফার এসব সমাবেশের ঘোষণা দিচ্ছে, এ সম্পর্কে সাধালন মানুষ অবগত নয়। ফলে জনসম্পৃক্ততা থেকে পিছিয়ে পড়েছে বিএনপি।    

জানা গেছে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সোমবার (৩০ জানুয়ারি) যাত্রাবাড়ী থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত পদযাত্রা এবং বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা। এই কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। অন্যদিকে, শনিবার (২৮ জানুয়ারি) শাহজাদপুর থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত পদযাত্রা এবং মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) গাবতলী থেকে ১০নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা। এই কর্মসূচি পালন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনে ‘পদযাত্রা’ একটি নতুন শব্দ। এই কর্মসূচিটি বিএনপির আন্দোলনে আপাতদৃষ্টিতে একটি ভিন্ন ধারা মনে করা হলেও বস্তুত এই একই ধারায় চলবে। সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং বক্তব্য এসবই মূল বিষয়বস্তু। এই কর্মসূচি বিএনপির আন্দোলনে কোনো ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে হচ্ছে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এসব আন্দোলন জনগনকে সম্পৃক্ত করতে পারবে না বা জনগন স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যোগ দিবে না। এখন সভা-সমাবেশে লোক আনতে হলে মাথা প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা গুনতে হয়। সাধারণ মানুষের মূল লক্ষ্য হচ্ছে প্রতিদিনই আয় করতে হবে, পরিবার পরিজন নিয়ে একটু ভালো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হবে। বিএনপির আন্দোলনে গিয়ে দিনটাই মাটি করতে চাইবে না কোনো সাধারণ মানুষ। শুধুমাত্র বিএনপির পদ-পজিশনের আশায় যারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত রয়েছে, তারাই বিএনপির এমন আন্দোলনে অংশ নিবে। কিন্তু,পদ-পজিশনের লোভে যারা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন, তাদের অনেক কর্মীই জেলে রয়েছেন, অথবা মামলা-জামিন এসব বিষয় নিয়ে আদালাতে আদালতে দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। ফলে এসব কর্মীরাও বিএনপির আন্দোলন সমাবেশে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

গতকাল বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থান দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল লাল কার্ড দেখাতে গিয়ে শূন্য হাতে ফিরলেন। সরকার পতন, ৫৪ দল, ১০ দফা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার সবই ভুয়া। বিএনপির হাঁকডাক, লোটাকম্বল, মশার কয়েল, সাতদিন আগ থেকে সমাবেশের প্রস্তুতি সবই ব্যর্থ। বিএনপি সোহরাওয়ার্দীতে আন্দোলন না করে গরুর হাটে আন্দোলন করেছে। বিএনপির আন্দোলন জোয়ার থেকে ভাটার দিকে যাচ্ছে। ভুয়া জোটের মাধ্যমে গঠন করা বিএনপি ভুয়া, তাদের জনগণ বিশ্বাস করে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সত্যতা  রয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, গত ১৪ বছর ধরেই বিএনপির এমন হাঁকডাক জনগন প্রত্যক্ষ করছে। ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে বাংলাদেশের প্রশাসন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কথায় পরিচাীরত হবে বলেও বক্তব্য রেখেছিলেন এক বিএনপি নেতা। বস্তুত কি দেখা গেছে? এসব কারণেই বিএনপি জনগনের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে। ফরে বিএনপির এসব আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে বিএনপি। এখন শুধুই অপেক্ষার পালা, বিএনপি এমন অবস্থা থেকে ফিরে আসতে পারবে কি না?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭