ইনসাইড আর্টিকেল

কম্পিউটার-ফটোকপির দোকানে দালালদের আখড়া


প্রকাশ: 28/01/2023


Thumbnail

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সামনের ওয়াল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে মার্কেট। পৌর এলাকার রাজারামপুরে মহাসড়কের পাশে সারিবদ্ধ সাইনবোর্ড দেখে বাইরে থেকে মনে হবে কম্পিউটার-ফটোকপির দোকান। এসব দোকানে কম্পিউটার-ফটোকপির পাশাপাশি ভেতরে প্রকাশ্যে চলছে পাসপোর্ট দালালদের কারবার। ভুয়া সিল ব্যবহার করে তৈরি হচ্ছে যাবতীয় নকল কাগজপত্র। হাত বাড়ালেই মিলছে সব। পাসপোর্ট অফিসের সামনে এসব দোকান ঘর ঘিরেই তৎপর পাসপোর্ট দালাল চক্রের সদস্যরা।

সরজমিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসে ঘুরে বিভিন্ন সেবাগ্রহিতার সঙ্গে কথা বলে এমন সব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চাঁপাইনবাগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের সামনে গড়ে ওঠা মার্কেটেই পাসপোর্ট দালালদের আনাগোনা। দোকানের সামনে ফেস্টুনে লেখা- নতুন পাসপোর্ট প্রসেসিং ও নবায়নের কাজ করা হয়। এ পাসপোর্ট অফিসে ঢুকতে ডান পাশেও গড়ে উঠেছে মার্কেট। সেখানেও  লেখা- এখানে ব্যাংক ড্রাফট ও পাসপোর্টের ফরম পূরণ করা হয়। পাসপোর্ট অফিসের সমানের মার্কেটে ছয়টি এবং ডান পাশের মার্কেটে দুই দোকানে পাসপোর্ট দালালির কারবার চলে। সারাক্ষণ এখানে দালালদের প্রকাশ্য হাঁকডাক। বেশিরভাগ পাসপোর্ট প্রত্যাশী ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ করতে গিয়ে দালালের ফাঁদে পড়ছেন। ফরম পূরণ শেষ হলেই দ্রæততম সময়ে পাসপোর্ট করার অফার দেয় দালালরা। পাসপোর্ট সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজের জন্য টাকার অংক ভিন্ন। যেমন- সিরিয়াল ছাড়া আবেদন জমা করতে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা, পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া পাসপোর্ট পেতে ২ হাজার, নামের বানান এবং জন্ম তারিখ সংশোধনে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে।

সূত্র বলছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসকেন্দ্রিক দালালদের নিয়ন্ত্রণ করেন পাসপোর্ট অফিসের অফিস সহকারী মো. নাজমুল ইসলাম। কয়েকদিন থেকে এ পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক নেই। এ সুযোগে নাজমুলই সব নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা গেছে। পাসপোর্টের আবেদনপত্রের জন্ম সনদ, বয়স বিভ্রান্তি, সত্যায়নে ভুল নির্ণয়ের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে দালালচক্রের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। অফিসটিতে নিয়োজিত আনসার সদস্যরা পাসপোর্টকারী সহযোগিদের ভেতরে ঢুকতে না দিলেও অনায়াসে যাতায়াত করছে দালালরা।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে তৈরি হয় পাসপোর্ট। বাইরে থেকে দালালরা নিয়ন্ত্রণ করে পাসপোর্ট অফিস। দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করতে গেলেই পড়তে হয় হয়রানিতে। পাসপোর্ট অফিসের আশেপাশের দালাল চক্রের হাতে জিম্মি পুরো পাসপোর্ট অফিস।

সেবাগ্রহীতারা জানান, আবেদনপত্রের সাথে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সরকার নির্ধারিত ফি (ব্যাংক চালান) জমা দিয়ে চালানপত্র দেওয়ার পরও অফিসের কর্মকর্তারা নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত ও তা সংশোধন করে অন্যদিন জমা দেয়ার কথা বলেন। তবে ঘুষ দিলেই রিসিভ করা হয় আবেদন ফরম।

তারা বলেছেন, দালাল ছাড়া যদি আবেদনটি জমা হয়েই যায়, তবুও নিষ্কৃতি নেই। অফিসের ভেতরে সার্ভার নষ্ট, অফিসার আসেননি, ছবিতে সমস্যা, জন্ম তারিখ ভুল এমন হাজারও সমস্যা তুলে মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় পাসপোর্ট ডেলিভারি। তবে টাকা দিলেই দ্রুত মেলে পাসপোর্ট।

পাসপোর্ট অফিসে গিয়েও হারুন রশিদ ও রবিউল ইসলাম তাদের পাসপোর্ট জমা দিতে পারেননি। হতাশ হয়ে তারা বাড়ি ফিরে গেছেন। পাসপোর্ট অফিসে এবং চলে যাওয়ার পর তাদের সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেদকের। হারুন রশিদ বলেন, আমি গ্রাম থেকে এসে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও আমার আবেদন ফরম জমা নেয়নি। আমার বিয়ের কাবিননামা কাগজ নিয়ে পরের দিন আসতে বলেছেন। আগামিকাল আবার যাবো জানি না আবার কি ভুল ধরে।

রবিউল ইসলাম বলেন, আমার ভোটার আইডি কার্ড হয়নি। জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট আবেদন ফরম জমা দিতে গিয়েছিলাম। তাদের কথা মতো পাসপোর্ট অফিসের বাইরের কম্পিউটার দোকান থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদের সার্চ কপিও দিয়েছি। তারপরও বাবার ভোটার আইডি কার্ডের মূল কপি লাগবে বলে আবেদন ফরম ফেরত দিয়েছেন। আবার কাল যাবো দেখি কি হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বে থাকা অফিস সহকারী নাজমুল ইসলাম বলেন, এই পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহবুবুর রহমানের বদলি হয়েছে। গত রোববার তিনি ঢাকা চলে গেছেন। এখানে নতুন অফিসার আসবেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করি। দালালদের কোন প্রশ্রয় নেই। তবে অভিযোগকারীদের অফিসে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭