ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া কি সত্যিই মুচলেকা দিয়েছেন


প্রকাশ: 28/01/2023


Thumbnail

বেগম জিয়ার রাজনীতি, রাজনীতির ভবিষ্যত এবং কারা জীবন নিয়ে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে। এ বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে সম্প্রতি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের এই হেভিওয়েট নেতা দাবি করেছেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না- এই মর্মে মুচলেকা দিয়ে জেল থেকে বাসায় অবস্থান করার সুযোগ পেয়েছেন। 

তিনি জানান, ২০২০ সালে বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার এবং তার বোন গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সাক্ষাতের সময় তারা এই মর্মে মুচলেকা দেন যে, বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে না। তার এই মুচলেকার প্রেক্ষিতেই এখন তিনি ফিরোজায় বসবাস করতে পারছেন বলেই শেখ সেলিম দাবি করেন। যদিও শেখ সেলিমের এ বক্তব্যের পরপরই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ধরনের মুচলেকার কথা অস্বীকার করেছেন। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমাণ ছাড়া কোন কথা বলবেন এটা বিশ্বাস করা যায় না। এরকম প্রেক্ষিতে আসলে ঘটনা কি হয়েছে, সেটি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম প্রশ্ন এবং চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিএনপির মধ্যে মুচলেকা দেওয়ার প্রবণতা অনেক পুরনো।

২০০৭ সালে তারেক জিয়া গ্রেফতার হয়েছিলেন। সেনা হেফাজতে থাকা অবস্থায় তিনি অনেক তথ্যই দিয়েছিলেন। এরপর বেগম খালেদা জিয়ার অনুরোধে তাকে জামিন দেয়া হয় এবং বিদেশে পাঠানো হয়। সেই সময় তারেক জিয়া আর জীবনে রাজনীতি করবেন না মর্মে মুচলেকা দিয়েছিলেন। সেই মুচলেকার কাগজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। যদিও পরবর্তীতে তারেক জিয়া ঘোষণা করেছিলেন যে, তাকে দিয়ে জোর করে মুচলেকা নেওয়া হয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে অবশ্য এখন পর্যন্ত কোনো মুচলেকার কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। বেগম খালেদা জিয়াকে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের বিশেষ ক্ষমতা বলে জামিন দেওয়া হয়। 

প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাহী আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে তার বাসায় থাকতে অনুমতি দেন। এক্ষেত্রে দুটি শর্ত প্রযোজ্য ছিল। প্রথম শর্ত ছিল যে, তিনি বাসায় থেকে চিকিৎসা করবেন এবং দ্বিতীয় শর্ত ছিল বিদেশে যেতে পারবেন না। আর এই শর্তে তিনি এখন পর্যন্ত জামিনে রয়েছেন। তবে বেগম খালেদা জিয়ার দুই বছরের বেশি সময় ধরে জামিনে থাকাকালীন অবস্থায় কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি। শুধু ঈদ, পালা পাবর্ণে তিনি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। 

বেগম খালেদা জিয়া যেহেতু একজন দন্ডিত ব্যক্তি, কাজেই তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। তবে কেউ কেউ বলছেন, তিনি যদি স্বাভাবিক জামিনে থাকতেন অর্থাৎ আদালত যদি তাকে জামিন দিতো তাহলে তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারতেন। যেহেতু তিনি নির্বাহী আদেশে জামিনে আছে সেজন্য সরকারের শর্ত অনুযায়ী তাকে চলতে হচ্ছে। এখন এই শর্তের মধ্যে রাজনীতি করা না করার বিষয় আছে কিনা এ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জানা গেছে। একটি সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে যে, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শামীম ইস্কান্দার, তার বোন এবংশামীম ইস্কান্দারের স্ত্রী গণভবনে যান এবং সেখানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক ঘণ্টার বেশি সময় কথা বলেন এবং সেই সময় শামীম ইস্কান্দার স্বপ্রণোদিত হয়েই বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলে তিনি কোন রাজনৈতিক কাণ্ডে জড়িত থাকবেন না এবং এটি তিনি দায়িত্ব নিয়ে বলছেন। এই বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী নমনীয় হন এবং তার জামিনের ব্যবস্থা করেন। যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো লিখিত মুচলেকা বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছেন এমন কোন কথা নেই। 

শুধু তাই নয়, গত বছর যখন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন সেসময় শামীম ইস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেখা করেছিলেন এবং সেখানেও তিনি বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, প্রয়োজনে তিনি বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করবেন- এরকম মুচলেকা দেয়ার কথাও বলেছিলেন। কাজেই বেগম খালেদা জিয়া এখন যে নীরবতা পালন করছেন তার পিছনে রয়েছে এই অঙ্গীকারনামা। তবে সেই অঙ্গীকারনামা মৌখিক ও লিখিত সে সম্পর্কে এখনও রহস্য রয়েই গেছে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭