ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির জোটে নির্বাচনী আমেজ


প্রকাশ: 28/01/2023


Thumbnail

বিএনপি ৫৪টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে জোট বেধেছে। এই দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন করছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় না করা পর্যন্ত এই যুগপৎ আন্দোলন চলবে। বিএনপির পক্ষ থেকে এই জোট গুলোকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে তারা জোটগতভাবে নির্বাচন করবেন এবং জাতীয় সরকার গঠন করবেন। এই জাতীয় সরকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র মেরামত কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু ৫৪টি দলের অন্তত ২৬ টি দলের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এমনকি বিএনপির ৫৪ জোটে যে সমস্ত দলগুলো আলোচিত এবং যাদের বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে প্রভাব রয়েছে তারা এখন নির্বাচনমুখী হচ্ছেন এবং এলাকায় জনসংযোগ করছেন। 

৫৪ টি দলের মধ্যে অন্যতম গণতন্ত্র মঞ্চ। এই গণতন্ত্র মঞ্চে গণ অধিকার পরিষদ, যেটি ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর এর নেতৃত্বে পরিচালিত তারা ইতিমধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী দেয়ার ক্ষেত্রে তারা প্রাথমিক কথাবার্তা বলছে এবং এই দলের পক্ষ থেকে একজন নেতা জানিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করছেন এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা তাদের রয়েছে। তবে ৩০০ আসনে নয়। নুরের নেতৃত্বাধীন গণ অধিকার পরিষদ অন্তত ৫০টি আসনে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছেন।

এই জোটের অন্যতম আরেকটি দল এলডিপি। তারাও তাদের নেতা কর্নেল অলি আহমেদ চট্টগ্রামে জনসংযোগ বাড়িয়েছেন এবং আগামী নির্বাচনে তিনি এবং তার স্ত্রী চট্টগ্রাম থেকে অংশগ্রহণ করবেন এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জোটের অন্যতম শরিক জেএসডির আ স ম আব্দুর রব নোয়াখালীতে জনসংযোগ আগের চেয়ে বাড়িয়েছেন এবং সেখানে তার কর্মীরা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। এছাড়াও এই জোটের আরও অন্তত দুই ডজন নেতাকে চিহ্নিত করা গেছে, যারা এখন নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছেন এবং আগামী নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির করছেন।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, জোটের মধ্যে এই নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টির পিছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাব রয়েছে। বিএনপির এই ৫৪টি দলের মধ্যে অনেকগুলো দলই আগামী নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে রেখে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, শুধু ৫৪ দল নয়, বিএনপিও আসলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। তবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে নাকি বিএনপি থেকে দলছুট একটি অংশ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এটি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বিএনপির শরিকদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছে যে, স্বল্পতম সময়ের মধ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায় করা সম্ভব নয়। আর এই কারণেই আগামী নির্বাচনে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করাই যৌক্তিক। যাতে সরকারকে চাপে ফেলা যায়।

বিএনপির মধ্যে একটি বড় অংশই এখন মনে করছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করে নির্বাচন বর্জন হবে আরেকটি হঠকারিতা। কারণ সরকার নির্বাচন শেষ পর্যন্ত করবেই এবং নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক এবং প্রতিযোগিতামূলক হয় সে ব্যবস্থাও সরকার করছে। বিভিন্ন ব্যক্তিকে নির্বাচনী টোপ দিয়ে নির্বাচনের মাঠে ইতিমধ্যেই নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির পক্ষে নির্বাচন প্রতিরোধ করা সাংগঠনিকভাবে সম্ভব হবে না। তাই বিএনপি যদি এই আন্দোলনের ধারায় আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সেটিই বিএনপির জন্য ইতিবাচক হবে। এর ফলে বিএনপি যদি ৬০, ৭০, ৮০ আসন পায় তাহলে একটু শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং সেখান থেকে সরকার পতনের দ্বিতীয় দফা আন্দোলন শুরু করতে পারবে। তবে বিএনপি নেতাদের একটি বড় অংশই মনে করেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় সেটি হবে আত্মঘাতী এবং দলের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। তবে বিএনপি জোটের অধিকাংশ দল যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপির জন্য কি অপেক্ষা করছে সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭