ইনসাইড আর্টিকেল

গড়তে হবে মেয়েশিশু সংবেদনশীল সমাজ


প্রকাশ: 29/01/2023


Thumbnail

প্রতিদিনই মেয়ে শিশুর প্রতি নির্যাতনের ধরণ পাল্টাচ্ছে। এখন যে সকল মেয়ে শিশুরা সহিংসতার স্বীকার হচ্ছে, হয় তাদের বাবা প্রবাসী, না হয় বাবার সঙ্গে বিরোধে মেয়েকে হয়রানি। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে স্কুল কিংবা কলেজের নিরাপত্তা প্রহরীর অল্লীল কথা-বার্তার স্বীকার হচ্ছে। বাদ পরছে না শিক্ষকের যৌন হয়রানির হাত থেকে। আর ভার্চুয়াল জগতে হয়রানির অন্ত নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাক করা, পাসওয়ার্ড চুরি করে অ্যাকাউন্টের দখল নেওয়া (আইডি হ্যাক)। পূর্বপরিচয় বা সম্পর্কের জের ধরে বা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত ছবি, ভিডিও বা তথ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোনো সুবিধা আদায় বা টাকা দাবি করা। অল্লীল শব্দ, লেখা, ছবি বা ভিডিও পাঠিয়ে হয়রানি। 

ফলে নারী শিশুরা সর্বত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ভাবতেও অবাক লাগে বাড়ির সদস্য বা আত্মীয় অথবা প্রতিবেশীর দ্বারা মেয়ে শিশুরা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তাদের সাথে শারীরিক বিষয়ে কথা বলা, অশ্লীল ছবি দেখানো কিংবা তাদের শরীরে অথবা আপত্তিকর জায়গায় স্পর্শ করে তাদের মানসিক জগতটাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ইদানীং একটা বিষয় ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। ১০ থেকে ১২ বছরের কিশোরীরা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে যাচ্ছে। ফলে বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পারায় কিশোরীদের মৃত্যুও হচ্ছে। এছাড়াও অবহেলার কারণে নারী শিশুর বেঁড়ে উঠার পর বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকে। তাদের মানসিক ভাবনা ও আচার-আচরণগুলো বাবা-মায়ের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। ফলে কারো সাথে কথা বলা বা বন্ধুত্ব তৈরি করা কোনভাবেই সেই শিশুটির পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। বড় হয়েও শিশুদের মতো আচরণ করতে থাকে। পরিবার ও সমাজের অজান্তে তারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়েই যাচ্ছে। আর এই অবলা নারী শিশুদের শিকার করে এক শ্রেণীর পৈশাচিক শ্রেণীর নর মানুষ সমাজটাকে কলুষিত করে যাচ্ছে। আর যাই হোক না কেন, তাদের লক্ষ্যবস্তু নারী শিশু। দিনের পর দিন সমাজটাকে নারীর বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে তারা। 

এই ধরনের বর্বরোচিত কর্মকা-গুলো বন্ধ করতে হবে মূল থেকে। দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি কার্যকর করতে হবে। দরকার হলে এই বর্বরগুলোকে বর্বর মূলক শাস্তি দিতে হবে। শিশু ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতন বন্ধে অভিভাবক, পরিবার, সমাজ সবাইকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতার পাশাপাশি পরিবারে সুশিক্ষা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ গড়ে তোলা জরুরি। সর্বোপরি নারী সত্তাকে স্বীকৃতি দিয়ে সব ক্ষেত্রে তাদের মতামতের বিবেচনা করতে হবে। শিশুদের যথাযথ অধিকার, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। এ লক্ষ্যে শিশুদের জীবনের মান উন্নয়ন, নারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বেশী-বেশী করে বাস্তবায়ন করা দরকার। সরকার জাতীয় শিশু নীতি ও নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করেছে। গৃহীত এসব পদক্ষেপের ফলে বাল্যবিবাহ, নির্যাতন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেলেও এখনো প্রত্যাশিত হারে কমেনি। তাই নিশ্চিত করতে হবে নিরাপদ ও সুষ্ঠু পরিবেশ, মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা এবং নির্যাতন ও নিপীড়ন মুক্ত সমাজব্যবস্থা। সেই সঙ্গে শিশুর প্রতি আপনজনসহ সবাইকে মানবিক আচরণ করতে হবে পাশাপাশি শিশুর নৈতিকতা ও মূল্যবোধের চর্চায় বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। ঘরে-বাইরে সব জায়গায় নারী শিশুরা নিরাপদ থাকুক। সব স্তরে একটি কার্যকর শিশু সু-রক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে মা-বাবা, শিক্ষক, স্বাস্থ্যকর্মী, সমাজকর্মী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবাইকে নিজ-নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা পালন করতে হবে। নারী শিশু সংবেদনশীল সমাজ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সবার। শিশুদের অধস্তন করে দেখার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা জরুরি। শিশুদের সম্মান করার বিষয়টি বড়দের শেখা উচিত ॥



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭