কালার ইনসাইড

বর্তমান শিল্পী সমিতির করুণ অবস্থা নিয়ে যা বললেন বাপ্পারাজ


প্রকাশ: 29/01/2023


Thumbnail

শাহরুখ অভিনীত বলিউডের আলোচিত-সমালোচিত ‘পাঠান’ সিনেমা মুক্তির ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। দেশীয় হলগুলোতে সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মুক্তি দিতে চেয়েছিল ‘অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে এই বিষয়ে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে। খবরটি প্রকাশ্যে আসতেই শোবিজ তারকাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সম্প্রতি ছবিটি মুক্তির বিষয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে তথ্য মন্ত্রণালয়ে। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি যে, বাংলাদেশে আদৌ ‘পাঠান’ মুক্তি দেওয়া হবে কি না।

এ প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়িকা নিপুণ বলেন, বাংলাদেশে বলিউডের ছবি 'পাঠান' আসুক। তবে, যারা ছবিটি আনবেন তাদের লাভের ১০ শতাংশ শিল্পী সমিতির ফান্ডে দিতে হবে। আর এই অর্থ শিল্পীদের স্বার্থে তাদের প্রয়োজনে ব্যয় করা হবে।

হিন্দি ছবি আমদানি করে ১০ পারসেন্ট নিয়ে শিল্পী সমিতি কী করবে? তাদের এতোই করুন অবস্থা যে হিন্দি সিনেমার লাভ নিয়ে চলতে হবে? সম্প্রতি হিন্দি সিনেমার আমদানি বিষয়ে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির দাবি প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেছেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা ও পরিচালক বাপ্পারাজ।

তিনি বলছেন, হিন্দি ছবি আমদানি করলে চলচ্চিত্রের নেতা, নেত্রীরা লাভবান হবে, তাছাড়া তো আর কাউকে লাভবান হওয়া দেখছি না।

ভারতে বাংলাদেশের সিনেমা যাচ্ছে না কেন? এমন প্রশ্ন রেখে বাপ্পারাজ বলেন, আমরা ছোট ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করি। আমাদের একটা ছোট ইন্ডাস্ট্রি, আমাদের ওভারসিজ মার্কেট নেই। ভারতের তো ১০০ ওভারসিজ মার্কেট রয়েছে, তারপরেও তারা বাংলাদেশে সিনেমা চালাতে চাচ্ছে। ঠিক আছে চালাক। কিন্তু আমাদের সিনেমা ওদের দেশে চালানোর সুযোগ দিক, ওরা কেন আমাদের সিনেমাকে আটকাচ্ছে?

সাফটা চুক্তির বিনিময়ে যে সকল সিনেমা এবং যে পদ্ধতি ভারতে বাংলাদেশের সিনেমা চালানো হয় তা মোটেও পছন্দ নয়  জজ ব্যারিস্টার খ্যাত এই অভিনেতার। তিনি বলেন,বারবার সাফটা চুক্তির কথা বলা হচ্ছে, সাফটা চুক্তি দিয়ে একটা বিগ বাজেটের সিনেমা নিয়ে আসলেন, কিন্তু শর্ত অনুযায়ী আমাদের একটা পুরানো আমলের কোনোরকম একটা সিনেমা নিয়ে গ্রামের হল যেখানে কেউ সেখানে চালিয়ে দিয়ে যদি বলে হ্যাঁ সাফটা চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের সিনেমা চালালাম, তাহলে তো হলো না। সাফটা চুক্তির আওতায় আমাদের ভালো ভালো সিনেমা, হাওয়া, পরাণ ভারতের ভালো ভালো মাল্টিপ্লেক্সে দেন, তাহলে বুঝবো চুক্তি ঠিক আছে।

হিন্দি সিনেমা আমদানি যারা করতে চান, তাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে বাপ্পারাজ বলেন, ‘আমাদের দেশে এক শ্রেণীর আতেল আছে,বোদ্ধা আছে। তারা বলছে হিন্দি সিনেমা আসুক, তারা এটা বলছে না কেন ওখানেও বাংলা সিনেমা চলুক? তারা কেন প্রোটেক্ট করে রাখছে বাংলা সিনেমা বাংলাদেশি টেলিভিশন চ্যানেল? তারা তো নিজেদের সিনেমার ব্যবসা করছে- আবার তাদের আলাদা আলাদা ইন্ডাস্ট্রিও আছে। সেখানেও তাদের সিনেমা চলছে। আমাদের তো কোনো ওভারসিজ মার্কেট নেই, এমনকী চট্টগ্রাম বরিশালেও ইন্ডাস্ট্রি নেই। আমাদের সিনেমা তাহলে চলবে কোথায়?’

শিল্পী সমিতির ১০ পারসেন্ট মুনাফা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে বাপ্পারাজ বলেন,  তারা কেন ১০ পার্সেন্ট চায়? এই টাকা তারা কোথায় খরচ করবে? সেটা তো স্পষ্ট করে বলেনি। এই কমিশন চাওয়াটা শিল্পী সমিতির করুন অবস্থাকেই বোঝায়।  হিন্দি ছবি আমদানি করলে আসলে দেশের ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হবে না, লাভবান এইসব চলচ্চিত্রের নেতা-নেত্রীরা।

কলকাতার শিল্পীরাও হিন্দি ছবি চালাতে চায় না, এমন উদাহরণ টেনে এই অভিনেতা বলেন,  আমরা হিন্দি সিনেমা আমদানির যেন উঠেপড়ে লেগেছি, অথচ আপনি কলকাতার ইন্ডাস্ট্রির শিল্পীদের দেখেন তারা কিন্তু মুম্বাইয়ের সিনেমাই পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা চালাতে দিতে চায় না। তারা তাদের ভাষার সিনেমার জন্য নিবেদিতপ্রাণ।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে কলকাতার জনপ্রিয় অভিনেতা কৌশিক গাঙ্গুলিও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি সিনেমা চালানোর বিপক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভারতের দক্ষিণে হিন্দি সিনেমা ঢুকতেই দেবে না, তারা হিন্দি বলতে কিছু বোঝেই না। মহারাষ্ট্র পারবে মারাঠি সিনেমাকে নামিয়ে দিয়ে হিন্দি সিনেমা চালাতে? পশ্চিমবঙ্গের সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা চালানো চালানোকে রীতিমতো অবমাননা হিসেবে অভিহিত করেছেন এই অভিনেতা।

কৌশিক গাঙ্গুলি আরো বলেন, পশ্চিমবঙ্গের অ্যাম্বাসেডর শাহরুখ খান। তার সঙ্গে আমার যদি যোগাযোগ থাকতো তাহলে আমি বলতাম তোমার এই রাজ্যের ভাষার ছবিকে বাঁচাতে তুমি তোমার অঞ্চলে ফিফটি পারসেন্ট ছেড়ে দাও।

বাপ্পারজ কৌশিক গাঙ্গুলি ও প্রসেনজিতের বক্তব্যের সঙ্গে সমর্থন জানিয়ে বলেন, তারা তাদের ভাষার জন্য কতটা নিবেদিতপ্রাণ অথচ আমরা হিন্দি সিনেমা আনতে চাচ্ছি, কিন্তু আমাদের সিনেমা সেখানে যাবে কি না সেটা বলছি না।

হিন্দি সিনেমা আমদানির বিপক্ষে বাপ্পারাজ। তাহলে সিনেমা হল বাঁচানোর বিষয়ে পরিত্রাণ কী? দেশে নির্মিত সিনেমা দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করান্মো সম্ভব বলে মনে করেন অভিনেতা। বাপ্পারাজ বলেন, এক সময় কলকাতার চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি বসে গিয়েছিল, একেবারে ধ্বংস্তুপে পরিণত্ হয়েছিল। তারা কিন্তু হিন্দি সিনেমাদিয়ে হল দাঁড়া করায়নি। তারা নিজেরা নতুনভাবে সিনেমা বানানো শুরু করে বাংলাদেশে সে সময় চলচ্চিত্রের রমরমা অবস্থা, বাংলাদেশের হিট সিনেমার কপিরাইট নিয়ে সেটাকে রিমেক করে বানিয়েছে। এক সময় তারা সফল হয়েছে। এখন কলকাতার ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়িয়ে গেছে। আমরাও সেভাবে দাঁড়াবো।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭