ইনসাইড বাংলাদেশ

রাষ্ট্রপতি হতে হলে কি কি যোগ্যতা লাগে?


প্রকাশ: 29/01/2023


Thumbnail

দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি। গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। কে হচ্ছেন এবারের রাষ্ট্রপতি? -এ নিয়েও যেমন চলছে আলোচনা, তেমনই এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে একজন প্রার্থীর কি কি যোগ্যতা থাকতে হয়, তা-ও জানার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন অনেকে। কেননা এবারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে অনেকের নাম আলোচনায় আসলেও তাদের রাষ্ট্রপতি হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে কি না- তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।  

জানা গেছে, এবারের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগ্রহী প্রার্থীরা আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে। নির্বাচনী কর্মকর্তার কার্যালয়ে (প্রধান নির্বাচন কমিশনারের অফিসে নির্ধারিত দিনে অফিস চলাকালে) মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, অন্যান্য নির্বাচনের মতো, এই নির্বাচনেও প্রার্থী হতে একটি সুনির্দিষ্ট বিধি-বিধান রয়েছে। প্রার্থী হতে হলে সেসব বিষয়ে যোগ্যতা থাকাটা আবশ্যক। এসব যোগ্যতা না থাকলে অনেকেই প্রার্থী হতে পারবেন না। অথবা কেউ কেউ প্রার্থী হলেও তাদের প্রার্থীতা বা মনোনয়নপত্র বাতিল হতে পারে। তাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও যেসব যোগ্যতা কিংবা নিয়ম-নীতি অনুসরন করতে বলা হয়েছে, সেসব যোগ্যতা এবং নিয়ম-নীতি অনুসরন করেই একজন প্রার্থীকে তার প্রার্থীতা বা মনোয়নপত্র দাখিল করতে হবে। 


সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন মো. আবদুল হামিদ। এর আগে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্রপতি টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হতে পারেননি। দেশের সংবিধান অনুযায়ী, কেউই দুইবারের বেশি রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকতে পারেন না। আগামী ২৩ এপ্রিল শেষ হবে তাঁর মেয়াদ। সংবিধান অনুযায়ী, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হবে। সংবিধানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ অবসানের কারণে এ পদ শূন্য হলে মেয়াদ সমাপ্তির তারিখের আগের ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে শূণ্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন হবে। তারই প্রেক্ষিতে আগামী ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তারিখ ঠিক করা হয়েছে।  

বাংলাদেশের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু থাকায় দেশের সর্বোচ্চ পদে থাকেন রাষ্ট্রপতি। তিনি রাষ্ট্রের অন্যসব ব্যক্তির উর্ধ্বে স্থান পান। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি দেশের আইন, শাষন এবং বিচার বিভাগের আনুষ্ঠানিক প্রধান হন। এছাড়া বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়কও তিনিই। রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার করা যায় না। এছাড়া তাঁর গ্রেপ্তার বা কারাবাসের জন্য কোনো আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা যায় না।

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের আগে রাষ্ট্রপতি শাষিত শাষণ ব্যবস্থা থাকায় প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতেন। তবে বর্তমানে সেই ব্যবস্থা নেই। ২০১১ সালে সংবিধানের ১২তম সংশোধনীর পর বর্তমানে সংসদে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংবিধানের ৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনার রাষ্ট্রপতির যে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে সংসদের কক্ষে। এর আগে নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই এবং প্রার্থীতা প্রত্যাহারের মতো কাজ ব্যবস্থাপনা করে থাকেন।  

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের যোগ্যতা: 
সংসদে জয়ী দলগুলো রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারে। তবে যেহেতু সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং বাংলাদেশে এক দলের সাংসদ হয়ে অন্য দলের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, সেহেতু সাধারণত নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া দলের প্রার্থীই রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হয়ে থাকেন। 

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী কোনো ব্যক্তির রাষ্ট্রপতি হতে হলে তার প্রথম যোগ্যতা হলো, অবশ্যই তাকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হতে হবে বা সংসদ সদস্য হতে হবে। সংসদ সদস্য হতে হলে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স নূন্যতম ২৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হতে হলে বয়স ২৫ বছর হলেই হবে না, বরং তার বয়স ৩৫ বছর পূর্ণ হতে হবে। এছাড়া, মানসিকভাবে সুস্থ হওয়া, দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ার পর- তা থেকে অব্যহতি পাওয়া, বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিক না হওয়া, ফৌজদারি অপরাধে ২ বছরের বেশি মেয়াদে সাজা ভোগ না করা এবং মুক্তি পাওয়ার পর ৫ বছর অতিবাহিত হওয়া ইত্যাদি নানান শর্ত রয়েছে। 

কেউ যদি কখনও অভিসংশনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারিত হন, তাহলেও তিনি দ্বিতীয়বার আর রাষ্ট্রপতি হতে পারবেন না। রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়, তিনি সংসদ সদস্যের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। আর কোনো সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতি হলে দায়িত্বগ্রহণের দিন থেকে তাঁর আসন শূণ্য ঘোষণা করা হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭