ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শাম্মী আক্তার। বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের (বিজেএসসি) ১৫শ পরীক্ষায় সহকারী জজ পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। এবার বিজেএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে মোট ১০৩জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। যার মধ্যে শাম্মীর অবস্থান ৬৩তম। তার সফলতার গল্প শুনাচ্ছেন বাংলা ইনসাইডার’র ইবি প্রতিনিধি মুতাছিম বিল্লাহ রিয়াদ।
শাম্মী আক্তারের জন্মস্থান রাজশাহী জেলার তানোরের গংগারামপুরে। তার বাবার নাম মৃত কোরবান আলী ও মাতার নাম রেনুফা বেগম। ৯ভাই বোনের মধ্যে অষ্টম তিনি। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি আমার তীব্র আগ্রহ ছিল। স্কুল-কলেজ এমনকি ভার্সিটিতে এসেও সবসময়ই ভাল কিছু করার চেষ্টা করতাম। বিচারক হওয়ার স্বপ্ন পূরণে আমি নিয়মিত ৮ থেকে ৯ ঘণ্টা পড়ালেখা করার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেক দিনই পড়তাম। অযথা সময় নষ্ট করার প্রবণতা আমার কমই ছিল।
বাবার ইচ্ছাতেই বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন শাম্মী আক্তার। তিনি জানান, সর্বদাই আমি পরিবারের সমর্থন পেয়েছি, এজন্য বিচারক হওয়ার পেছনে যে বাঁধাগুলো ছিল আমার জন্য সবকিছু সহজ হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর বাবা চাইতেন আমি যেন বিচারক হই। তাই বাবার স্বপ্ন পূরণে আমি বিচারক হওয়ার লক্ষ্য স্থির করি। এটাই আমাকে বিচারক হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। আজ বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি, কিন্তু স্বপ্নদ্রষ্টা বাবা পাশে নেই। এটাই দুঃখজনক, যা আমার জন্য মেনে নেওয়া খুবই কষ্টকর।
প্রথমবার ভাইভাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন শাম্মী আক্তার। তবে বিচারক হওয়ার স্বপ্নে শক্ত মনোবল ধরে রেখেছিলেন তিনি। তিনি বলেন, আমি প্রথমবার পরীক্ষায় ভাইভা পর্যন্ত গিয়েছিলাম। দ্বিতীয়বারে সফলতার দেখা পেয়েছি। যখন প্রথমবার ভাইবা থেকে বাদ পড়ি, তখন একেবারেই ভেঙে পড়েছিলাম। পরবর্তীতে আমার বড় ভাই আমাকে বুঝিয়ে মনোবল শক্ত করেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাকে সাহস দিয়েছেন। বলা চলে তাদের পরামর্শেই আমার মনোবল শক্ত হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি শুকরিয়া জানাই, রবের অপার মহিমার কারণেই আজকে আমার বিচার হওয়ার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। যারা বিভিন্নভাবে আমাকে পরামর্শ দিয়ে পাশে ছিলেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
যেসব শিক্ষার্থী বিচারক হতে ইচ্ছুক তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন শাম্মী আক্তার। তিনি বলেন, যারা বিচারক হওয়ার স্বপ্ন দেখছে তাদের জন্য আমার উপদেশ থাকবে প্রথমেই নিজেকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির রাখতে হবে। প্রত্যেকদিন অন্ততপক্ষে ৭ ঘণ্টা আইন বিষয়ে পড়ালেখা করার চেষ্টা করতে হবে। ব্যর্থতা আসলেও ভেঙে না পড়ে বারবার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
নিজেকে সর্বদা জনমানুষের সেবায় নিয়োজিত রাখতে চান শাম্মী আক্তার। তিনি বলেন, মানুষের প্রতিকার প্রার্থনার শেষ আশ্রয়স্থল হলো বিচার বিভাগ। আমার নিজের অর্জিত আইনের দক্ষতাকে দেশ ও মানুষের সেবায় নিয়োজিত করতে চাই। দেশ ও বিচার বিভাগের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখায় অবদান রাখতে চাই। নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও সুবিচার নিশ্চিতে কাজ করে যেতে চাই।