ইনসাইড পলিটিক্স

পালানোর রাজনীতি কার?


প্রকাশ: 30/01/2023


Thumbnail

রাজশাহীর জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা পালাই না, পালানোর রেকর্ড হলো বিএনপির।’ রোববার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পিছু হটে না। যারা বলে আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খুঁজে পাবে না তাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা পালাই না। আপনাদের নেতারাই পালায়।’

তিনি বলেন, ‘সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে দেশে ফিরতে দিবে না। তখন আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার ওপর মার্ডার মামলা দেয়া হয়েছিল। আমি বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে ফিরে এসেছিলাম। বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। বিএনপির নেতা কে? তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকো দিয়েছিলো, রাজনীতি করবে না, এরপর পালিয়ে গিয়েছিলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগনকে নিয়ে কাজ করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়।’

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপির নেতারা তাদের বক্তব্যে কথায় কথায় বলে থাকেন, আওয়ামী লীগ পালানোর পথ খোঁজে পাবে না। কিন্তু পালানোর রাজনীতি কার? -ইতহাসবিদ, রাজনীতিবিদ সবারই তা জানা। বিএনপির নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একটি বক্তব্যকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা জানান, গত রোববার (৯ জানুয়ারি) কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সৈয়দপুর এলাকার একটি হোটেলে কর্মশালায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের ১০ দফা ঘোষণা করেছি। এরই মধ্যে আমাদের গণমিছিল, গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। সারাদেশে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। এরপর আমরা গণঅভ্যূত্থানের ডাক দেব। সবাই এক হয়ে কর্মসূচি পালন করবে। তখন গণতন্ত্র হরণকারী এই সরকার পালানোর পথ খুঁজে পাবে না।’   

অন্যদিকে সোমবার (৩০ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজশাহীর সমাবেশে দেওয়া বক্তেব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, 'এক-এগারোতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কারা কারা পালিয়েছিল দেশ ছেড়ে এটা সবাই জানে।'

গতকাল রাজশাহীর জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার দেওয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'এক-এগারোতে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে কারা কারা পালিয়েছিল দেশ ছেড়ে এটা সবাই জানে কিন্তু পালায়নি একজন, তিনি হলেন- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তিনি পরিষ্কার করে বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো জায়গা নেই। এই দেশ আমার, এই মাটি আমার। আমার জন্ম এখানে, মরলেও আমি এখানে মরবো।'

বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থাসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে সোমবার দুপুরে যাত্রাবাড়ীতে পদযাত্রা শুরুর আগে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ১/১১ এর সময়ে তারেক জিয়া তখন জেলে। সে সময় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হলো। খালেদা জিয়া তখন তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে আবেদন করে অনুনয়-বিনয় করলেন, আকূল আবেদন করলেন, যেন তারেক জিয়াকে মুক্ত করা হয়। বলা হলো, তারেক জিয়া মুক্ত হলে তিনি দেশে থাকবেন না এবং রাজনীতি করবেন না। এরপর তারেক জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেওয়া হলো। জেল থেকে বের হয়ে তারেক জিয়া শুধু খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেই সরাসরি বিমান বন্দরে চলে গেলেন। সে সময় তারেক জিয়া বিমান বন্দরে একটি মুচলেকা দিয়েই দেশ ত্যাগ করলেন। এটাই হলো বাংলাদেশের রাজনীতিতে পলায়নের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সে সময় শুধু তারেক জিয়া নয়, হাওয়া ভবনে তারেক জিয়ার যারা যারা সাঙ্গ-পাঙ্গ ছিলেন, তাদের প্রায় সবাই পালিয়ে যায় এবং এখন অবধি তারা বিদেশেই অবস্থান করছেন। 

এছাড়াও, ১/১১ এর সময়ে বিএনপির মধ্যে পালানোর একটা রেকর্ড তৈরি হয়। তবে এটিই শুধু বিএনপির মধ্যে পালানোর একমাত্র ঘটনা নয়, সাম্প্রতিক সময়ে বেগম খালেদা জিয়া যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তখন তিনিও দণ্ড এড়ানোর জন্য চিকিৎসার অজুহাত দেখিয়ে নিজেকে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেন। এর জন্য তিনি মুচলেকা দিতেও রাজি ছিলেন। কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত আইন মোতাবেক তাকে বিদেশে যেতে দিতে রাজি হয়নি।                         

অন্যদিকে, শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল যখন সন্তান সম্ভাব্য ছিলেন, তাকে দেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। তখন ফেরার পথে তাকে বাঁধা দেওয়া হয়। সে সময় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি দেশে যাব এবং আমাকে নিয়ে যদি কোনো অভিযোগ থাকে, তবে তা নিয়ে দেশে যেন আমার বিচার হয়। ওই সময়ে শেখ হাসিনা যখন দেশে ফিরছিলেন, তাকে বাঁধা প্রদান করা হয়। এই বাঁধা উপেক্ষা করে তিনি ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি বিমানে করে আমেরিকা থেকে লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দরে আসেন। সেখান থেকে তিনি যখন ঢাকায় আসেন। আসার পথে তাঁকে বর্ডিং পাস দিতে অস্বীকৃতি জানায় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। পরে এর প্রেক্ষিতে দেশে এবং বিদেশে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। অবশেষে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে দেশে প্রবেশ করতে দিতে বাধ্য হয়। দেশে প্রবেশ করার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এ দুটি ঘটনাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অন্যতম আলোচিত ঘটনা। যেখান থেকে বোঝা যায় রাজনীতিতে কারা পালায়ন করেছে বলেও জানান রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭