ইনসাইড পলিটিক্স

মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা


প্রকাশ: 30/01/2023


Thumbnail

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয় শেখ হাসিনাকে। যখন শেখ হাসিনাকে সভাপতি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সে সময় তিনি দিল্লীতে অবস্থান করছিলেন। সভাপতি হওয়ার পরপরই তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রত্যয় ঘোষণা করেন। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরচারী সরকার জিয়াউর রহমান তাকে দেশে ফেরা পথে বাধা তৈরি করেন। কিন্তু সমস্ত বাধা বিপত্তি, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এটিই প্রথম ঘটনা নয়, এক-এগারো সময়ও শেখ হাসিনাকে বিদেশে রেখে মাইনাস করার একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সে সময় ওই ষড়যন্ত্র তিনি ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেছিলেন। কি হয়েছিল সে সময়? মহিউদ্দিন আহমেদের এক-এগারো বইয়ে সে সময়ের কথা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। সেখানে বলা আছে;

১৩ মার্চ ২০০৭ ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে গিয়ে ভিসা নেন শেখ হাসিনা। ওই সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত গীতা পাসির সঙ্গে কথা বলেন। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, তিনি এক মাসের জন্য ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ নাতনিদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। এ ছাড়া তিনি কানের চিকিৎসাও করাবেন।

যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেওয়ার আগে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী ধানমন্ডির সুধা সদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। ১৫ মার্চ বিকেলে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পথে লন্ডন রওনা হন।

শেখ হাসিনা ঢাকা ছাড়ার সময় জানিয়েছিলেন যে এক মাসের মধ্যেই তিনি ফিরবেন । ২৩ এপ্রিল তাঁর ঢাকা ফেরার কথা। দেশে ফিরে তাঁর বিরুদ্ধে আনা মামলার মোকাবিলা করবেন বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন। ফেরার পথে লন্ডনে তাঁর যাত্রাবিরতির কথা ছিল।

১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনোটে ২৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র থেকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। প্রেসনোটে বলা হয়, তাঁর ফিরে আসা দেশের আইনশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা, জননিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। আইন উপদেষ্টা মইনুল হোসেন বিবিসিকে বলেন, প্রেসনোটের বক্তব্য হচ্ছে হাসিনার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে একধরনের নিষেধাজ্ঞা। মইনুল বলেন, 'তাঁকে বারবার অনুরোধ জানানো এখন আপনার দেশে ফেরার প্রয়োজন নেই। আপনি সময় নিয়ে আসুন। এখানে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। তারপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যেসব বক্তব্য দিয়ে আসছেন, এটি এখানে একধরনের উসকানির সৃষ্টি করেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, তিনি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে আসছেন।’ দেশে চলে এলে কা হতে পারে, বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মইনুল বলেন, ‘আমরা এয়ারলাইনসগুলোকে অনুরোধ করেছি তাঁকে না নিয়ে আসার জন্য ।’ সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও হাসিনা ২৩ এপ্রিল ঢাকা ফেরার ঘোষণা দিয়ে ১৯ এপ্রিল বিকেলে লন্ডনে পৌঁছান। ২০ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের ‘অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের’ (এপিপিজি) সঙ্গে তিনি দেড় ঘণ্টা বৈঠক করেন। বৈঠকে হাউস অব লর্ডসের নেতা ব্যারোনেস ইমোস, ব্যারোনেস জেনিটাং, ব্যারোনেস রয়াল লর্ড এভবারি, ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা উদ্দীন উপস্থিত ছিলেন। ব্যারোনেস মঞ্জিলা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, এপিপিজি বাংলাদেশের বন্ধু। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সংস্কারমূলক কাজগুলো সমর্থন করে, আবার একই সঙ্গে শেখ হাসিনার বক্তব্যের ব্যাপারেও তারা সচেতন।

এর আগে ১১ এপ্রিল ২৮ অক্টোবর (২০০৬) পল্টনে সহিংসতার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১৪ দলের ৪৬ জন নেতা-কর্মী এবং জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছিল মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ২২ এপ্রিল ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

শেখ হাসিনা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে ঢাকা ফিরতে চাইলে লন্ডনের হিথরো এয়ারপোর্টে তাঁকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি। ২৪ এপ্রিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপক জেমস ফরস্টার এক লিখিত ব্যাখ্যায় বলেন, বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোয় তাঁকে বোর্ডিং পাস দেওয়া হয়নি। ..... ২৪ এপ্রিল শেখ হাসিনার পক্ষের আইনজীবীরা তাঁর দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জারি করা প্রেসনোটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ ও তাঁর দেশে ফেরার বাধা দূর করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদনের অনুমতি চান। হাইকোর্ট ২৬ এপ্রিল রিট দায়েরের অনুমতি দেওয়ার কথা জানিয়ে ২৯ এপ্রিল এর ওপর শুনানি হবে বলে জানান ।

কিন্তু তার আগেই সরকারি সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। ২৬ এপ্রিল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে চারজন উপদেষ্টা ও উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে এক বৈঠকে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 

সূত্র: এক-এগারো, বাংলাদেশ ২০০৭-২০০৮, মহিউদ্দিন আহমদ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭