ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

আইএমএফের পরীক্ষা দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা, উতরোলেই মিলবে ঋণ


প্রকাশ: 31/01/2023


Thumbnail

সঙ্কটে পরে থাকা শ্রীলঙ্কাকে ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দিয়েছে ভারত। এদিকে আইএমএফ এর কাছ থেকে ২৯০ কোটি ডলার পাওয়ার অপেক্ষায় আছে দেশটি। আর তার জন্য মানতে হচ্ছে কঠিন শর্ত। এদিকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আগের মতো আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বড় খবর হিসেবে আসছে না। পরিস্থিতি কি বদলেছে কি না তা নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা?

আদতে, বিশ্বর নিত্যনতুন সংকটের ভিড়ে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়তো কিছুটা পেছনে পড়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা এখনো সংকটের মধ্যেই আছে। শ্রীলঙ্কার জনগণ পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। জিনিসপত্রের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। এটি যেন আঘাতের ওপর আঘাত।

ধরা যাক, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি ধসে পড়ার আগে পোশাকশিল্পের একজন প্রশাসনিক কর্তা মাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন পেতেন। ওই বেতনে তাঁর সংসারের খাওয়া খরচ থেকে শুরু করে সব প্রয়োজন মেটাতে হতো। এখন সেই খরচ মেটাতেই তাঁর ৬৫ থেকে ৭০ হাজার রুপি প্রয়োজন। তাঁর বেতন তো বাড়েইনি। উল্টো চাকরিটাও ঝুঁকিতে আছে।

ফলে মানুষের চাহিদা কমাতে হচ্ছে।আগে পরিবারে মাসে গুঁড়া দুধ লাগত দুই কেজি। এখন তা আধাকেজি বা সর্বোচ্চ এক কেজিতে সীমিত রাখছে মানুষ। অর্থাৎ খাওয়া দাওয়ার পরিমাণ এবং খাবারের ধরন বদলাতে হচ্ছে।

বিলাসবহুলসহ অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে সরকার কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। এতে আবার ওই খাতের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় এমন পণ্যগুলোর দাম এখন অনেক বেশি। নিত্যপণ্য কিনতেই আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ ধরনের সংকটে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকেই সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। শ্রীলঙ্কায় দারিদ্র্য বাড়ছে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) শর্ত দিয়েছে, করের পরিমাণ বাড়াতে হবে। সরকারি চাকরিতে অপ্রয়োজনীয় জনবল এবং তাঁদের সুবিধা কমাতে হবে। সরকারও বলছে, করের পরিমাণ বাড়াতেই হবে। কারণ দেশ চালাতে হলে অর্থ লাগবে। শ্রীলঙ্কায় চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, ব্যাংকসহ বিভিন্ন খাতের কর্মীরা সরকারের আয়কর বৃদ্ধির উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে অবসরের সময়সীমা ৬৫ বছর থেকে কমিয়ে ৬০ বছর করেছেন। শূন্যপদে লোক নিয়োগও কার্যত বন্ধ রেখেছেন। আইএমএফ আগেই বলে দিয়েছে, ঋণ পেতে হলে শ্রীলঙ্কা সরকারকে সরকারি চাকরির পদ কমাতে হবে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো বিক্রি করতে হবে। ভর্তুকি কমিয়ে আনতে হবে।

শ্রীলঙ্কার এই সংকটের মধ্যে সবচেয়ে জোরালোভাবে পাশে ভারত। শ্রীলঙ্কাকে ৪৮০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে মোদি সরকার। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা দেশগুলোও শ্রীলঙ্কাকে সহায়তা করছে।

আইএমএফের প্রস্তাবিত প্যাকেজের পরিমাণ ২৯০ কোটি মার্কিন ডলার। পরিমাণে এটি ভারতের দেওয়া সহায়তার চেয়ে অনেক কম। তবে আইএমএফের এই ঋণ পাওয়া শ্রীলঙ্কার জন্য প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আইএমএফ যদি শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দেয়, তাহলে সারা বিশ্বের কাছে বার্তা যাবে যে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা শ্রীলঙ্কার আছে। তখন বিশ্ব শ্রীলঙ্কার পাশে আরো জোরালোভাবে দাঁড়ানোর এবং সহযোগিতা করার সাহস পাবে।

এদিকে শ্রীলঙ্কার দেনার বিষয়ে চীনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। চীন যদি শ্রীলঙ্কার দেনা কমাতে রাজি হয় তবে ঋণ দিতে পারে আইএমএফ। আইএমএফ নিশ্চিত হতে চাচ্ছে, ঋণ নিলে সেটি পরিশোধ করার সক্ষমতা শ্রীলঙ্কার আছে।

শ্রীলঙ্কার জনগণের বড় অংশই মনে করে, দেশের আজকের এই সংকটের জন্য শাসনব্যবস্থা, বিশেষ করে, রাজাপক্ষের পরিবারই দায়ী। প্রথমে তাদের লক্ষ্য ছিল তামিলদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে জয়ী হওয়া। সে জন্য সেখানে তারা যথেষ্ট অর্থ ব্যয় করেছে। গৃহযুদ্ধের পর রাজাপক্ষের সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক ঋণ নিয়ে দেশকে ঋণে জর্জরিত করেছে। এরপর সেই ঋণ তারা ব্যয় করেছে হাম্বানটোটা বন্দরের মতো অপরিণামদর্শী অলাভজনক প্রকল্পে। কভিড মহামারির ধাক্কা শ্রীলঙ্কায় যেন কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছে। পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কায় পর্যটন খাতে ধস নামল। ফসলের উৎপাদন কমল। এসব কিছুর দুর্ভোগ এখন টের পাচ্ছে শ্রীলঙ্কার জনগণ।

কিন্তু এই সংকটের মধ্যে দেশের হাল ধরেছেন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। রাজনীতিকদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সময় চলে এসেছে। যদিও বলা যাচ্ছনা এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে কি না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭