ইনসাইড বাংলাদেশ

বছরে ৩১৭ দিন অস্বাস্থ্যকর ঢাকার বায়ু, শীতকালে ১৬ গুণ বেশি


প্রকাশ: 01/02/2023


Thumbnail

চরম অস্বাস্থ্যকর বায়ুর মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে নিজেদের জীবন কাটাচ্ছে রাজধানী ঢাকার মানুষ। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুদূষণ পরিমাপকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিলো ঢাকা।

বায়ু দূষণ রোধে হাইকোর্টের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে আগে থেকেই। সিটি কর্পোরেশনেরও রয়েছে নিয়ম মানার বাধ্যবাধকতা। কিন্তু সেসব নিয়ম তোয়াক্কা না করায় বছরের প্রায় ৩১৭ দিন অস্বাস্থ্যকর থাকছে ঢাকার বায়ুমান। আর এর মধ্যে দুষণের শীর্ষে শাহবাগ এলাকা।

বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের এক গবেষণায় দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে শীতকালে ঢাকার বাতাস ১৬ গুণ বেশি দূষিত থাকে। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে বছরের ৩১৭ দিন। মাঝে মধ্যে এটা ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘বিপজ্জনক’ পর্যায়ে চলে যায়।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বে প্রতি বছর আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যায়। মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যানসার ও তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ অর্থাৎ শ্বাসকষ্টজনিত কারণে মৃত্যুহার বাড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বিগত আড়াই মাসে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৯ জন। এর মধ্যে ৯৬ জনই মারা গেছেন শ্বাসতন্ত্রজনিত রোগে।

২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ঢাকা শহরের নির্বাচিত ১০টি এলাকা থেকে শব্দ ও বায়ুমানের নমুনা সংগ্রহ করে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের করা গবেষণায় দেখা যায়, ৪৮ দিন ছাড়া বছরের বাকি সময় ঢাকার বাতাস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) করা নির্মল বায়ুর মানমাত্রার চেয়ে খারাপ থাকে। বছরের অর্ধেক সময় ঢাকার সবচেয়ে দূষিত বায়ু থাকে শাহবাগ এলাকায়। বর্ষায় সবচেয়ে দূষিত বায়ু মিরপুরের। বর্ষার পরের সময়টাতে তেজগাঁওয়ের বাতাস সবচেয়ে দূষিত থাকে।

সম্প্রতি সংস্থাটির গবেষকরা এক সভায় জানান, ধুলাবালি হচ্ছে ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস। এসব ধূলিকণা মুখে গেলে মানুষ যেখানে-সেখানে থুতু ও কফ ফেলে। আর এই থুতু ও কফ ধুলার সঙ্গে মিশে বিভিন্নভাবে তা মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়া বায়ুদূষণের আরও উৎস হচ্ছে- ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে সৃষ্ট ধুলা।

জানা যায়, ঢাকা শহরে পরিবেশ দূষণের মূল কারণ নিয়ম না মেনে চলা নির্মাণাধীন ভবন ও উন্নয়নমূলক কাজ। রাস্তাঘাট নির্মাণ, বড় বড় প্রকল্প কিংবা ভবন নির্মাণসহ নির্মাণাধীন সব ভবনেই ধুলাবালি বাতাসের সঙ্গে যেন না মিশে যায় সেজন্য যথাযথ অস্থায়ী ছাউনি বা বেষ্টনী দেওয়ার নীতিমালা রয়েছে। তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা করছে না কেউ।


এছাড়াও নীতিমালায় বলা হয়েছে, রাস্তায় গৃহস্থালি ও পৌরবর্জ্য স্তূপাকারে রাখা বা পোড়ানো যাবে না। রাস্তার পাশের ড্রেন থেকে ময়লা উঠিয়ে রাস্তায় ফেলে রাখা যাবে না। কিন্তু সিটি করপোরেশন এলাকাগুলোতে দেখা যায় উল্টো চিত্র। তবে উত্তর সিটি করপোরেশনের নেওয়া স্বল্পমেয়াদি পরিবেশ দূষণ রোধে ওয়াটার ক্যানন দিয়ে পানি ছিটানোকে সন্তোষজনক বলেছেন অনেকে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সম্প্রতি নয়টি প্রস্তাব দিয়েছে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইপিডি)। যেমন সব ধরনের নির্মাণ (অবকাঠামো ও ভবন) কর্মকাণ্ড কঠোর নজরদারিতে আনা, ঢাকার পরিবেশ ও নগরের ভার বহন ক্ষমতাকে বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় অঞ্চলে অবকাঠামো ও ভবন নির্মাণে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শ্রেণি নির্ধারণের মাধ্যমে শুধু অতি জরুরি ও দূষণে ন্যূনতম প্রভাব রাখবে এমন শ্রেণির অবকাঠামো প্রকল্প গ্রহণ, অবকাঠামো নির্মাণে যুক্ত ঠিকাদারদের বায়ুমানের নিয়মিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নীতি গ্রহণ, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ, ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় তদারকি এবং ভবনে এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ।

এছাড়া আরও আছে, নগরে মানসম্মত পাবলিক বাস, প্যারাট্রানজিট ও গণপরিবহন বাড়াতে উদ্যোগ, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ করে ব্লক ইট ব্যবহারের সরকারঘোষিত নির্দেশনার বাস্তবায়নে যথাযথ উদ্যোগ, ঢাকার চারপাশে পরিকল্পনামাফিক সবুজ এলাকা ও সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা, পরিবেশ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করা, এক্ষেত্রে যথাযথ নজরদারি ও দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনা এবং বায়ুদূষণ রোধে সংস্থার প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭