ইনসাইড পলিটিক্স

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সঙ্কট: অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত


প্রকাশ: 02/02/2023


Thumbnail

গত সেমবার (৩০ জানুয়ারি) দেশব্যাপী বিএনপি-জামাতের নৈরাজ্য ও তাণ্ডবের প্রতিবাদে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশ যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেছেন, ‘ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর সারা বিশ্ব বিপদগ্রস্থ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝে, কিন্তু বিএনপি-জামায়াত শক্তি তা বুঝে না। তারা এই ইস্যুটিকে সামনে এনে বর্তমান সরকারের পতন চায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পতন চেয়ে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল না করতে পেরেই বিএনপি-জামায়াত গত বেশ কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে (মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর) রাজধানীর আসাদ গেট এলাকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য রুমানা মাহমুদের সঙ্গে তার বাসায় দেখা করতে যান মির্জা ফখরুল। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতে গিয়ে বলেন, ‘অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় সংকটে বাংলাদেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশ খাদের কিনারায় পৌঁছে গেছে। একদিকে অর্থনৈতিক সংকট, অন্যদিকে রাজনৈতিক সংকট। এটি একটি সংকটময় মুহূর্ত।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র এই ঘটনা নয়, এমন অহরহ ঘটনা রয়েছে, যেখানে বিএনপি-জামায়াত এবং এদের দোষররা প্রতিনিয়ত দেশের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যেই অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও দেশের বাইরেও গোপনীয়তা রক্ষা করে বিএনপি-জামায়াত আন্তর্জাতিক মহলে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে বলেও মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যার ফলে বাংলাদেশের র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেও বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।     

এদিকে, বিএনপির-জামায়াতের এমন গুজব-অপপ্রচারকে রুখে দিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাজ করছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ’ সম্পর্কিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি। উচ্চপর্যায়ের এ কমিটি গুজব সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান এবং কমিটির আওতাভুক্ত দফতরসমূহ গুজব প্রতিরোধে স্ব স্ব দফতরের বিধি-বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। গুজবের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে সোস্যাল মিডিয়া থেকে জরুরীভিত্তিতে লিংকসমূহ বন্ধ ও প্রত্যাহারে বিটিআরসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদ। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য মোছা. শামীমা আক্তার খানমের প্রশ্নের লিখিত জবাবে এ তথ্য জানান তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

তথ্যমন্ত্রী জানান, চলমান এই কার্যক্রমের আওতায় ২০১৮ সালের ২১ নবেম্বর থেকে এ পর্যন্ত গুজব সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়কে গুজব বলে নিশ্চিত করে মোট ১৮টি তথ্যবিবরণী জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি গুজব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে রেডিও টেলিভিশনে স্পট এবং টিভিসি নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। তথ্য মন্ত্রণালয় তার অধীনস্থ দফতরগুলো গুজব প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরও  জানান, সারাদেশে গুজব ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখতে এবং এর বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে টেলিভিশনে জনসচেনতামূলক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতারের ১৪টি আঞ্চলিক কেন্দ্র ও বিশেষায়িত ইউনিটসমূহ থেকে নিয়মিতভাবে গুজব ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অপপ্রচার রুখতে বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান ঘোষণা, সাক্ষাতকার, স্লোগান ইত্যাদি প্রচার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে গতকাল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম জাতীয় সংসদে দাবি করেছেন, ভুল তথ্যের ভিত্তিতে প্ররোচনায় পড়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা।

সংসদে তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর ভ্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশের অন্যতম সফল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা। র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার ইস্যুসহ বিভিন্ন বিষয়ে গত এক বছরে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। করোনার কারণে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আগে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় সরাসরি সফর হয়নি বলেও জানান তিনি।

শাহরিয়ার আলম বলেন, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের পরে আমরা যে যোগাযোগ করেছি। তারা (বিএনপি) ভেবেছিলো পরবর্তী ডিসেম্বরের(২০২২) মধ্যে আরেকটা নিষেধাজ্ঞা আদায় করতে পারবে। এটা বুঝতে পেরে আমরা কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করি।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গুজব-অপপ্রচার রোধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ‘গুজব প্রতিরোধ ও অবহিতকরণ’-এর যে কমিটি রয়েছে- তা কতখানি কার্যকর সেটিই দেখার বিষয়। গুজব এবং অপ্রপ্রচার রোধে সরকার যদি আগে থেকেই সচেতনতা অবলম্বন করতো, তাহলে র‌্যাবের ওপর আমেরিকার এমন নিষেধাজ্ঞা দেওয়াটা হতো না। এটি দেশের ভাবমূর্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জাতীয় সংসদে যে বিষয়টি উত্থাপিত করেছেন, সে বিষয়টি সরকারের আনেক আগেই নজরে আনা অতি প্রয়োজনীয় একটি বিষয় ছিল।      

এদিকে গত সোমবার (৩০ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে একাধিক ধাক্কা বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ। এই বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারকে দুটি খাতে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ অনুমোদন দেয় আইএমএফ।

এ সময় আইএমএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আন্তোয়নেট মনসিও সায়েহ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ দারিদ্র্য হ্রাসে এবং জীবনযাত্রার মানের উল্লেখযোগ্য উন্নতিতে অবিচল অগ্রগতি অর্জন করেছে। তবে কোভিড-১৯ মহামারি এবং পরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এই দীর্ঘসময়ের শক্তিশালী অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।

আইএমএফ উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্ত্যব্যের সাথে সহমত পোষণ করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা আওয়ামী যুবলীগের শান্তি সমাবেশে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তিও করেছেন। তাঁরা বলছেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর সারা বিশ্ব বিপদগ্রস্থ। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি। সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝে কিন্তু বিএনপি-জামায়াত শক্তি তা বুঝে না। এই ইস্যুটিকে ব্যাবহার করে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে এক ধরনের গুজব-অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এর প্রতিরোধে রয়েছে কমিটি। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে এ ধরনের গুজব-অপপ্রচার রোধে এই কমিটি কতখানি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭