কালার ইনসাইড

শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাচ্ছে ‘ফারাজ’


প্রকাশ: 02/02/2023


Thumbnail

ঢাকার হোলি আর্টিজানে ২০১৬ সালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত বলিউড মুভি ‘ফারাজ’-এর মুক্তির ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্থগিতাদেশ জারি করতে অস্বীকার করেছেন ভারতের দিল্লি হাইকোর্ট। কিন্তু আদালত শর্ত দিয়েছেন, ছবিটি পর্দায় দেখানোর সময় এই মর্মে একটি ‘ডিসক্লেইমার’ দিতে হবে যে সিনেমাটি ঢাকার জঙ্গি হামলার ঘটনার দ্বারা অনুপ্রাণিত হলেও সিনেমাতে তুলে ধরা ঘটনাগুলো ‘সম্পূর্ণ কাল্পনিক’ (পিওর ওয়ার্ক অব ফিকশন)।

বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুলের নেতৃত্বে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই সঙ্গে বলেছেন, ছবির নির্মাতা ও প্রযোজকদের এই ডিসক্লেইমারটি একেবারে ‘অক্ষরে অক্ষরে’ অনুসরণ করতে হবে।

বলিউডের সুপরিচিত পরিচালক হানসাল মেহতার নির্মিত ছবিটি আগামীকাল শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ভারতের সিনেমা হলগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পাবে বলে কথা রয়েছে।

দিল্লি হাইকোর্টের আজকের এই রায়ের পর ছবিটির মুক্তিতে আর কোনো বাধা রইল না। তবে ছবিটিতে এই ডিসক্লেইমারটি তাদের যোগ করার ব্যবস্থা করতে হবে।

একটি সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে সেলুলয়েডে কোনো ছবি বানানো হলে সেই হামলায় নিহত ভিকটিমের প্রাইভেসির অধিকার লঙ্ঘিত হয় কি না এবং ওই ভিকটিমের অবর্তমানে সেই অধিকার তার নিকটাত্মীয়দের ওপর বর্তায় কি না–এই প্রশ্নটিকে ঘিরে আলোচিত মামলাটি ভারতে এক অভূতপূর্ব আইনি বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল।

ঢাকার গুলশানের হোলি আর্টিজান হামলায় নিহতদের অন্যতম অবিন্তা কবিরের মা রুবা আহমেদ অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর নিহত মেয়ের প্রাইভেসি লঙ্ঘন করে, পরিবারের কোনো সম্মতি না নিয়ে এবং ভুল তথ্য উপস্থাপন করে এই ‘ফারাজ’ ছবিটি বানানো হচ্ছে।

ছবিটির মুক্তি আটকাতে চেয়ে তিনি ভারতের আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলেন, কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে দিল্লি হাইকোর্টে একক বিচারপতির বেঞ্চ ‘ফারাজ’ ছবিটির মুক্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করেন।

তখন বিচারপতির যুক্তি ছিল, প্রাইভেসির অধিকার একান্তভাবেই ‘ইন পার্সোনাম’ (সেই ব্যক্তির নিজস্ব)–মৃত্যুর পর সেই অধিকার তার মা কিংবা আইনি উত্তরাধিকারীরা পাবেন বিষয়টা এমন নয়।

রুবা আহমেদ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে দিল্লি হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে তার শুনানি শুরু হয়। প্রায় তিন মাস ধরে দীর্ঘ শুনানির শেষে বিচারপতি সিদ্ধার্থ মৃদুল ও তালওয়ান্ত সিংয়ের বেঞ্চ আজ তাদের রায় ঘোষণা করলেন।

ইতিমধ্যে তারা একাধিকবার বাদী ও বিবাদীপক্ষকে নিজেদের মধ্যে বসে আপেস-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

পরিচালক হানসাল মেহতার পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেছিলেন, যেহেতু হোলি আর্টিজানের ঘটনাটি ‘পাবলিক ডোমেইনে’ বা জনসমক্ষে ঘটেছে সেখানে একজন ব্যক্তিবিশেষের গোপনীয়তা বা প্রাইভেসি রক্ষার বিষয়টিই অপ্রাসঙ্গিক ও অবান্তর।

অন্যদিকে বাদীপক্ষের প্রধান আইনজীবী অখিল সিবাল গত সপ্তাহেই সওয়াল করেন, “প্রথমত নির্মাতারা ভিকটিমের পরিবারের কোনো ‘কনসেন্ট’ বা সম্মতিই নেননি। অথচ ভিকটিমের পরিবারের সদস্যরা, মা-বাবা এখনো জীবিত আছেন।”

তিনি আরও বলেন, যেরকম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে তারা প্রাণ হারিয়েছেন, সেটাকে ব্যাবসায়িকভাবে কাজে লাগিয়ে মুনাফা করা হবে অথচ ভিকটিমের পরিবারের কোনো মতামতই নেওয়া হবে না–এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

তবে বিচারপতিরা আজ তাঁদের রায়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন ছবিটির বাণিজ্যিক মুক্তিকে তাঁরা কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত করতে চান না–কিন্তু নিহতের পরিবারের অনুভূতিকে মর্যাদা দিয়ে তারা ছবিতে একটি নির্দিষ্ট ‘ডিসক্লেইমার’ও যোগ করতে বলেছেন।

‘ফারাজ’ ছবিটি ভারতে এখনো বাণিজ্যিক মুক্তি না পেলেও লন্ডনের একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি গত বছর দেখানো হয়েছে।

গত ২৪ জানুয়ারি সন্ধ্যাতেও দিল্লিতে প্রযোজনা সংস্থার পক্ষ থেকে ছবিটির একটি বিশেষ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে বাছাই করা অতিথি, সিনেমা সমালোচক ও শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে ‘ফারাজ’ ছবিটি তাদের দেখানো হয়।

এই ছবিটিকে ঘিরে ভারতের সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের মধ্যেও তুমুল আগ্রহ তৈরি হয়েছে। যার একটা বড় কারণ আদালতে এই ছবিটিকে নিয়ে চলা দীর্ঘ আইনি লড়াই।

ভারতীয় সিনেমার লেজেন্ড, প্রয়াত শশী কাপুরের পৌত্র জাহান কাপুরের অভিষেক হচ্ছে এই ছবিতে, তিনি ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্র ফারাজ হোসেনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন।

বলিউডের নামী অভিনেতা পরেশ রাওয়ালের ছেলে আদিত্য রাওয়াল এবং রাজ বব্বরের মেয়ে জুহি বব্বরকেও এই ছবিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা যাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭