ইনসাইড টক

‘আমার এতো শত্রু, যা আমি কল্পনাও করিনি’


প্রকাশ: 03/02/2023


Thumbnail

‘মুনমুন’ ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের বেশ আলোচিত একটি নাম। ১৯৯৭ সালে মৌমাছি ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র অঙ্গনে যাত্রা শুরু তার। ৯৯৭-২০০৩ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই অভিনয় করেছেন এই নায়িকা। আলোচনায় থাকার পাশাপাশি হয়েছেন বেশ সমালোচিতও। আর তাই ২০০৩ সালের পরে চলচ্চিত্র থেকে নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে নেন মুনমুন।

বেশ লম্বা সময় চলচ্চিত্র থেকে দূরে থাকলেও ফের নতুন উদ্যমে চলচ্চিত্রে ফিরেছেন তিনি। এ খবর এখন সবার জানা। পাশাপাশি আলোচিত এই নায়িকাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে বায়ো-ডকুমেন্টারি। সমসাময়িক নানা বিষয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের প্রতিবেদকের সাথে খোলামেলা কথা বলেন।



বাংলা ইনসাইডার: দর্শক আপনাকে অশ্লীল ছবির নায়িকা হিসেবেই জানেন, এটা কিভাবে দেখছেন?

মুনমুন: আপনারা সাংবাদিকরা অনেকে জানেন আবার অনেকে না জানার ভান ধরেন। ২০০৩ সালে আমি ফিল্ম ছেড়ে চলে গেলাম। এরপরের চারটা বছর অশ্লীলতায় ঘিরে ছিলো বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। এটার জন্য আপনি কয়জন শিল্পীকে দায়ী করবেন। যখন অশ্লীল সিনেমা শুরু হয় আমি তখন কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। আমাকে কেউই কখনো বলেনি আমি অশ্লীল চলচ্চিত্রের নায়িকা।

আমার ছবি আপনারা দেখেন আমি যে ড্রেসগুলো পড়েছি আমি যেসব সিন করেছি তা কি অন্য নায়িকারা করেনি? শাবনুর দেখায়নি? পপি দেখায়নি? সবাই এমন পোশাক পড়ছে। দোষ কেন মুনমুনের একার হবে? আমি এটার জন্য অপমানিত হচ্ছি। পরে পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, প্রযোজক সমিতি সবাই আমার পক্ষে কথা বলছে। আজ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সবাই আমাকে ওয়েলকাম করছে। কারণ আমি অনেক লক্ষ্মী নায়িকা ছিলাম। কারণ আমি কোনো দাম দেখাইনি। সবাই আমাকে অনেক পছন্দ করেন। তাছাড়া আমাকে অশ্লীল হিসেবে পরিচিত করার পেছনে অনেক সাংবাদিক দায়ী। আমি নিজে বলবো না, ইউটিউবে অনেক ছবি আছে আমার আপনারই দেখেন কোনটা অশ্লীল।

বাংলা ইনসাইডার: বিষয়টা কি এমন, আপনার উপর দোষ চাপিয়ে অন্যরা আড়াল হচ্ছেন?

মুনমুন: হিরোদের সঙ্গে রোম্যান্টিক সিন করতেও ভয় পেতাম, কারণ করবো একটা, স্ক্রিনে না আবার অন্য কিছু দেখায়! কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। যার কারণেই ওই সময়ে ফিল্ম ছেড়ে চলে যাওয়া। ব্যাপারটা এমন না, আমি জোর করে চলে গেছি। আমি ভাবলাম, এ মুহূর্তে ফিল্ম থেকে দূরে থাকি। পরে ভালো হলে আবার ফিরে আসবো। আমি যখন ফিরে আসলাম তখন দেখলাম আমার এতো শত্রু, যা আমি কল্পনাও করিনি। আমি খুব সহজ সরল ছিলাম, অনেক কিছুই বুঝতাম না। যে যেভাবে কাজ করতে বলেছে ওই ভাবে করছি। আপনারা হয়তো বলবেন, আপনি অনেক রাগী ছিলেন শো-আপ করছেন। আমাকে পরিচালক শো-আপ করতে বলছে, শাবনুর যে ধরনের চরিত্রে কাজ করতো আমাকে তো ওই ধরনের চরিত্র দেয়নি। আমাকে পরিচালক হাতে অস্ত্র নিয়ে মানুষ মারতে দিয়েছে। আমাকে যে ধরনের চরিত্রে কাজ করতে দিছে পরিচালক, আমি করছি। আমি তো শুধু অভিনয় করেছি কিন্তু এর জন্য আমার ব্যক্তি জীবনে বদনাম করে ক্ষতি করার কী মানে?



বাংলা ইনসাইডার: আপনার মতে, আপনি এক ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করতেন অথচ পর্দায় হতো অশ্লীল কিছু। এমনটা হতো কিভাবে?

মুনমুন: ফিল্মে সহশিল্পী চরিত্রে যারা কাজ করে যেমন ফাইটিংয়ের জন্য যাদের আনা হয়েছে, এদের দিয়ে রেপ সিন গুলোতে কাপড় খুলে দৃশ্যগুলো নিতো। আমি প্রায় দেখতাম শুটিং চলাকালে আশেপাশে কিছু মেয়ে ঘোরাঘুরি করছে, আমি জানতাম না এদের দিয়ে কি করানো হয়। একদিন আমাকে মেকআপের একটা ছেলে বলেন, আপু জানেন এদের দিয়ে কি কাজ করানো হয়? আমি বললাম, না আমি তো জানিনা। কি আর করানো হবে ফাইটের দৃশ্য করানো হয়? ওই ছেলে বলে, না আপা ওদের দিয়ে খোলানো হয়। আপনার রেপ সিন হইতেছে আপনি তো এই শর্ট দিবেন না। আপনার কাপড়টা ওদের পড়িয়ে পুরা খোলানো হয়। এগুলো পরে হলে প্রদর্শন করে। যখন এসব একের পর এক শুনতে থাকলাম বিভিন্ন জনের কাছে, আমি তো আর গ্রামে ছবি দেখতে যেতাম না। যদি দেখতাম তাহলে বুঝতাম ছবিতে কি কি যোগ করা হচ্ছে। এরপর সিদ্ধান্ত নিলাম ফিল্ম ছেড়ে চলে যাবো।

বাংলা ইনসাইডার: আপনি সিন করলেন একটা হলে চললো অন্যটা। সেন্সর বোর্ডের চোখে পড়েনি?

মুনমুন: আসলে যারা এ ছবি বানিয়েছে তাদের যদি জিজ্ঞাসা করতে পারেন সব চেয়ে ভালো হতো। তারাই জানে সেন্সরকে টেক্কা দিয়ে কিভাবে হল পর্যন্ত নিয়ে গেছে। আর তারাই বলতে পারবে এ ছবিগুলো দিয়ে কেমন ব্যবসা করছে। আমি ওই সময় ছিলাম না।

বাংলা ইনসাইডার: শোনা যায় মিডিয়াতে অনেকের কাছি নাকি আপনি বেশ মোটা অঙ্কের টাকা পান। বিষয়টা কতটুকু সত্য?

মুনমুন: হুম, যা শুনেছেন তা সত্য। আমি মিডিয়ার বিভিন্ন মানুষ আর প্রোডাকশন হাউজের কাছে আশি লক্ষ টাকা পাই।

বাংলা ইনসাইডার: পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য কি কোনো ব্যবস্থা নেননি?

মুনমুন: কি করবো বলেন, যাদের কাছে টাকা পেতাম তাদের অনেকে প্রোডাকশন হাউজ গুটিয়ে নিয়েছে, আবার অনেকে মারা গিয়েছে। প্রথমদিকে আমি এইসব বিষয়ে শিল্পী সমিতিকে জানিয়েছি কিন্তু তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এখন আর এইসব নিয়ে ভাবি না।

বাংলা ইনসাইডার: দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে তো অনেক নায়কের সাথে অভিনয় করেছেন। তা কার সাথে অভিনয় করতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো বা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন?

মুনমুন: আমি ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, শাকিব খানসহ অনেক নায়কের সাথেই কাজ করেছি। তবে নির্দিষ্ট করে কখনো কারো সাথে জুটি বেঁধে কাজ করিনি আমি। আমি সবার সাথে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছি। ইলিয়াস স্যারের সাথে কাজ করে অনেক ভিন্ন জিনিস শিখেছি। আবার মান্না ভাই ছিলেন মজার মানুষ। তার সাথে কাজ করে বেশ ভালো লাগতো।



বাংলা ইনসাইডার: ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের সাথেও আপনি বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। শাকিব খানকে নিয়ে আপনার মতামত কি?

মুনমুন: শাকিব খান নিঃসন্দেহে একজন ভালো অভিনয় শিল্পী। যার কারণেই আজকে সে দেশ সহ দেশের বাইরেও প্রশংসিত। হুম এটা সত্য যে ওকে নিয়ে ইদানীং নানা প্রবলেম বা সমালোচনা হচ্ছে। চলচ্চিত্রে এখন নায়ক নেই বললেই চলে। সে জায়গায় শাকিব নিজে একাই ধরে রেখেছে। তার জনপ্রিয়তাও বেশি। সে কারণে ওকে নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা হওয়াটাই স্বাভাবিক।

বাংলা ইনসাইডার: পরিচালনা বা প্রযোজনা করার ইচ্ছে আছে?

মুনমুন: ইচ্ছে আছে। তবে ব্যবসায়ীক ছবি না। আর্ট ফিল্ম বানানোর ইচ্ছা আছে।

প্রায় ৯০ টি ছবির নায়িকা মুনমুনের জন্ম ইরাকে হলেও তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামে। মুনমুন বর্তমানে তোলপাড় চলচ্চিত্রটি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশা


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭