ইনসাইড পলিটিক্স

উপনির্বাচন: জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৫ দুশ্চিন্তা


প্রকাশ: 03/02/2023


Thumbnail

ছয়টি উপনির্বাচন ছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের টেস্ট রিহার্সেল। নির্বাচন কমিশন বলেছে, এই বছরের ডিসেম্বরে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বলেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এই প্রেক্ষিতে ছয়টি আসনের উপনির্বাচন ছিল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কি রকম হবে তার একটি টেস্ট রিহার্সেল। কিন্তু এই নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। 

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে নির্বাচন এবং কে নির্বাচনে আসলো, কে নির্বাচনে আসলো না সেটি বড় কথা নয়। বরং যে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করবে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এরকম ধারণার পর ছয়টি উপনির্বাচন কেমন হলো এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে এবং এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে খুঁজে পেতে হবে। উপনির্বাচনগুলোতে পাঁচটি দুশ্চিন্তা আওয়ামী লীগের মধ্যে সঞ্চারিত হয়েছে এবং এই দুশ্চিন্তার কারণগুলো দূর করা রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগের জন্য জরুরি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। যে পাঁচটি দুশ্চিন্তা উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগকে গ্রাস করেছে তার মধ্যে রয়েছে;

১. ভোটার কম উপস্থিতি: ছয়টি উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল অনেক কম। ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের মতো মানুষ ভোট দিয়েছে। অর্থাৎ সিংহভাগ মানুষ ভোট প্রয়োগ থেকে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ হয় না এটি আবার প্রমাণিত হয়েছে। এই বিবেচনায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেই ভোট কতটুকু উৎসবমুখর পরিবেশে হবে সেটি এখন একটি বড় প্রশ্নের হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে দাঁড়িয়েছে। কারণ অংশগ্রহণহীন নির্বাচন হলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে সেটিও একটি বড় বিষয়। 

২. শরিকদের দুর্বলতা: এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুটি আসন শরিকদের জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। বগুড়া-৪ এবং ঠাকুরগাঁও-৩ যথাক্রমে জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এই দুই দলই প্রমাণ করেছে যে, নিজের শক্তিতে ভোটের মাঠে লড়াই করার মত সামর্থ্য তাদের নাই। যদিও এই দুটি আসনের একটিতে শরিক দল বিজয়ী হয়েছেন। কিন্তু ভোটের হার ছিল অনেক কম। বগুড়া-৪ আসনে জাসদ প্রার্থী হিরো আলমের কাছে প্রায় নাস্তানাবুদ করছিলেন। ন্যূনতম ভোটের ব্যবধানে তিনি বিজয়ী হন। ফলে এই দুর্বল শরিকদের নিয়ে আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনের মাঠ কিভাবে গরম করবে সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। 

৩. বিএনপির দলছুট প্রার্থী বিড়ম্বনা: এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি টেস্ট রিহার্সেল করেছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে বিএনপি থেকে পদত্যাগকারী উকিল আব্দুস সাত্তারকে দিয়ে। উকিল আব্দুস সাত্তার স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থীদের ছিলেন, আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের একটি পরিকল্পনা ছিল, এই মডেল সফল হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির যারা স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে চান তাদেরকে এই টোপ দিয়ে ব্যবহার করা এবং তারা নির্বাচনে উৎসাহী হবেন। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উপনির্বাচনে দেখা গেল যে, প্রতীক ছাড়া যদি বিএনপির প্রার্থী নির্বাচন করেন তখন তাকে আওয়ামী লীগ থেকে জিতিয়ে আনতে হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থন ছাড়া তারা অকেজো হিসেবে বিবেচিত হন। এই বাস্তবতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে কতজন স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে আসবেন, দলছুটদেরকে কিভাবে নির্বাচনের আবহের মধ্যে সম্পৃক্ত করা হবে সেটা আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

৪. অনাকাঙ্ক্ষিত প্রার্থী: এই নির্বাচনে একমাত্র উৎতাপ ছিল না হিরো আলম। হিরো আলমকে মূল ধারার রাজনীতিবিদরা অনাকাঙ্ক্ষিত প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু যদি প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ না করে তাহলে সেক্ষেত্রে হিরো আলমের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত প্রার্থীদের দাপট বাড়বে এবং সেটি রাজনীতির ওপর একটি অনাস্থা তৈরি করতে পারে বলে আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছেন।

৫. আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: এই উপনির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে তেমন সমাদৃত হয়নি। ফলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যদি প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ না করে তাহলে সেটি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সেটাও আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। 

তবে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন যে, এই পরিস্থিতি থাকবে না। জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপনির্বাচন এক বিষয় নয়। এবার উপনির্বাচন আগ্রহী ছিল। কারণ এই উপনির্বাচনে যারা বিজয়ী হবেন তাদের এক বছরেরও কম সময় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এরকম বাস্তবতায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত বিএনপি আসবে এবং বিএনপি না এলেও নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আওয়ামী লীগের অনেকেই আশা করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭