এডিটর’স মাইন্ড

যুক্তরাষ্ট্রই সরকারের একমাত্র মাথাব্যথা


প্রকাশ: 03/02/2023


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের জন্য একদিকে যেমন নিজেদের দলকে প্রস্তুত করছে অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকসংখ্যক রাজনৈতিক দল যেন অংশগ্রহণ করে সেটিও নিশ্চিত করতে চাইছে। তবে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আশা বা বিএনপিকে ছাড় দিয়ে আগামী নির্বাচনের মাঠে যুক্ত করার কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা এখনও নেই। যদিও পর্দার আড়ালে বিএনপির সঙ্গে এক ধরনের সমঝোতা হচ্ছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে ক্ষেত্রে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। বিএনপি যেমন বলছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না, ঠিক তেমনি ভাবে আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন হতে পারে না। যা কিছু হবে সংবিধানের আওতায় হবে।

প্রধানমন্ত্রী ১ ফেব্রুয়ারি বই মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছেন যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানলে, অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনলে সংবিধান অশুদ্ধ হবে। তার এই বক্তব্যের পর থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, আওয়ামী লীগ সরকার কোনো অবস্থাতেই বিএনপির মূল দাবি অর্থাৎ নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন না। এরকম পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কি আরেকটি একতরফা নির্বাচনের পথে যাচ্ছে? আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই মনে করছেন যে, বিএনপি এখন রাজনীতিতে গুরুত্বহীন। আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে তিনটি কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে প্রথমত, তারা মনে করছে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি আন্দোলনের অংশ হিসেবে এবং সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে গ্রহণ করবে। এর ফলে আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক হবে এবং বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে। এটিই আওয়ামী লীগের প্রথম বিকল্প।

দ্বিতীয়ত বিকল্পে আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন বর্জন করেও তারপরও বিএনপির মধ্যে নির্বাচনে ইচ্ছুক বহু প্রার্থী রয়েছে তারা আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র হলেও বা দল ভেঙে অংশগ্রহণ করবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগকে স্বাগত জানাবে। এরই একটি টেস্ট কেস হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তারকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করছে বিএনপিতে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থী রয়েছেন যাঁরা তাদের নিজ নির্বাচনী এলাকা ধরে রাখার জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। ফলে শেষ পর্যন্ত যদি দলগতভাবে বিএনপির একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে আওয়ামী লীগ মনে করছে। 

আওয়ামী লীগ সরকারের সামনে তৃতীয় বিকল্প হল বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি ২০১৪ পথে যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না এই ব্যাপারে অটল অবস্থানে থাকে সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তাদেরকে ছাড় দিয়ে এবং প্রত্যেকের একক অবস্থান থেকে নির্বাচন করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করবে। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, বিভিন্ন ইসলামী দল সহ আরও কিছু রাজনৈতিক দলকে নিয়ে তারা একটি নির্বাচন করবে এবং এরকম নির্বাচন এবং অংশগ্রহণমূলক হবে বলে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। কিন্তু এই তিন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ সুষ্ঠু করার ব্যাপারে তাদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। এমনকি বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ  না করে সেই নির্বাচন কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটি নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশ্ন রয়েছে।

অতীতে দেখা গেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত উপমহাদেশের বিষয়ে ভারতের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল থাকে। কিন্তু এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশের ব্যাপারে আলাদা এজেন্ডা রয়েছে বলে কোনো কোনো কূটনৈতিক মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, নির্বাচনে যদি শেষ পর্যন্ত বিএনপি অংশগ্রহণ না করে এবং নির্বাচন যদি বিশ্বাসযোগ্য না হয় সেক্ষেত্রে তারা এই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে স্বীকৃতির নাও দিতে পারে। বিভিন্ন কূটনীতিক মেরুকরণ চলছে নির্বাচনকে ঘিরে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই এখানে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে বলে একাধিক মহল মনে করছেন। তাদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন যেভাবে করতে চায় সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা এখনও যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি হবে তার ওপর নির্ভর করছে পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকা। কাজে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে বাদ দিয়ে বা খন্ডিত বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে সেটাই দেখার বিষয়। দফায় দফায় মার্কিন প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ করছেন এবং তারা মূলত নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। সর্বশেষ ডোনাল্ড লু’র সফরের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়েছে বলে অনেক কূটনীতিক মনে করছেন। তাই বিএনপিকে ছাড়া আগামী নির্বাচনের পথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান বাধা হলো এখন যুক্তরাষ্ট্র।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭