ইনসাইড ইকোনমি

ব্যাংকিং খাতে আইএমএফকে দেওয়া সরকারের যে প্রতিশ্রুতি


প্রকাশ: 03/02/2023


Thumbnail

ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে বেশকিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত অন্যতম। বাংলাদেশ তার প্রতিশ্রুতিতে বলেছে, ২০২৬ সালের মধ্যে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের মধ্যে ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হচ্ছে, যেখানে মূলধন পর্যাপ্ততার হার ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের পক্ষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এই প্রতিশ্রুতি দেন। বিভিন্ন খাতে নানা রকম শর্ত পূরণের লক্ষ্য ঠিক করে দিয়ে আইএমএফ গত সোমবার ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই ঋণের প্রথম কিস্তি বাংলাদেশ পেয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। প্রথম কিস্তির পরিমাণ ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের তিন দিনের মাথায় সংস্থাটি প্রথম কিস্তি ছাড় করে।

রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, বিডিবিএল—এই ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণের গড় হার ২৮ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

এদিকে গত জুলাইয়ে আইএমএফের কাছে ঋণ প্রস্তাব দেওয়ার পর ছয় মাস ধরে খেলাপি ঋণ কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য সরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর খেলাপি ঋণ কমানোর লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছে। আবার বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোতে সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক বসিয়েছে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ কমাতে নীতিছাড়ও দিয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কাগজে–কলমে খেলাপি ঋণ না কমিয়ে নগদ আদায় করতে হবে। তাহলেই এই খাতের প্রকৃত উন্নয়ন হবে। নতুন করে যেসব ঋণ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে যাচাই–বাছাই করে দিতে হবে।

এদিকে আইএমএফকে বাংলাদেশ আরও বলেছে, ব্যাংকের পুনঃতফসিল করা ঋণকে খেলাপি ঋণের হিসাবের আওতায় আনা হচ্ছে, যা আগামী জুনের মধ্যে কার্যকর হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনে এই তথ্য থাকবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক প্রতিবেদনে ঝুঁকি ও খেলাপি ঋণের তথ্য সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে। যেখানে পুনঃতফসিল করা ঋণের তথ্য থাকবে, যার বিপরীতে যথানিয়মে নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক খাতে  এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। ফলে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে অর্থাৎ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা।

গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। খেলাপিতে পরিণত হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। এর বাইরে বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকের ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

ইতিমধ্যে দুর্বল পাঁচ ব্যাংকে ইতিমধ্যে সমন্বয়ক বসানো হয়েছে। ব্যাংক পাঁচটি হলো এবি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক। আর আগে থেকেই পর্যবেক্ষক দেওয়া আছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, বেসিক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে।

নতুন করে অনিয়ম চিহ্নিত হওয়ায় পর্যবেক্ষক বসেছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭