ইনসাইড আর্টিকেল

সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় বাংলার ‘ভাষা আন্দোলন'


প্রকাশ: 04/02/2023


Thumbnail

ভাষা আন্দোলনের শুরু ১৯৪৮ সালে। ঢাকায় তখন প্রধান দৈনিক পত্রিকা আজাদ এবং ইংরেজি মর্নিং নিউজ। দুটিই ছিল মুসলিম লীগের সমর্থক সংবাদপত্র। ভাষা আন্দোলন, বাংলাকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক ভাষা করার জন্য ছাত্র প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর (তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন খাজা নাজিমউদ্দীন) চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর- ইত্যাদি খবর মুসলিম লীগ সমর্থক কাগজগুলোতে ছাপা হতো, কিন্তু তেমন গুরুত্ব ও সমর্থন পেতো না। বড় দুটি দৈনিকের সমর্থন ও সাহায্য না পেলেও ১৯৪৯, ১৯৫০, ১৯৫১ এই তিন বছর ভাষা আন্দোলনকে জিইয়ে রেখেছে ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে থেকে প্রকাশিত কয়েকটি সাপ্তাহিক ও মাসিক পত্রিকা।

১৯৪৮ সালে ঢাকায় ভাষা আন্দোলনের শুরুতেই দৈনিক ইত্তেহাদ এই আন্দোলনে জোরালো সমর্থন দেয়। পত্রিকাটি তখনও কলকাতা থেকে প্রকাশিত হচ্ছিল এবং আজাদের মতো, ঢাকায় স্থানান্তরিত হওয়ার অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কাগজটির ঢাকায় আসা নিষিদ্ধ করে দেন। এই কাগজের উদ্যোক্তারা ঢাকা থেকে সাপ্তাহিক হিসেবে ইত্তেহাদ প্রকাশের চেষ্টা করে। কিন্তু মুসলিম লীগ সরকারের বাধার ফলে ব্যর্থ হয়। পরে তারা সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশ করেন। এই সাপ্তাহিক ইত্তেফাক ভাষা আন্দোলনে জোরালো সমর্থন জানায়। 

ইতিহাস বলছে, পাকিস্তান সৃষ্টির আগেই ভাষা বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে। ‘বাংলা’ নাকি ‘উর্দু’- কী হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা! পাকিস্তান সৃষ্টির পর বিষয়টি পূর্ব বাংলার সবচেয়ে আলোচিত ও বিতর্কিত প্রশ্নে রূপ নেয়। এ নিয়ে সে সময়কার সংবাদপত্রগুলোতে এই ভাষা বিতর্কের মতামত ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। সংবাদপত্রগুলোতে এর পক্ষে-বিপক্ষে নানান সংবাদ, প্রবন্ধ, নিবন্ধ প্রকাশ হতে দেখা যায়। সংবাদপত্রগুলোতে এই ভাষার ইস্যুটি নিয়ে লাগাতার লেখা প্রকাশ- বিষয়টিকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। সে সময়ে দৈনিক আজাদ, দৈনিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক মিল্লাত, মাসিক সওগাত, মাসিক মোহাম্মদীতে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল।

দেশভাগের আগে পশ্চিম পাকিস্তানের নেতারা উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা- এমন মনোভাব প্রকাশ করতে থাকে। ফলে তার বিপরীতে বাংলা ভাষাভাষী সংবাদপত্রগুলো রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। এ সময় কলকাতা থেকে প্রকাশিত মুসলিম লীগ সমর্থিত পত্রিকাগুলোয় পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা নির্ধারণ প্রসঙ্গে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপা হতে দেখা যায়- যে প্রবন্ধগুলো মূলত উর্দু ভাষাকে সমর্থন করে। অন্যদিকে বাংলা ভাষার পক্ষে তখন প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করে দৈনিক ইত্তেহাদ, দৈনিক আজাদ। এই পত্রিকা দুটোতে বাংলা ভাষার সমর্থনে বেশ কিছু প্রবন্ধ ছাপা হয়। 

দেশভাগের আগে ভাষার প্রশ্নে দৈনিক আজাদে বেশ কিছু প্রবন্ধ প্রকাশিত হলেও এ ব্যাপারে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি শুরু থেকেই ছিল রহস্যঘেরা। আজাদে কখনো বাংলা ভাষার পক্ষে, কখনো বিপক্ষে বক্তব্য প্রকাশিত হতে দেখা যায়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির আগ পর্যন্ত ভাষার প্রশ্নে পত্রিকাটির কোনো সুনির্দিষ্ট অবস্থান ছিল না। ১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রে ভাষার প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দেয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তমদ্দুন মজলিসের পক্ষ থেকে ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বাংলা-না উর্দু?’- শিরোনামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। পুস্তিকায় ইত্তেহাদ সম্পাদক আবুল মনসুর আহমদের প্রবন্ধও সে সময় ছাপা হয়েছিল।

দেশভাগের প্রথম থেকেই মর্নিং নিউজ বাংলা ভাষার তীব্র বিরোধিতা করে আসছিল। ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে পত্রিকাটিতে অব্যাহতভাবে প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় ও খবর নিয়মিত প্রকাশিত হতো। ১৯৪৭ সালে ১৭ ডিসেম্বর মর্নিং নিউজের সম্পাদকীয় কলামে উর্দু-সমর্থকদের একটি তাত্ত্বিক বক্তব্যও প্রকাশিত হয়- যা বাংলা ভাষার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে লেখা। এই পত্রিকাটি সে সময় বাংলা ভাষার দাবিতে যে আন্দোলন- সে আন্দোলনের তীব্র বিরোধিতা করে।

পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে বাংলা ভাষার প্রতি পাকিস্তান সরকারের একচোখা নীতির বিষয়ে তমদ্দুন মজলিসের কয়েকজন নেতা তৎকালীন মন্ত্রী ফজলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করতে যান। মন্ত্রী এসব বিষয়কে ‘অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলে দায় এড়ান। তাঁর এই বক্তব্যের ওপর ইত্তেহাদ ‘ভুলের পুনরাবৃত্তি’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।


১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়। অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দু ও ইংরেজির সঙ্গে বাংলাকে গণপরিষদের অন্যতম ভাষা হিসেবে ব্যবহার করার দাবি তোলেন। ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি অমৃত বাজার পত্রিকা এই খবর গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গণপরিষদে খাজা নাজিমুদ্দিন বলেছিলেন, পূর্ব পাকিস্তানের অধিকাংশ অধিবাসীর মনোভাব রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুর পক্ষে। তাঁর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে ১৯৪৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদ সম্পাদকীয় প্রকাশ করে। দৈনিক আজাদ পত্রিকার সম্পাদকীয়র বক্তব্য সে সময় বাংলা ভাষার পক্ষে জোরালো সমর্থন করে। কিন্তু একই বছর মার্চ মাসে ভাষা আন্দোলনের সময় পত্রিকাটিকে সর্বতোভাবে উর্দুকেই সমর্থন করতে দেখা যায়।

সে সময়ে বেশ কয়েকটি পত্রিকা অত্যন্ত সক্রিয়ভাবে বাংলার ভাষা আন্দোলনের পক্ষে অংশগ্রহণ করে। ভাষা আন্দোলনকে সাংগঠনিক রূপ দিতে ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। সংগ্রাম পরিষদে ‘ইনসাফ’, ‘জিন্দেগী’ ও ‘দেশের দাবী’ পত্রিকা থেকে তিনজন করে প্রতিনিধি নেওয়া হয়।

১৯৪৮-৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনে সবচাইতে বেশি শক্তিশালী সমর্থন জোগায় সিলেট থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক নওবেলাল পত্রিকা। পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন তখনকার প্রগতিশীল যুব নেতা মাহমুদ আলী। নওবেলালের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায় ঢাকা থেকে প্রকাশিত তমদ্দুন মজলিসের মুখপত্র সাপ্তাহিক সৈনিক, চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত মাসিক সীমান্ত পত্রিকাটিও। এই সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুব আলম চৌধুরীই প্রথম ভাষা শহীদদের ওপর কবিতা লেখেন, আমি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি, কাঁদতে আসিনি।

পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনো ভাষা নয়। ২৪ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সমাবর্তনে একই কথার পুনরাবৃত্তি করেন তিনি। ছাত্ররা ‘না’, ‘না’ বলে প্রতিবাদ জানান। 

১৯৪৮ সালের পর বাংলা ভাষা আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হয়ে পড়ে। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানিদের বাংলা ভাষাবিরোধী ষড়যন্ত্র থেমে থাকে না। বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের চেষ্টা ছিল এই ষড়যন্ত্রের একটি রূপ। ১৯৫০ সালের ২৪ মে দৈনিক আজাদ- এ বিষয়টি নিয়ে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের খবর বিস্তারিতভাবে প্রকাশ করে।

১৯৫১ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা দিবস উপলক্ষে সংগ্রাম পরিষদের পুরোনো কমিটি পুনর্গঠন করে ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করা হয়। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি গঠন করা হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারি পূর্ব বাংলায় সাধারণ ধর্মঘটের ডাক দেয়। ২০ ফেব্রুয়ারি সরকার ৩০ দিনের জন্য শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এ পরিস্থিতিতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এসব খবরগুলো বেশ জোড়ালোভাবেই প্রকাশ করে ‘দৈনিক ইত্তেহাদ’ ‘দৈনিক আজাদ’। 

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সকালেই ছাত্রছাত্রীতে পূর্ণ হয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। তৎকালীন আমতলায় বসে সভা। ১৪৪ ধারা ভঙ্গের পক্ষে-বিপক্ষে চলে তর্ক-বিতর্ক। একপর্যায়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের ঘোষণা আসে। স্লোগান ওঠে, ‘১৪৪ ধারা ভাঙতে হবে’, ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’। হাবিবুর রহমান শেলীর নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেন একদল ছাত্রছাত্রী। এরপর দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ হয়। বিকেলে পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটে। ছাত্রজনতার ওপর নির্বিচারে গুলি করে পাকিস্তানি মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী। শহীদ হন সালাম-বরকত-রফিকসহ নাম না-জানা অনেকেই। ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গুলিবর্ষণের ঘটনার পর ভাষার প্রশ্নে আগের রহস্যের জাল ছিন্ন করে ‘দৈনিক আজাদ’। 

এদিন সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদ প্রকাশ করে বিশেষ টেলিগ্রাম। ব্যানার হেডলাইন করা হয়, ‘ছাত্রদের তাজা খুনে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত’। মুসলিম লীগ সরকার দৈনিক আজাদের এই সংখ্যা সে সময় বাজেয়াপ্ত করে। পুলিশের গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন প্রাদেশিক পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। ঘটনার প্রতিক্রিয়া নিয়ে পরবর্তী কয়েক দিন দৈনিক আজাদ প্রচুর সংবাদ ছাপে। ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সোচ্চার ভূমিকা নেয়।

মর্নিং নিউজ ছিল উর্দু ভাষার সমর্থক একটি পত্রিকা। পত্রিকাটি সে সময় ভাষা আন্দোলনের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার ও উগ্র প্রচারণা চালায়। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনাকেও তারা বিকৃত করে ২২ ফেব্রুয়ারি খবর প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ জনতা ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে অবস্থিত মর্নিং নিউজের প্রেস ও অফিস জ্বালিয়ে দেয়। বাংলা ভাষাপ্রেমী জনতার ক্ষোভের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় মর্নিং নিউজ পত্রিকার অফিস।

সংবাদ-এ কর্মরত অধিকাংশ সাংবাদিকই ছিলেন বাংলা ভাষার সমর্থক। কিন্তু মালিকানার কারণে পত্রিকাটি ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছিল। ২১ ফেব্রুয়ারির খবরও পত্রিকাটি খুব কম গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি ক্ষুব্ধ জনতা রথখোলা মোড়ে সংবাদ অফিসে হামলা চালায়। ভাষা আন্দোলনবিরোধী ভূমিকার জন্য পত্রিকাটি থেকে তরুণ সাংবাদিক মুস্তফা নূরউল ইসলাম ও ফজলে লোহানী পদত্যাগ করেন। 

আগে বাঙালি মুসলমান পরিচালিত সংবাদপত্রের নাম রাখা হতো উর্দু, ফার্সি অথবা আরবিতে। যেমন-সোলতান, তকবির, আজাদ, সওগাত ইত্যাদি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর বিশেষ করে ভাষা আন্দোলনের প্রভাবেই সম্ভবত বাঙালি মুসলমান তাদের সংবাদপত্র ও সাময়িকীর নাম বাংলায় রাখা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে ক্ষমতাসীন প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যে দৈনিক সংবাদপত্রটি প্রকাশ করেন, তার নাম রাখা হয় ‘সংবাদ’। মুসলিম লীগ সমর্থক পত্রিকা ‘দৈনিক আজাদ’ এই নামকরণের প্রতিবাদ জানান। ‘আজাদের’ সম্পাদকীয় নিবন্ধে বলা হয়, পত্রিকাটির নামকরণে হিন্দুয়ানি বাংলাকে প্রশ্রয় দেয়া হয়েছে। মুসলমানি বাংলায় পত্রিকাটির নাম রাখা উচিত ছিল ‘খবর’।

ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন খবর পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় বেশ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশিত হতো। এ কারণে পাকিস্তান সরকার ১৯৫২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি অবজারভারের প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়। সম্পাদক আবদুস সালাম ও মালিক হামিদুল হক চৌধুরীকে সে সময় গ্রেপ্তার করা হয়। 

সাপ্তাহিক সৈনিক ২১ ফেব্রুয়ারির বিশেষ সংখ্যা বের করে। পত্রিকাটি লাল কালিতে ব্যানার করে, ‘শহীদ ছাত্রদের তাজা রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত, মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলে ছাত্র সমাবেশে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণ’। ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ সৈনিক অফিস ঘেরাও করে। সম্পাদক আবদুল গফুর ও প্রকাশক প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দৈনিক মিল্লাত, দৈনিক ইনসাফ ও দৈনিক আমার দেশ। ২১ ফেব্রুয়ারির ঘটনায় দৈনিক মিল্লাত ব্যানার শিরোনাম করে: ‘রাতের আঁধারে এত লাশ যায় কোথায়?’। ঘটনার পর মিল্লাত সম্পাদক মো. মোদাব্বেরের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। ভাষা আন্দোলনে সাপ্তাহিক ইত্তেফাকও জোরালো ভূমিকা পালন করে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭