ইনসাইড গ্রাউন্ড

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব প্যারিস অলিম্পিকে


প্রকাশ: 04/02/2023


Thumbnail

ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট ২০২৪ অলিম্পিক আয়োজন হতে যাচ্ছে পৃথিবীর অর্ধেক কল্পনা আর অর্ধেক নগরী খ্যাত ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। সৌন্দর্য্যমন্ডিত এ শহরটিতে অনুষ্ঠিত হবে  বিশ্ব আসরের সবচেয়ে বড় ইভেন্টটি। যেখানে অংশগ্রহণ করবে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের ক্রীড়াবিদরা। চাকচিক্য আর ব্যতিক্রমী সব ইভেন্ট থাকায় ইউরোপ, আমেরিকা তথা এশিয়ানদের জনপ্রিয়তা এখনো রয়েছে অলিম্পিকে। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বে থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা গ্রীস অলিম্পিকের জনপ্রিয়তা কমেনি এতটুকুও।

২০২৪ অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে প্যারিসে। আর মাত্র এক বছর বাকি। কিন্তু ২০২২ সালে প্রকাশিত হয়েছে প্যারিস অলিম্পিকের  অফিসিয়াল স্লোগান। আসন্ন অলিম্পিকের অফিশিয়াল স্লোগানটি হচ্ছে ‘গেমস ওয়াইড ওপেন (Games wide open)।’ এর অর্থ কোন ম্যাচ যতক্ষণ না শেষ হচ্ছে, ক্ষীণ হলেও আশা থাকে। সার্বিক অর্থ দাঁড়ায়। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। চেষ্টা চালিয়ে যাও সফলতা আসবেই। বিশ্বব্যাপি এমন অনুপ্রেরণা মূলক বার্তা দেওয়া এক ইভেন্ট ঘিরে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। যার মূলে রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক এবং বিশ্বরাজনৈতিক সংঘাত।

২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কে অজানা নয় কেউই। কারণ কোভিড পরবর্তী বিশ্বকে প্রায় অচল করে দিয়েছিলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়ায় পড়েছে তার অর্থনৈতিক প্রভাব। অর্থনৈতিক প্রভাব ছাপিয়ে এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব গিয়ে লেগেছে আসন্ন প্যারিস অলিম্পিকে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি) জানিয়েছে, রাশিয়া ও বেলারুশের অ্যাথলিটরা 'নিরপেক্ষ অ্যাথলিট' হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে এবং কোনোভাবেই তাদের রাষ্ট্র বা তাদের দেশের অন্য কোনো সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করবে না।

আইওসির করা এমন মন্তব্যে মানতে পারছে না ইউক্রেন পন্থী দেশগুলো। কারণ ইউক্রেনের উপর আগ্রাসন চালানোয় প্যারিস অলিম্পিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো রাশিয়াকে এবং রাশিয়াকে সহযোগিতার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে বেলারুশের ক্রীড়াবিদদেরও। কিন্তু নতুন করে আইওসির এমন খবর প্রকাশে অলিম্পিক বয়কটের হুমকি দিয়েছে প্রায় ৪০ দেশের শীর্ষকর্তারা। ইতিমধ্যে আইওসির এমন খবর প্রত্যাখান করেছে পোল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, এস্তোনিয়া ও লাটভিয়া মতো দেশগুলো। এমনকি রাশিয়া অলিম্পিকে অংশ নিলে  প্যারিস অলিম্পিক বয়কট করার ও হুশিয়ারি দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদোমির জেলেনস্কি। তিনি আরও জানান রাশিয়াকে খেলার সুযোগ দেওয়া মানে সন্ত্রাসবাদকে বৈধতা দেওয়া। পোল্যান্ডের ক্রীড়া ও পর্যটনমন্ত্রী কামিল বোর্নিজুকও মনে করেন রাশিয়া অংশগ্রহণ করলে যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশগুলো প্যারিস অলিম্পিক বয়কট করবে।

 

ইউরোপ ও আমেরিকা অলিম্পিক বয়কট করলেই প্রাচীন এ ইভেন্টি হারাবে তার জৌলস। কারণ এখন পর্যন্ত এসকল দেশের ক্রীড়াবিদরায় জমিয়ে রাখে আসরটি। অর্জনের দিক থেকে সবার উপরে এই দেশগুলো।

বলা হয়ে থাকে ক্রীড়াবিদরা সকল দেশের সকল মানুষের। ক্রীড়াবিদের কোন সীমান্ত কিংবা নির্দিষ্ট কোন গন্ডি নেই। নিজস্ব জাতীয়তাবাদ থাকলেও একজন ক্রীড়াবিদ ধীরে ধীরে হয়ে উঠেন সকল দেশের। কিন্তু আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক এমন সংঘাত সরাসরি আঘাত হানছে ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে। যেটি সকল ক্রীড়াবিদের জন্যই খারাপই বটে। আইওসিও জানিয়েছে যে 'কোনো ধরনের বয়কট কেবল ক্রীড়াবিদরাই শাস্তি পাবে'। তবে সংস্থাটি বিকল্প ব্যবস্থা নিবে বলেও জানিয়েছে।

গ্রীসের নগর রাষ্ট্রের সূচনার পর থেকে যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকতো এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের সাথে। কিন্তু অলিম্পিক আয়োজনের সময়ে যুদ্ধ বিরতি ঘোষনা করা হত নগররাষ্ট্র গুলোতে। স্ব স্ব রাষ্ট্রের নাগরিকরা অলিম্পিকে নির্বিঘ্নে অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দিতেই যুদ্ধ বিরতি দেওয়া। যেখানে এ অলিম্পিকের উৎপত্তি সেখানে এমন নিয়ম থাকলেও আধুনিক রাষ্ট্রকাঠামোয় তার প্রতিফলন নেই।

যুদ্ধ যেখানে মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায় খেলাধূলা সেখানে মানুষকে বাঁচাতে অনুপ্রেরণা যোগায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দুইটাই স্তব্ধ করে দিয়েছে। অর্থনৈতিক ভাবে জনজীবন বিপর্যস্ত করেছে এখন মনোরঞ্জনের খেলাধূলোয় এসে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। খেলাধূলাকে এক রাজনৈতিক হাতিয়ারের রুপান্তর করেছে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এ ধরণের অতি জাতীয়তাবাদী সিদ্ধান্তগুলো ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারাবে বৈশ্বিক ইভেন্টগুলোতে। 

তবে ফেব্রুয়ারির দশ তারিখে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বৈঠিক রয়েছে সেখানে একটু সুন্দর মীমাংসার প্রত্যাশা আশা করায় যায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭