ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির রাজনীতি অসাংবিধানিক


প্রকাশ: 04/02/2023


Thumbnail

স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যারা ভ্রষ্ট, বিএনপিতে তাদের সমাহার- এমন মন্তব্য করেছেন মহান জাতীয় সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ‘তাদের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সজ্জন, শিক্ষিত হলেও তার যে রাজনৈতিক দর্শন, এটা পশ্চাৎমুখী। অর্থাৎ তার মধ্যে পাকিস্তানপ্রিয়তা আছে।’

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রতিবাদে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী। এ সময় বাংলাদেশের সংবিধানের চার মূলনীতিকে অস্বীকার করে বিএনপি রাজনীতি করছে বলেও অভিযোগ করেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের চার মূলনীতি শহীদের রক্তে লেখা। সেই চার মূলনীতিকে অস্বীকার করে দেশে বিএনপি রাজনীতি করছে, তিনিও (ফখরুল) সেই রাজনীতি করেন।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- বাংলাদেশের সংবিধানের এই চারটি মূলমন্ত্র। এই চার রাষ্ট্রীয় নীতির প্রশ্নে আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্রে এ চার মূলনীতির স্পষ্টত উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু জিয়াউর রহমানের হাতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে চার রাষ্ট্রীয় নীতি ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল, আওয়ামী লীগ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা সংবিধানে পুনর্বহাল করেছে। ফলে বিএনপি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমান সংবিধানের চার মূলমন্ত্রের যে লঙ্ঘন করেছিলেন, তা বর্তমান সংবিধানে এখন আর নেই। কাজেই এ কথা বলা যেতেই পারে যে, বিএনপির রাজনীতি অসাংবিধানিক। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পর খতিয়ে দেখা দরকার, রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সংবিধানের এ চার মূলনীতির প্রতিফলন কতটুকু? বাম দলগুলো যারা কখনও ক্ষমতায় যায়নি- তারাও শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবীদের একাংশ  এ চার মূলনীতির আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনার দাবিতে সোচ্চার রয়েছে। সেক্ষেত্রে ইসলামপন্থী ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীদের অবস্থান নেতিবাচক। তাদের বক্তব্য- এসব কংগ্রেসের নীতি; যা ভারত চাপিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের ওপর। এছাড়া বিএনপির কাছে দেশ পরিচালনার নীতি কেবলই একটাই- গণতন্ত্র। সেই নীতির আলোকেই রাজনীতি করছেন মির্জা ফখরুল- যা বাংলাদেশের সংবিধান পরিপন্থী।  

বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কৃষকলীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, জিয়াউর রহমান দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিএনপি গঠন করেছিলেন বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘তারা সরকারি টাকায় পার্টি গড়ে তুলেছেন। সেই পার্টি যদি সত্যিকারের ভিতের ওপর থাকতো, তাহলে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরে এরশাদ সাহেব সেখান থেকে টান মেরে লোক ভাগিয়ে নিয়ে জাতীয় পার্টি করতে পারতেন না। বিএনপি থেকে দলছুট যারা, তারা গিয়ে সেদিন জাতীয় পার্টির সৃষ্টি করেছিলেন। যে নালে জন্ম, সেই নালেই বিনাশ। যেভাবে পার্টি তৈরি করেছিল, সেভাবেই শেষ। এরশাদ সাহেব বিএনপিকে কঙ্কালসার করে দিয়েছিলেন।’

জাতীয় সংসদ উপনেতার এমন বক্তব্যকে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের একটি অংশ বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন,  ১৯৭২ সালের সংবিধানের দিকনির্দেশক চার মূলনীতি হঠাৎ করে নাজেল হয়নি, ভারত থেকেও- তা আমদানি করা হয়নি। এই নীতিগুলো আমাদের দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রামের ফসল। ১৯৪৮-৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভাষাভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে সূচনা হয়েছিল, সে আলোকেই বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়। জিয়াউর রহমান তাক করা বন্দুকের নালে ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের চার মূলমন্ত্রের সংবিধানকে ক্ষতবিক্ষত করেছিলেন। বন্দুকের নালে কোনো রাজনৈতিক দলের জন্ম হতে পারে না। বন্দুকের নালে কোনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বিশ্ব রাজনীতির ইতিহাসে আজ অবধি চোখে পড়েনি। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, পাকিস্তানি জাতীয়তার মূলে ছিল ধর্ম, যা ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। পাকিস্তানি জাতীয়তাবাদ কার্যত মুসলিম জাতীয়তাবাদ। পক্ষান্তরে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি ধর্ম নয়- ভাষা, বাংলা ভাষা। ভাষার কোনো ধর্মীয় পরিচয় নেই, তা ধর্মনিরপেক্ষ। বাংলা ভাষা হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবার মাতৃভাষা। এই আলোকেই বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতা এসেছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। কিন্তু মেজর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূলধারাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন এবং রাষ্ট্র ক্ষমতায় থেকে গণতান্ত্রিক দল প্রতিষ্ঠা করে সেই ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। যে কারণে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া পরবর্তীতে ক্ষমতায় এসে এরশাদকে দীর্ঘদিন কারাবন্দি করে রেখেছিলেন। 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করছেন, যুগে যুগে ইতিহাস তাই বলে,মীর জাফর আলীর হাতেই অপর মীর জাফর আলী খা’র মৃত্যু হয়। পলাশীর প্রান্তরে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ উদ দৌলার মৃত্যুর পর অপর এক মীর জাফরের হাতেই মীর জাফর আলী খা’র মৃত্যুর ইতিহাস জাতি প্রত্যক্ষ করেছে। বিএনপির ইতিহাসও ঠিক তেমনি। ধর্মনিরপেক্ষতার যে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা পেয়েছি, তার চার মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠা আজ সময়ের দাবি। এখন দেখার বিষয় বর্তমানে স্বাধীনতার পক্ষের যে সরকার ক্ষমতাসীন রয়েছে, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা- বাংলাদেশের সংবিধানের এই চারটি মূলমন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মির্জা ফখরুলদের অপরাজনীতির বিপক্ষে কি ধরনের পদক্ষেপ নেয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭