প্রকাশ: 04/02/2023
রাজধানী ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় শহরে একযোগে সমাবেশ করছে বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী দল ও জোটগুলো। শনিবার (৪ ফ্রেব্রুয়ারি) বিএনপি তাদের সাংগঠনিক ১০টি বিভাগীয় শহরেই বড় জমায়েত করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে জানিয়েছিল দলটির সংশ্লিষ্ট সূত্র। তারই ধারাবাহিকতায় সকাল থেকেই বিএনপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা নয়াপল্টনে জমায়েত হন। এ সময় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত রাস্তার একপাশ ভরে যায়। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশ সফল করতে ছুটে আসেন।
বেলা দুইটায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সমাবেশ শুরু হয়। ক্ষমতাসীন দলের ‘উসকানিমূলক পাল্টা’ কর্মসূচির প্রতিবাদ, বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ নিত্যপণ্যের দাম কমানো, সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে এই সমাবেশ করে বিএনপি এবং তাদের সমমনা দল ও জোট। ঢাকাসহ দেশের ৮ বিভাগে বিক্ষোভ-সমাবেশও করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটসমূহ। এরই অংশ হিসেবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতিও নেয় দলটি। সমাবেশ শেষে আসছে ১১ জানুয়ারি ইউনিয়নে ইউনিয়নে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বছরের (২০২২ সাল) ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বরের পর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোসহ ১০ দফা দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে শনিবারের (৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩) সমাবেশের দিনও হাত গুটিয়ে থাকে দলটি। বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্বের বিষয়টি জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দের কথাতেও ইতিমধ্যে স্পষ্ট হয়েছে। বিএনপি আলোচনা না করে কর্মসূচি দিলে জামায়াত তাতে অংশ নেবে না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের (বিএনপির) আলোচনার কোনো পরিকল্পনা এই মুহূর্তে নেই। বরং দূরত্ব রাখার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে জামায়াত তাদের কর্মসূচিতে এল কি এল না, সেটা নিয়ে তারা ভাবছেন না। এবার জোট বাদ দিয়ে যুগপৎ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। তবে জোট ভেঙে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা এখনও আসেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ১৯৯৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ও ইসলামী ঐক্যজোটকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠন করেছিল বিএনপি। পরে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোট ছেড়ে চলে গেলেও দলের একটি অংশ ‘বিজেপি’ নামে দল গঠন করে এই জোটে থেকে যায়। ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই জোট জয়ও পায়। কিন্তু ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে এই জামায়াত-বিএনপি-বিজেপি-ইসলামী ঐক্যজোটের ভরাডুবি হয়। এরপর বিএনপি জোটের আকার বাড়িয়ে ১৮ দলীয় এবং পরে ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই জোটের পাশাপাশি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে আরও একটি জোট গঠন করেছিল বিএনপি। কিন্তু এসব জোটে সুবিধা করতে না পেরে, গত বছরের শেষ দিকে এসে (২০২২ সাল) বিএনপির নেতৃত্বাধীন ওই ২০ দলীয় জোটও ভেঙে দেয় দলটি। ফলে ওই জোটের দলগুলো নতুন নতুন প্লাটফর্মে, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন নতুন নতুন নাম নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে।
এদিকে, ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের বিভাগীয় সমাবেশ থেকে বিএনপি ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচির ঘোষণা দেয় ২৪ ডিসেম্বর। একই দিন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠায় জামায়াত। বিজ্ঞপ্তিতে তারাও বিএনপির মতোই ১০ দফা দাবি এবং ২৪ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সব জেলায় মিছিল করার সিদ্ধান্ত জানায়। তবে সেদিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের কারণে দলটির সমালোচনার মুখে ১৩ ডিসেম্বর রাজধানীর কর্মসূচি স্থগিত করে বিএনপি। পরদিন বিজ্ঞপ্তি আসে জামায়াতেরও। তারাও ঢাকার কর্মসূচি স্থগিত করে। ২৪ ডিসেম্বর জেলায় জেলায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতও মিছিল করেছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানায় দলটি।
১৭ ডিসেম্বর বিএনপি জানায়, ঢাকার স্থগিত ‘গণমিছিল’টি হবে ৩০ ডিসেম্বর। সেটি শুরু হবে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে। পরদিন আসে জামায়াতের বিজ্ঞপ্তি, তারা বায়তুল মোকাররমে জড়ো হয়ে মিছিল বের করার ঘোষণা দেয়। ৩০ ডিসেম্বর রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে জড়ো হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সেখানে যায়নি জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। পরে মালিবাগে ঝটিকা মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় ৫ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় জামায়াতের ১৫ জনকে। এ ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকে এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে যুগপৎ কর্মসূচির ঘোষণা এসেছে চারটি। এর মধ্যে ১১ জানুয়ারি ‘অবস্থান কর্মসূচি’, ‘বিদ্যুতের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার ও ১০ দফা দাবিতে’ ১৬ জানুয়ারি ‘বিক্ষোভ সমাবেশ’ এবং ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি বাকশাল প্রতিষ্ঠার দিন ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের সমাবেশ ডাকা হয় এবং চতুর্থ কর্মসূচিটি পালিত হয় আজ শনিবার (৪ ফ্রেব্রুয়ারি, ২০২৩)। কিন্তু এসব সমাবেশে জামায়াতের দেখা নাই। বিএনপির প্রতি অভিমানেই দূরে সরে গেছে জামায়াত। কিন্তু জোট ভেঙে দেওয়ার এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। এখন দেখার বিষয় বিএনপির সাথে জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েনটা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭