লিভিং ইনসাইড

ঋতু বদলে থাকতে হবে সাবধান

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 16/02/2018


Thumbnail

শীত চলে যেতে থাকে আর গরম শুরু হতে থাকে- ঠিক এই সময়ে আবহাওয়া হঠাৎই বদলে যায়। ঋতু বদলানোর এই সময়ে সাবধানে না থাকলে সমস্যা বাড়াতে পারে বিভিন্ন রোগ। ঋতু বদলে কেন বাসা বাধে এত রোগ আর এই অবস্থা প্রতিরোধে কী করণীয় তাই জানালাম আজ:

ঋতু বদলে রোগব্যাধি কেন?
ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে মানুষ অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে হঠাৎ সেই তাপমাত্রা শরীরে খাপ খেতে পারেনা। ঋতু বদলের ফলে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন রোগজীবাণুও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে রোগব্যাধি আক্রমণ শুরু করে। শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় তারা বেশি আক্রান্ত হয়।

কী কী সমস্যা
ঋতু পরিবর্তনের সময়ে সাধারণত সব বয়সীদের মাঝে ঠাণ্ডা কাশির প্রবণতা দেখা যায়। জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথা তো সঙ্গে থাকেই। চিকেন পক্সের প্রবণতা বেশি থাকে। বয়স্কদের কাশি, বুকে ব্যথা হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া ও হামের প্রকোপ বেড়ে যায়।

শিশুদের বিশেষত কী সমস্যা হয়
দু’বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শ্বাসকষ্ট জনিত কোনো সমস্যা হলে নেবুলাইজেশনের পরে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে সারিয়ে তোলা যায় সাধারণত।

কিন্তু এর বাইরে দশ বছর বয়স পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে ঋতু পরিবর্তনের সময়ে সাধারণত কমন কোল্ড কফের সমস্যা দেখা যায়। চোখ-নাক দিয়ে পানি পড়া, কাশি, ঝিমুনি ভাব এর প্রধান লক্ষণ। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে রোটাভাইরাস থেকে ডায়ারিয়ার প্রকোপও বাড়ে। শীত থেকে গরম পড়ার এই সময়ে এই ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে।

পরিষ্কার পাত্রে না খাওয়া, নোংরা পানি ব্যবহারের জন্য ডায়রিয়া হয়। সেই সঙ্গে বমিও হতে পারে।

প্রাপ্ত বয়স্কদের রোগ
ঠান্ডা বাতাসের ফলে পঞ্চাশোর্ধ্ব পুরুষ ও মহিলাদের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ঠান্ডা বাতাস ছাড়াও ধুলো, ধোঁয়া থেকে হাঁপানি হতে পারে। শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে এ সময়ে বাতাসে ধূলিকণার পরিমাণ বেশি থাকে, বায়ুদূষণও বেশি হয়। যাদের অ্যাজমা বা হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের এ সময়ে খুব সাবথান থাকতে হয়।
আর সাধারণ হাঁচি,কাশি ও জ্বরের সমস্যা তো রয়েছেই। এ থেকে বাচতে অ্যান্টবায়োটিক বা অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধ খেয়ে ফেলা মোটেই ঠিক না। আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।

হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে করণীয়



প্রথমেই এড়িয়ে চলতে হবে ধুলো ময়লা আর ঠাণ্ডা বাতাস। এক্ষেত্রে বাইরে বের হতে গেলে পলিউসন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। বয়স্কদের অ্যাজমা থাকলে ইনহেলার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে। তবে অবস্থা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। `ডেরিফাইলিন ডেকাড্রন` ইঞ্জেকশন এক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী।

হাঁপানি রোগীদের ধুলো, ধোঁয়া থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকতে হবে। এ ছাড়াও গরম পোশাক পরা, ঈষদুষ্ণ পানিতে গোসল করা ভালো। ঠাণ্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। রাতে বা ভোরের দিকে বাইরে না বের হওয়াই ভালো। যাদের রাত জাগার অভ্যাস, সেটাও বদলে ফেলা উচিৎ। বেশি রাত জাগার অভ্যাসও বদলাতে হবে।

শরীরের ব্যথা বেড়ে যায়
যাদের বাত বা আর্থ্রারাইটিস আছে তাঁদের শীতের শুরু থেকেই ব্যথা বাড়তে শুরু করে। স্পন্ডিলাইটিসের কারণে ঘাড়ের ব্যথাও বাড়তে পারে। হাঁটুর ব্যথা প্রতিরোধে দিনে দুইবার করে ‘কোয়ার্ডিশেপস এক্সারসাইজ’ করতে হবে। ভালো করে বসে এক পা সোজা করে ১০ সেকেন্ড রাখার পরে ধীরে ধীরে তা নামিয়ে আরেক পা একই ভাবে ১০ সেকেন্ড সামনের দিকে সোজা করে রাখতে হবে। এতে পেশিতে প্রয়োজনীয় চাপ পড়ে।

শীতে পেটের সমস্যা থেকে মুক্তি
ঋতু বদলের সময়ে রাস্তার এবং বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভালো। রাস্তার খোলা খাবারে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার খেলে পেটের সমস্যা হবেই। পানি সবসময়ের জন্যই ফুটিয়ে খাওয়া উচিৎ। প্রাপ্তবয়স্কদের দিনে কমপক্ষে চার লিটার পানি খেতে হবে।

হৃদরোগ ঝুঁকি
লেপ বা কম্বলের তলায় অনেকেরই সোয়েটার, টুপি, মোজা পরে শোয়া অভ্যাস। বয়স্কেরা দীর্ঘদিন ধরে এ রকম করলে শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

ঠান্ডা যদি লেগেই যায়, তখন কী করণীয়
ঠান্ডা লাগলেই যে না ভেবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিঅ্যালার্জিক খেয়ে ফেলতে হবে, এমনটা নয়। আগে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

ঠান্ডা লেগে গেলে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের পাঁচ মিলিলিটার মাত্রায় অ্যাজিথ্রোমাইসিন ও প্রাপ্তবয়স্কদের অ্যামোক্সিক্লাইন দিতে হবে। দেহের ওজন ও বয়সের উপরে নির্ভর করে ওষুধের মাত্রা বাড়ানো বা কমাতে হবে। গরম পানিতে গোসল করতে হবে।

ঘরোয়া উপায়ে ঠাণ্ডা থেকে মুক্তি


চাইলে ঘরোয়া ভাবেই কিছু চিকিৎসা নেওয়া যায়। একটা পাত্রে গরম পানি নিয়ে তাতে কার্বল বা ভিক্স ফেলে তার উপরে মাথায় তোয়ালে চাপা দিয়ে দু’তিন মিনিট গরম ভাপ নিতে হবে। বুকে সর্দি বসলে বা মাথা ব্যথা করলে দিনে তিনবার এরকম করতে হবে। লবঙ্গ, আদা, লেবু, তুলসি পাতা, মিছরি ও গোলমরিচ গরম পানিতে খেলে আরাম পাওয়া যায়। খুব একটা গরম না লাগলে দিনের বেলায় ফ্যান না চালানোই ভালো।

সূত্র: আনন্দবাজার

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭