ইনসাইড থট

স্মার্ট বাংলাদেশ স্বপ্ন নয় সত্যি


প্রকাশ: 09/02/2023


Thumbnail

ভাবুন তো কেমন লাগবে আমরা আকাশে উড়ন্ত হুডখোলা গাড়িতে চড়ে হাত নাড়তে নাড়তে সকালবেলা স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে, অফিসে যাচ্ছি! পরনে আছে কোর্ট ও টাই, পরিপাটি চুল, গায়ে মাখানো সুগন্ধি। কেবল মাত্র ব্রেকফাস্ট সেরে স্মার্ট IPAD  নিয়ে ঘর থেকে বের হওয়া। নেই কোনো কালো ধোয়া কিংবা ডাস্টবিন থেকে আসা দুর্গন্ধ কিংবা কাক ও কুকুরের উচ্ছিষ্ট নিয়ে কাড়াকাড়ি। যেখানে থাকবে নির্মল বাতাস কোমল রোদ আর ফুরফুরে মেজাজ। উপরে নীলাকাশ আর নিচের গহীন সবুজ বন আর সারিসারি মনমুগ্ধকর আকাশচুম্বী ভবন! সবাই হাসি খুশি – নেই বৈষম্য। এটাই কি তবে স্মার্ট রাষ্ট্র বাংলাদেশ?

না ঠিক এরকম ইউটোপিয়া বা কল্পনার রাষ্ট্র নয় স্মার্ট বাংলাদেশ। অবশ্যই সেখানে আছে আনন্দ আর আনন্দ, অবশ্যই সেখানে বৈষম্য গ্রহণযোগ্য নয় তবে আছে সকলের মতামতের মূল্য। আমরা প্রতি মুহূর্তেই সরকারি সিদ্ধান্তে মতামত দিতে পারবো একটি শক্তিশালী সাইবার নেটওয়ার্কে থেকে। অর্থাৎ আমাদের সরকার হবে কত বেশি মানুষের কথার মূল্য দেয়া যায় সেই ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। নাগরিকদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এমনি একটি পর্যায়ে উন্নীত করা যাতে তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংযুক্ত হতে উদ্দীপ্ত হবে। অর্থাৎ, নলেজ নেশন গড়া হবে স্মার্ট বাংলাদেশের শিক্ষানীতি।

নাগরিকদের শিক্ষার মান এমন পর্যায়ে উন্নীত হবে যে সে হবে বিশ্বমান বসকল প্রকার সংকীর্ণতা অতিক্রম করে। সৃজনশীলতাকে মূল্যায়ন করা হবে এবং সৃজনশীল নাগরিক সৃষ্টিতে জ্ঞানের রাজ্যে যাতে বিচরণ করতে কোনো প্রকার বাধা অনুভব না করে সেজন্য বিশ্ব জ্ঞানভাণ্ডারে থাকে অবারিত প্রবেশাধিকার। সেখানে এমন ব্যক্তি নেতৃত্ব থাকবে সকল প্রকার সমালোচনাকে সানন্দে গ্রহণ করে-একটি ভুবন বিজয়ী মুশকি হাসি দিয়ে নাগরিকের আকাংখা পূরণ করবেন যেমন বাবা মা সন্তানকে চমকে দিতে প্রিয় জিনিসটি বিছানায় মাথার পাশে ঘুমোনোর সময় রেখে দেন যাতে সন্তান জেগে উঠে আনন্দে একটি হাসি দেয় - আর বলে তোম জিয়ো হাজার সাল।

আসলে স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কল্পনার ফানুস উড়ানো নয় – বাস্তবায়নযোগ্য একটি অর্থনীতি, সমাজব্যবস্থা, পরিবেশ, বাসোপযোগী একটি পৃথিবী,  এবং সুশাসন।

Georgios Ouzounis আমাদেরকে একটি স্মার্টসিটির রূপরেখা দিয়েছেন। সেখানে তিনি স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট পিপল, স্মার্ট এনভায়রনমেন্ট, স্মার্ট গভর্নেন্স, স্মার্ট মবিলিটি, এবং স্মার্ট লিভিং সম্পর্কে একটি চিত্র দিয়েছেন। স্মার্ট ইকোনমি বা অর্থিনীতি বলতে তিনি ওইরকম একটি অর্থনীতির যেখানে থাকবে প্রতিযোগিতা, উদ্ভাবনী প্রেরণা, শিল্পোদ্যোগ, অর্থনৈতিক ইমেজ ও ট্রেডমার্কস, উৎপাদনশীলতা, শ্রমবাজারে নমনীয়তা, আন্তর্জাতিক সন্নিবেশ, এবং রূপান্তরের সক্ষমতা।

Georgios Ouzounis মনে করেন স্মার্টনেস পরিমাপ হবে শিক্ষা দিয়ে। দেখা হবে একজন ব্যক্তি কি পরিমাণ সময় জ্ঞানচর্চায় জীবনের মূল্যবান সময় পার করেছেন। স্মার্ট রাষ্ট্রের বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, বর্ণের মানুষ মিলেমিশে সৌহার্দ সম্পর্ক বজায় রেখে বসবাস করবে। একদিকে থাকবে সৃজনশীলতা অন্যদিকে থাকবে নমনীয়তা। সমাজ জীবনে স্মার্ট নাগরিক কেবল নির্বাক তাকিয়ে দেখবেনা বরং তার থাকবে সক্রিয় অংশগ্রহণ। মুক্তমনের মানুষ হবেন বিশ্বমানব।

স্মার্ট গভর্নেন্স বলতে Georgios Ouzounis অংশীজনের অর্থ পূর্ণ অংশগ্রহণকে বোঝাতে চেয়েছেন। সেজন্য তাদের থাকবে তথ্যের ভাণ্ডারে অবারিত অনুপ্রবেশের সুযোগ ও আকাংখা। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা হবে স্মার্ট গভর্নেন্স এর অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য।

স্মার্ট মবিলিটির অন্যতম দিক একটি সুপরিকল্পিত যোগাযোগ ব্যবস্থা। অর্থাৎ আপনার বাসা থেকে যাত্রা করে আপনার গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় অপচয় হবেনা। যানজটে বসে নিজের মাথার চুল ছিড়বেননা।বরং সারা শহরে, দেশজুড়ে থাকবে গৌরবের মেট্রোরেল। আন্তর্জাতিক গন্তব্যে যেতে থাকবে সহজ পদ্ধতি। নেই বিমানবন্দরের ঝক্কি ঝামেলা। থাকবে ই-পাসপোর্ট, ই-ভিসা।

স্মার্ট এনভায়রনমেন্ট মানে আকর্ষণীয় সবুজ শ্যামল প্রকৃতির বাংলাদেশ, টেকসই সম্পদ ব্যবস্থাপনা, দূষণমুক্ত বায়ু ও পরিবেশ। থাকবে পরিবেশ সুরক্ষার সর্বোচ চেষ্টা ও সংকল্প।

Georgios Ouzounis স্মার্ট লিভিং মানে গুণগতভাবে উন্নত জীবনযাপনের সুযোগ সৃষ্টি ও তাকে কাজে লাগানোকে বোঝাতে চেয়েছেন। ব্যক্তির নিরাপত্তা হবে সর্বোচ প্রতিস্রুতি, উঁচু মানের ঘরবাড়ি, নিকট সন্নিকটে ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা ও পরিবেশ। উঁচু মানের স্বাস্থ্যসেবা হবে শহর-গ্রামে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী হবে মজবুত। উপরে বর্ণিত বৈশিষ্ট্য থেকে আরও নতুন ও অবাক করা প্রযুক্তি দিয়ে গড়া হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।

স্মার্ট বাংলাদেশ সম্পর্কিত মোটাদাগের এই শব্দগুলোকে বিস্তৃত ঘটালে এক বিশাল মানচিত্র/রূপকল্প আমাদের চোখের সমানে ভেসে উঠবে। স্মার্ট বাংলাদেশ অঙ্কুরিত হতে শুরু করেছে মাত্র মেট্রোরেল -পদ্মা –মধুমতি সেতু আর ডিজিটাল বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে। আমরা এখন আছি অনুভূমিক উন্নয়নের পর্যায়ে। স্মার্ট বাংলাদেশ হলে সেই উন্নয়ন হবে উলম্ব ও অনুভূমিক উন্নয়নের এক সংযোগ যা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার বাস্তব রূপ।

স্মার্ট বাংলাদেশ থাকবে না জাহাজ ঘাটের কুলি কিংবা ক্যাম্পাসের টোকাই। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে লাগবে শক্তিশালী নেতৃত্ব। অনেকটা মৌমাছির মতো ফোটা ফোটা মধু সংগ্রহ করে সম্পদের ভান্ডার তৈরী করা। এই মধু সেই মধু নয়-এই মধু হলো জ্ঞান। আমাদের জ্ঞান ভান্ডার যত সমৃদ্ধ হবে ততই আমরা উন্নত হবো। আমরা তখন রোবট – কৃত্রিম মেধাকে অর্জন ও কাজে লাগাতে পারবো। কারণ স্মার্ট বাংলাদেশের চালিকা শক্তি হবে কৃত্রিম মেধা ও প্রাকৃতিক মেধার এক সম্মানিত রূপ। অনেকটা হীরের মতো যেখানে মানুষের মেধা প্রতিফলিত হবে যন্ত্রের মাঝে। তবে আমাদের সৃষ্ট যন্ত্র চিন্তাও করতে সক্ষম হবে। যান্ত্রিক জীবন নয় অবারিত স্বাধীনতার চাবি স্মার্ট বাংলাদেশ।

স্মার্ট বাংলাদেশ অভিযাত্রার আহবান বন্দে আলী মিয়ার "যাবে তুমি ভাই যাবে মোর সাথে আমাদের ছোট গাঁয়ে" নয়; আমরা এবার যাত্রা শুরু করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ অর্জনের যেখানে থাকবে না গণতন্ত্রের কান্না, শৃংখলিত বাক স্বাধীনতা, কিংবা দারিদ্র, অনাহার, কালোধোঁয়া, বিষাক্ত বাতাস। স্মার্ট বাংলাদেশ এক বৈষম্যহীন সোনার বাংলা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭