ইনসাইড গ্রাউন্ড

নারী ফুটবল: বাংলাদেশের ফুটবলের পুনর্জাগরণ


প্রকাশ: 09/02/2023


Thumbnail

একটা সময়ে ফুটবলে বাংলাদেশের নামটা উচ্চারিত হতো সমীহের সাথে। এশিয়ার ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে বিবেচিত হতো বাংলাদেশ। তবে সময়ের সাথে সাথে রং হারিয়েছে ফুটবল, হয়েছে মলিন ও বিবর্ণ। ক্রিকেটের ভীড়ে ফুটবল এখন অনেকটাই দৃশ্যপটের আড়ালে। একের পর এক ব্যর্থতায় ফুটবল একদিকে যেমন মান হারিয়েছে, তেমনি সাংগঠিক দুর্বলতা ও সঠিক পরিকল্পনার অভাবে শুধু পেছনেই হেঁটেছে বাংলাদেশের ফুটবল। এমন দমবন্ধ করা সময়ে ফুটবলে খানিকটা স্বস্তির বাতাস এসেছে গত কয়েক বছরে। তবে সেটা পুরুষদের ফুটবলে নয়। সাবিনা-রুপনা-শামসুন্নাহারদের হাত ধরে সেই সাফল্য পেয়েছে নারীদের ফুটবল। পুরুষরা যেখানে ব্যর্থতার ঘেরাটোপে আবদ্ধ, সেখানেই উল্টো স্রোতে ভেসে একের পর এক সাফল্য লিখে চলেছেন নারী ফুটবলাররা।

হারিয়ে যাওয়া সে সোনালী দিন না হলেও, মৃতপ্রায় ফুটবলে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে নারীদের ফুটবল দিয়ে। বয়সভিত্তিক কিংবা জাতীয় দল নারীরা নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন ধারাবাহিকতার সাথে। ২০০৫ সালে পাকিস্তানের করাচিতে অনুষ্ঠিত হওয়া সাফ ফুটবলে শেষবার ফাইনালে খেলেছিলো বাংলাদেশ। সবশেষ শিরোপা জিতেছিলো ২০০৩ সালে। এরপরের গল্পটা শুধুই হতাশার। প্রতিটি আসরেই নতুন করে ব্যর্থতার গল্পই ফিরে এসে বারবার। হাল সময়ে সে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন জামাল ভূইয়া-তপু বর্মণরা। তবে নতুন জাগরণের গল্প লিখেছেন সাবিনা-কৃষ্ণা রানীরা। তাদের অনুপ্রেরণায় এবং কঠোর পরিশ্রমে সে জয়যাত্রা এগিয়ে নিচ্ছে বয়সভিত্তিক দলগুলোও। আর একথাটি যে মিথ্যে নয়, সেটির প্রমাণ নারী ফুটবলারদের মাঠের পারফরম্যান্স।

২০১৭ সালে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতার শুরু হয় সাফে। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের এই টুর্নামেন্টের সবগুলো ফাইনালেই খেলেছে বাংলাদেশ। অনূর্ধ্ব-১৫ নারী সাফের উদ্বোধনী আসরে ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের খেতাব জিতেছিলো বাংলাদেশ। এরপর টানা দুটি আসরে ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দুইবারই হেরেছে ভূটানের কাছে। ২০২২ সালে নেপালের সাথে ১-১ গোলে ড্র করায় রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে।

২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ নারী সাফ দলও উদ্বোধনী আসরের শিরোপা এনে দিয়েছিলো বাংলাদেশকে। সবশেষ ২০২২ সালে এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠলেও অধরা থেকে গেছে তাদের শিরোপা স্বপ্ন। ভারতে অনুষ্ঠিত সে টুর্নামেন্টটি লিগভিত্তিক হওয়ায়, জামশেদপুরে অনুষ্ঠিত সে ম্যাচে ভারতকে ১-০ গোলে জিতলেও, গোলগড়ে পিছিয়ে থাকায় শিরোপা উল্লাসে মেতেছিলো স্বাগতিকরা। ২০২১ সালে সে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ।

সাম্প্রতিক সময়ে বড়দের সাফেও দাপট দেখিয়ে আসছে বাংলাদেশ। প্রথমবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছিলো ২০১৭ সালে। তবে প্রথম শিরোপার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০২২ সাল পর্যন্ত। নেপালের দশরথ রঙ্গশালায় স্বাগতিকদের ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার নারী সাফের শিরোপা জেতে সাবিনা-রুপনা চাকমারা। নারীদের ফুটবলে যা সর্বোচ্চ সাফল্য। বড়দের দেখানো সে পথেই হাঁটছে ছোটরা। 

সেই দলের অন্যতম সদস্য শামসুন্নাহার জুনিয়র এবার অনূর্ধ্ব-২০ দলের অধিনায়ক। আছেন গোলপোস্টের নিচে ভরসার প্রতীক হয়ে আছেন সবশেষ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেরা গোলরক্ষকের পুরষ্কার জেতা রুপনা চাকমা। নাসরিন আক্তার, সুরমা জান্নাত, আফঈদা খন্দকার সামলাচ্ছেন রক্ষণভাগ। গোলাম রব্বানী ছোটনের মাঝমাঠের কান্ডারি স্বপ্না রানী, আইরিন খাতুন, ইতি খাতুন ও উন্নতি খাতুন। আর আক্রমণভাগের ত্রিফলা শামসুন্নাহার, আকলিমা খাতুন ও শাহেদা আক্তার। নারীদের ফুটবলে আরো একটি অর্জন থেকে হাতছোঁয়া দুরত্বে বাংলাদেশ। আরেকটি সাফল্যগাঁথা রচনার অপেক্ষায় সকলে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭