এডিটর’স মাইন্ড

বাংলাদেশের নির্বাচন: ভারত কি চায়?


প্রকাশ: 10/02/2023


Thumbnail

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়ে গেছে। চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতেই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচন ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে নানা বিধ তৎপরতা চলছে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ দেখতে চায়। এই নির্বাচন যেন অংশগ্রহণ মূলক হয় সে ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এরকম বাস্তবতায় আগামী নির্বাচন কঠিন হবে বলে উল্লেখ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা যেটি-ই চান না কেন বাংলাদেশের নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের চাওয়াটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপরই নির্ভরশীল থাকবে বলেই মনে করেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাই বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারত কি চায় সেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়। এরপর থেকে টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ কি এবার টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসতে পারবে নাকি ক্ষমতার রদবদল হবে- সেটি এখন বড় একটা প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে। আর এই নির্বাচনে জনগণের ভোট যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আন্তর্জাতিক মহলে নানা বিন্যাস ও মেরুকরণও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

ভারতের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সুসম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। ২০০৮ এর নির্বাচনের পর থেকেই ভারত এবং বাংলাদেশ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্যাগুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য নিরন্তর ভাবে কাজ করছে এবং দু দেশই সম্পর্কে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। কিছু কিছু বিষয় তিক্ততা এবং অস্বস্তি থাকার পরও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এখন বিশ্বস্ততার নিবিড় বন্ধনে আবদ্ধ। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচনে ভারত কি চায়? বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের মধ্যে ইতিমধ্যে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। এসব আলোচনায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে সামনে চলে এসেছে। আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ভারতের সুস্পষ্ট কিছু প্রত্যাশা এবং চাওয়া-পাওয়া আছে বলেও ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং নেতৃবৃন্দের আলোচনায় বেরিয়ে এসেছে। ভারত বাংলাদেশে কী চায়?

১. অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন: ভারত আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ দেখতে চায় এবং জনগণের ভোটাধিকার যেন নিশ্চিত হয় সেটি নিশ্চিত করতে চায়। তবে ভারত এটিও বলে যে, বাংলাদেশের নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের সব ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। ভারত এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবে মনে করে।

২. বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: এই নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারাই যেন বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যায়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যে মাত্রায় উপনীত হয়েছে সেই জায়গা থেকে আর যেন পেছন যাত্রা না হয়, সম্পর্ক যেন এগিয়ে যায় এটা ভারতের আরেকটি প্রত্যাশা। 

৩. বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমন: ভারত চায় বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা যেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বর্তমান সরকারের অবস্থান অব্যাহত রাখে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের যেন কোনোভাবেই আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেওয়া হয় এবং তাদের ব্যাপারে যে শূন্যতা নীতি সরকার এখন অনুসরণ করছে সেটি অব্যাহত থাকে। 

৪. বাণিজ্যিক সম্পর্ক: ভারত চায় আগামী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাদের সঙ্গে যেন বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকে। বিশেষ করে দুই দেশ গত কিছুদিন ধরে যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্পর্ক উন্নয়ন করেছে সেই ধারা যেন অব্যাহত থাকে। সেটি ভারতের প্রত্যাশা। 

৫. চীনের সাথে সম্পর্ক: আগামী নির্বাচনে যারাই জয়ী হোক না কেন তারা যেন চীনের সাথে সংযত এবং এবং সীমিত আকারে সম্পর্ক বজায় রাখে সেটির ব্যাপারে ভারত নিশ্চিত হতে চায়। চীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অংশীদার। বর্তমানে যে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে তার অধিকাংশই চীনের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে। এরকম বাস্তবতা আগামী নির্বাচনে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা যেন চীন নির্ভর কূটনীতির দিকে আরও বেশি অগ্রসর না হয় সেটি তারা নিশ্চিত করতে চায়।

৬. জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ দমন: বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন তারা যেন সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান অব্যাহত রাখে এবং কোনভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী এবং উগ্রগোষ্ঠীকে প্রশ্রয় না দেয় তা নিশ্চিত করতে চায়। আর এই চাওয়া পাওয়ার হিসেব মিলিয়ে ভারত আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান গ্রহণ করবে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭