ইনসাইড আর্টিকেল

লক্ষ্মীপুরে বিলুপ্তির পথে শোভা বর্ধনকারী শিমুল গাছ


প্রকাশ: 11/02/2023


Thumbnail

কালের বিবর্তনে সারা দেশের ন্যায় লক্ষ্মীপুর  উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার শোভা বর্ধনকারী শিমুল গাছ। মনোমুগ্ধকর শিমুল ফুল নিয়ে রচিত হয়েছে গান, কবিতা ও গল্প। শিমুল গাছে বসন্তের শুরুতেই ফুল ফোটে। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে গিয়ে বাতাসে আপনা আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই এর জন্ম হয়। প্রাকৃতিকভাবেই শিমুল গাছ বেড়ে উঠে।

গাছে গাছে জেগে উঠেছে সবুজ পাতা, মুকুল আর ফুল দেখে বোঝা যায় শীত বিদায় নিয়ে আবার এলো ফাগুন, এলো বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতিকে রাঙিয়ে ফুটেছে নয়নাভিরাম শিমুল ফুলের মেলা। কিন্তু কালের বিবর্তনে আগুন ঝরা ফাগুনে চোখ ধাঁধানো গাঢ় লাল রঙের অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ এখন বিলুপ্ত প্রায়।

বর্তমান সময়ের অনেক শিশুই চেনে না শিমুল ফুল। নিকট অতীতে গ্রামের মানুষ প্রাকৃতিকভাবে গজিয়ে উঠা শিমুলের  গাছের যত্ন আমরা কেউ নেই না। পালের হাটের গণমাধ্যমকর্মী কামরুলের সাথে কথা বলে জানা যাই এলাকার শিশু-কিশরা এ শিমুল গাছের ফুলের কলি নিয়ে ভিতরে কাঠি ঢুকিয়ে লাটিম বানিয়ে সারাদিন মাতিয়ে রাখতো নিজেদেরকে।  শিমুল গাছ কমে যাওয়ার ফলে স্বাস্থ্যসম্মত তুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ।

অপরদিকে শিমুল তুলা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারতো কৃষক। এ ছাড়াও শিমুল গাছ গ্রামাঞ্চলে ঔষধি গাছ হিসাবে সুপরিচিত। শিমুলের মূল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু উপকারী এই গাছটি বিলুপ্তির পথে। শিমুল গাছের চারা রোপণে কৃষকের উদাসীনতার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি কোনো উদ্যোগ না থাকাকে বিলুপ্তির কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ২০ বছর আগেও লক্ষ্মীপুর  রামগতি  উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে বাড়ির আনাচে কানাচে চোখে পড়ত অসংখ্য শিমুল গাছ। আর এসব গাছে ফুটন্ত শিমুল ফুলের সমারোহই জানান, দিত প্রাকৃতিতে বসন্ত এসেছে। প্রস্ফুটিত ফুলে পুরো এলাকা এক অপরূপ রূপে সজ্জিত হয়ে উঠতো।

বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাসে  তুলা ওড়ার মৌসুম। শিমুলের ডালে ডালে শিমুল মোচা বা খোলস আপনি আপনি  ফোটে যায়। মাতাল হাওয়ায় উড়ে যায় ধবল শিমুল তুলা। আর কয়েক মাস পরে  শিমুল তুলা ওড়ার দিন। শিমুল তুলার অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। এ তুলা দিয়ে আরামদায়ক বালিশ, শীতের লেপ, তোষক, নরোম গদিসহ শিশুদের নানা খেলনা পুতুল ও শোপিস তৈরি হয়। এ ছাড়া তুলা গাছের নরোম কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি, জ্বালানি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ফলে শিমুল তুলা ও কাঠের একটা অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। যদিও লক্ষ্মীপুরের উপকূলে শিমুল গাছের কোন পরিকল্পিত বাণিজ্যিক আবাদ নেই। গ্রামের পথের পাশে অথবা গৃহস্থ বাড়ির আনাচে কানাচে শিমুল গাছ এখনও প্রকৃতিগতভাবে জন্মে। কেউ আবার শখেও দুই একটি শিমুল গাছ লাগান।

লক্ষ্মীপুর ৫ নং পার্বতীনগর ইউনিয়ন   পরিষদের ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান মাইনুদ্দিন ময়ূর   বলেন, ‘একটি বড় ধরনের গাছ থেকে তুলা বিক্রি করে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আগের তুলনায় এখন শিমুলের তুলার দাম অনেক বেড়ে গেছে। এখন এ গাছ নিধন হচ্ছে প্রতিনিয়ত।’

এক সময় বসত বাড়ি ছাড়াও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন সড়কের পাশে প্রচুর শিমুল গাছ চোখে পড়তো, কাঁটাযুক্ত বিশাল বিশাল গাছের ছায়ায় পথিক বিশ্রাম নিত। আবার এই গাছের তলায় এক সময় গ্রাম্য খেলাধুলা বা মেলার আয়োজনও করা হতো। অথচ এসব আজ বিলুপ্ত। শিমুল গাছ প্রাকৃতিক ভাবেই বেড়ে উঠে। পরিত্যক্ত ভূমিতে অনাদরে বেড়ে উঠা শিমুল গাছে ২/৩ বছরের মধ্যেই ফুল ও ফল ধরে। কিন্তু কেউই শিমূল গাছ বাণিজ্যিক ভাবে রোপণ করে না। অথচ বিভিন্ন সড়কের পাশের গাছগুলো নামমাত্র মূল্যে কিছু অসাধু চক্র টেন্ডার নিয়ে কেটে সাবাড় করছে। ফলে লক্ষ্মীপুরের সব এলাকা থেকে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭