ইনসাইড পলিটিক্স

অনির্বাচিত সরকার চায় বিএনপি?


প্রকাশ: 11/02/2023


Thumbnail

গত বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) শেষ হয়েছে জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশন। এই অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে অনির্বাচিত সরকার কখনোই ফিরবে না। সমাপনী ভাষণে যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এমন সরকার আনতে চাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে সতর্ক ও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর হবে না।’

তিনি বলেন, ‘যারা অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন দেখছেন তাদের বলবো ক্ষমতায় যাওয়ার খায়েশ থাকলে রাজনীতিতে নামুন, ভোটারদের কাছে যান, জনগণ যাকে ভোট দেবে তারা ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনোদিন হস্তক্ষেপ করবে না, করেও না। নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, এটাই হলো বাস্তবতা।’

এদিকে বিএনপি বরাবরই দাবি করে আসছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না বিএনপি। অন্যদিকে বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি। শুধুমাত্র বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সিগন্যাল পেলেই নির্বাচনের মাঠে তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেন। কিন্তু বিএনপির ভারপ্রাপ্ত  চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ফলে বিএনপির মধ্যে যেসব নেতা নির্বাচনমুখী রয়েছেন, তাদের ভেতরে একটি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। শুধুমাত্র দল থেকে লাল কার্ড খাওয়ার ভয়ে তারা কেউই প্রকাশ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে সাহস করছেন না। এরই মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কারণে বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন দল থেকে লাল কার্ড পেয়ে বহিষ্কৃত হয়েছেন। তাই কেউ সাহস করে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। 

সূত্রমতে, ২০১১ সালের ১০ মে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় প্রদান করেন। এ সময় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মৌলিক বেশ কিছু দুর্বলতা দেখিয়ে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত ৩ মাসের সরকারের উদাহরণ তুলে ধরেন। এছাড়া নির্ধারিত ৯০ দিন সময় অতিক্রম করার নজির স্থাপনের সম্ভাবনাটিও- ২০০৫ থেকে ০৮ সাল পর্যন্ত পরিচালিত, ১/১১ সরকারের ঘটনার উদাহরণ তুলে ধরেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ফলে সে সময় থেকেই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যায়।  

অন্যদিকে গতকাল শুক্রবার (১০ ফেব্রুয়ারি) যথাসময়ে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। এ সময় তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসার সম্ভাবনা আর নেই বলেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। আইনমন্ত্রী নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ পৌর মিলনায়তনে একটি গ্রন্থের মোড়ক ও পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটা দিকনির্দেশনা কিংবা কিছু নিয়মের প্রয়োজন পড়ে। সেগুলোই সংবিধানে থাকে। সংবিধান হলো একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে সংবিধান অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন নিয়ে কথা বলে কোনো লাভ নেই। নির্বাচনে কোন দল এল আর কোন দল এল না, তা দেখার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয়। তা দেখবে নির্বাচন কমিশন। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা আদালত দ্বারা অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। এ রায়ের ভিত্তিতে পঞ্চদশ সংশোধনীও করা হয়েছে। সুতরাং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসার সম্ভাবনা আর নেই বলে আমি মনে করি।’

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে সংবিধান অনুসারে বিএনপির দাবি অপ্রাসঙ্গিক। কেননা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো বিধি-বিধান বাংলাদেশের জাতীয় সংবিধানে এখন আর নেই। সুতরাং এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তবে বিএনপি কোনোদিনও ক্ষমতায় আসতে পারছে না। ক্ষমতায় আসতে হলে বিএনপিকে অবশ্যই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আসতে হবে। যদি বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে থাকে, তবে কি অনির্বাচিত সরকার চায় বিএনপি?- প্রশ্ন  রাখেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। এতে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন লাভ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলণের আন্দোলনের পটভূমিতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি ছিল সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রচলণ করা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরও জানান, ওই সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। কিন্তু সে সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রচলণের দাবি উঠলেও- তা দেয়নি বিএনপি। ফলে ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বিরোধী দলগুলোর সদস্যরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করে তীব্র এক আন্দোলন শুরু করে। শেষ পর্যন্ত আন্দোলন, সংঘাত এবং সহিংসতার ভেতর দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যায় তৎকালীন বিএনপি সরকার। এটি ছিল মূলত প্রহসনের নির্বাচন। সে সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না দিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের দিকে এগিয়েছিল বিএনপি। তবে কি এমন নির্বাচন করেই ক্ষমতায় আসতে চাইছে বিএনপি, নাকি ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির মতো অনির্বাচিত সরকার চাইছে বিএনপি? - এটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭