ইনসাইড আর্টিকেল

গরু-মহিষের গাড়ির ঐতিহ্যকে হারিয়েছে লক্ষ্মীপুর জেলা


প্রকাশ: 12/02/2023


Thumbnail

একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল।লক্ষ্মীপুর জেলা এর চলাচল কোন অংশে কম ছিলনা।   গরুর গাড়িই ছিল যোগাযোগের একমাত্র বাহন। লক্ষ্মীপুর জেলায় রামগঞ্জ, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর, চন্দ্রগঞ্জ  কালের পরিক্রমা আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি
এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জে আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না।পল্লি এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরু-মহিষের গাড়ি। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার এই গরু-মহিষের গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে এ বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরু-মহিষের গাড়ি এখন অধিকাংশ এলাকা থেকে বিলুপ্তির পথে।

দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে গরুর গাড়ি ছিল একমাত্র পরিবহন। গরুর গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ কিংবা ‘ তুমি কেমন গাড়িয়াল শুধু টানো পরের মাল, আমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে, এরকম যুগান্তকারী সব রকমের গান।

লক্ষ্মীপুর  সদর উপজেলার পার্বতীনগর  ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের  প্রবীণ ব্যক্তি মো. শাহজাহান মিয়া  ও হাজী শামসুল হক  সংবাদ সারাবেলা কে বলেন, ‘আগে আমাদের নিজেদেরও গরুর গাড়ি ছিল। সেই গাড়িতে করে কৃষি পণ্য ও হাট-বাজার থেকে বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়া করা হতো। এখন গরুর গাড়ি তেমন একটা চোখে পড়ে না।’ সাহাজান বলেন আমার বাবা মৃত নুরুজ্জামান বেপারীর দুটো গরুর গাড়ি ছিল বাবার সাথে ভোর বেলা প্রতি মঙ্গলবার ও শুক্রবার  পোদ্দারহাট যেতাম মানুষ এবং মাল নিয়ে।
কখনও বাড়িতে মাল নিয়ে ফিরতাম  সন্ধ্যার আগে অথবা পরে। 

রায়পুর পৌর  এলাকার  চরবংশী  গ্রামের গরুর গাড়ি চালক আয়াতুল  ও ইসলাম বলেন, ‘অনেক বছর থেকে এই গাড়ি চালাচ্ছি। তাই ছেড়ে দিতে মন চাচ্ছে না। গরুর গাড়ি চালাতে প্রতিদিন খরচ পরে ৬-৭শ টাকা। আর আয় হয় ১০০০-১২০০শ টাকা।  কখনো ভাড়া পাইনা অলস সময় কাটাতে হয়। এ গাড়ি চালিয়ে আসলে সংসার চালানো যায় না।’

বর্তমান যুগ হচ্ছে যান্ত্রিক যুগ। এখনকার মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য বাহন হিসেবে ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, পিকআপসহ বিভিন্ন মালবাহী গাড়ি। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটরগাড়ি, রেলগাড়ি, বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা ইত্যাদি। ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না গরুর-মহিষের গাড়ি। অথচ গরুর - মহিষের গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না।

আমাদের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল গরু আর মহিষের গাড়ি।বিশেষ করে জনপদে কৃষি ফসল বহন ও মানুষ বহনের প্রিয় বাহন ছিল দু-চাকার এই গরু আর মহিষের গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে এই বাহন এখন হারিয়ে যাচ্ছে।জেলা উপজেলার গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরু ও মহিষের গাড়ি এখন অধিকাংশ অঞ্চল থেকে বিলুপ্তির পথে। এখন এসব বাহন রূপকথার গল্পমাত্র এবং বিলুপ্ত হয়ে স্থান পেয়েছে সংবাদপত্র ও বইয়ের পাতায়। মাঝেমধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি গরু ও মহিষের গাড়ি চোখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। 

আধুনিক সভ্যতায় ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি হারিয়ে যেতে বসেছে। সে কারণে শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রামের ছেলেমেয়েরাও গরু কিংবা মহিষের গাড়ির শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়।  যুগ যুগ ধরে কৃষকের কৃষি ফসল বপন ও বহনের গুরুত্বপূর্ণ বাহন হিসেবে পরিচিত ছিল গরু আর মহিষের গাড়ি। গরু- মহিষের গাড়ি দুই চাকাবিশিষ্ট মহিষ -গরু বা বলদে দিয়ে টানা এক প্রকার বিশেষ যান। গরু- মহিষের গাড়ির চাকা গুলো শুকনো কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। গাড়ির সামনের দিকে একটি জোয়ালের সাথে দুটি গরু বা বলদ এবং মহিষ জুটি মিলে গাড়ি টেনে নিয়ে চলে।

সাধারণত চালক বসেন গাড়ির সামনের দিকে। আর পেছনে বসেন যাত্রীরা। বিভিন্ন মালপত্র বহন করা হয় গাড়ির পেছন দিকে। বিভিন্ন কৃষিজাত দ্রব্য ও ফসল বহনের কাজে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল ব্যাপক। গ্রাম বাংলায় ঐতিহ্যগতভাবে গরুর গাড়ি এক দশক আগেও যাতায়াত ও মালবহনের কাজে ব্যবহৃত হতো।
অনেক অঞ্চলে রাস্তা পাকা না থাকায় এক সময় যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল করত না। ফলে গরুর গাড়িই ছিল একমাত্র ভরসা। তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযান চলাচলের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭