ইনসাইড পলিটিক্স

জিয়ার লাশ বিতর্ক: বিএনপি-জামায়াত সম্পর্কের টানাপোড়েন!


প্রকাশ: 12/02/2023


Thumbnail

বিদ্যুৎ, গ্যাস, চাল, ডাল, তেল, আটা, লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ, খালেদা জিয়াসহ কারাবন্দিদের মুক্তি দাবি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ বিভিন্ন অজুহাতে বিএনপি একের পর এক কর্মসূচি দিলেও দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহযাত্রী জামায়াত পাশে নেই। বিএনপির সাথে জামায়াতের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে বলে জানিয়েছে একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র।

সূত্র জানায়, ২০২১ সালের আগস্টের প্রথম দিক থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাজধানীর শেরে বাংলানগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি না, তা নিয়ে যখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রশ্ন তুলেছিলেন, তখন এক বিবৃতি দিয়েছিল জামায়াত। জামায়াতের বিবৃতিতে দেশের সম্মানিত ও মহান ব্যক্তিদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক না করার আহ্বান জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি বেশ কয়েকদিন ধরে দেশের সম্মানিত ও মহান ব্যক্তিদের নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে এবং তাদের ব্যাপারে অসম্মানজনক ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশের জন্য যারা যে অঙ্গনে ভূমিকা পালন করেছেন এবং অবদান রেখেছেন, তাদের সে অবদানের প্রতি জনগণ শ্রদ্ধাশীল। সম্প্রতি যে বিষয়গুলো নিয়ে অহেতুক বিতর্ক করা হচ্ছে, তা দেশের জনগণকে মর্মাহত করেছে।

কিন্তু সহযোগী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের কাছ থেকে এমন বিবৃতি আশা করেনি বিএনপি। বিএনপি আশা করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিপক্ষে বিবৃতি দিবে সহযোগী সংগঠন জামায়াত। 

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানিয়েছিলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেক্টর কমান্ডার ছিলেন, রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। তার সেই অবদান এখন অস্বীকার করছে ক্ষমতাসীন দল। এমনকি শেরেবাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ আছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা। এই ইস্যুটি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বিবৃতি দিয়েছে, যৌক্তিক কথাও সেখানে বলেছে। কিন্তু বিবৃতিতে জিয়াউর রহমানের নামটি একবারও উল্লেখ করা হয়নি, যা বিএনপি নেতাদের অবাক করেছে। তা নিয়ে ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক। 

সে সময়কার বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেছিলেন, জামায়াতে ইসলামী তো বিএনপি করে না। জামায়াত তো ছিল মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধের শক্তি। সেজন্য বিবৃতিতে তারা তাদের নিজস্ব আঙ্গিকে বক্তব্য দিয়েছে।  

অন্যদিকে জামায়াতের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছিলেন, বিবৃতিতে কী যাবে, তা দলের শীর্ষ নেতারা ঠিক করেন। তবে জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ না করার কিছু যৌক্তিক কারণ আছে। এটি কৌশলও হতে পারে। কারণ জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের যখন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার, ফাঁসির রায় এবং তা কার্যকর করা হয়, তখন বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো ধরনের বিবৃতি পাওয়া যায়নি।

সেই থেকেই বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে ফাঁটল ধরেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাঁরা বলছেন, সম্প্রতি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও গত বছরের (২০২২ সাল) ২৪ ও ৩০ ডিসেম্বরের পর আর কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেয়নি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোসহ ১০ দফা দাবিতে বিভাগীয় শহরগুলোতে শনিবারের (৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩) সমাবেশের দিনও হাত গুটিয়ে ছিল জামায়াত। এ থেকে স্পষ্ট হয় যে, বিএনপির সাথে জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। 

অন্যদিকে বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, জামায়াতকে জোটে রাখার কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপি। বিএনপির বর্তমান দুরবস্থার জন্য এবং প্রতিবেশীসহ বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক ভালো না হওয়ার পেছনে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সঙ্গ দায়ী। তাই বিএনপিকে জামায়াত থেকে দূরে থাকার নির্দেশনাও দিয়েছেন বর্তমান বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের রাজনীতির কারণে জামায়াতকে ছাড়তে পারবে না বিএনপি। ভোটের রাজনীতির অঙ্কে জামায়াত এখনো গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু বিএনপিকে ভোট করেই ক্ষমতায় আসতে হবে, তাই নির্বাচনি অঙ্কের হিসাব করলে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা বিএনপির জন্য খুবই কঠিন কাজ। তবে জামায়াতকে দূরে রাখা বিএনপির একটি রাজনৈতিক কৌশলও হতে পারে। আবার এ-ও হতে পারে এটি জামায়াতের একটি কৌশল। আসলে এখন দেখার বিষয় হচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েন তলে তলে কত দূর?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭