ইনসাইড পলিটিক্স

রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে শেখ হাসিনা এতো গোপনীয়তা অবলম্বন করলেন কেন?


প্রকাশ: 13/02/2023


Thumbnail

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। তিনি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্থলাভিষিক্ত হবেন। আজ মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য যে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ আগামী ২৩ এপ্রিল অবসরে যাবেন। পরদিন ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করতে পারেন মো. সাহাবুদ্দিন।

এর আগে গতকাল আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নির্বাচন কমিশনে যান এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তার আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের সভায় রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করার কথা থাকলেও কোনো আলাচনা হয়নি। বরং সর্ব সম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন চূড়ান্তকরণের একক ক্ষমতা দেওয়া হয় সংসদীয় দলের নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

সংসদীয় দলের ওই সভার আগে পরে কে হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি এই নিয়ে নানামূখী আলোচনা ছিল। বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম বিভিন্ন মহলে আলোচিত হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের মধ্য থেকে কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। রাষ্ট্রপতি পদে আলোচিত হওয়ার নামগুলোর মধ্যে যার নামই ছিল। মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেজে নেওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি চমক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। 


জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নাম প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত দলের কারো কাছে নাম প্রকাশ করেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খোদ দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও জানতেন না কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি। গত বৃহস্পতিবার তিনি যখন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান তখন রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন এই নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেন দলের নেতাকর্মীরা। তখন তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে তিনটি ক্লু দিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমটি হলো, কোন এমপি বা মন্ত্রী নন, দ্বিতীয়ত, যিনি রাষ্ট্রপতি হবেন তিনি কোন আমলা নন আর তৃতীয়ত হলো, যিনি রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী আর কোন ইঙ্গিত দেন। তবে এই তিনটি ক্লুতে রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন তা বুঝতে পারেনি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

প্রশ্ন রাষ্ট্রপতি মনোনয়নে এতো গোপনীয়তা কেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি হলো শেখ হাসিনার একটি চমক। তবে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এতো গোপনীয়তা রাখার পেছেনে তিনটি কারণে কথা বলছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো। এগুলো হলো;

১. শেখ হাসিনার কৌশল: আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন এতোর গোপনীয়তার পেছনে অন্যতম কারণ হলো এটি ছিলো শেখ হাসিনার একটি কৌশল। কৌশল হলো আগেই যদি রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের নাম ঘোষণা করা হতো তাহলে দলের মধ্যে পক্ষ-বিপক্ষ দুটি গ্রুপ তৈরি হতো। কেউ কেউ হয়তো মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা বলতেন। ফলে একটি পাল্টাপাল্টি অবস্থান তৈরি আশঙ্কা ছিলো। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতো। এই বিরোধ এড়াতেই তিনি শেষ পর্যন্ত নাম গোপন রেখেছিলেন।

২. সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বিতর্ক এড়ানো: রাষ্ট্রপতি পদে মনোনীত প্রার্থীর নাম গোপন রাখার আরেকটি অন্যতম কারণ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্ক এড়ানো। কারণ এখনকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নোংরামীতে ভরে গেছে। যদি আগে থেকে রাষ্ট্রপতির নাম ঘোষণা করা হতো তাহলে দেখা যেতো যে, তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল করা হতো। তিনি নানা ধরনের কুৎসিত মন্তব্যের শিকার হতেন। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির নাম গোপন রেখেছিলেন।

৩. বিরোধী দলের আক্রমনাত্মক বক্তব্য: রাষ্ট্রপতি পদে আগে থেকে কারো নাম ঘোষণা করা হলে তিনি বিরোধী দলের মুখরোচক আক্রমণের শিকার হতেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাষ্ট্রপতি পদটি হলো সাংবিধানিক এবং রাষ্ট্রের শীর্ষ পদ। রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব এবং ঐক্যে প্রতীক তিনি। তাকে নিয়ে যেন কোন ধরনের বিতর্ক না হয় সেজন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির নাম গোপন রেখেছিলেন এবং শেষ মুর্হূতে তিনি প্রকাশ করেছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭