প্রকাশ: 14/02/2023
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বস্ত্র উৎপাদন ও বিদেশে রপ্তানির ঐতিহ্য রয়েছে। মেয়েদের
কর্মসংস্থানে নতুন দ্বার উন্মোচন করেছে পোশাক শিল্প। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে
নারীরা এসে কাজ করে। এর ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও তারা বিশেষ অবদান রাখছে। একেকটি পরিবারও
আর্থিক সচ্ছলতা ফিরে পাচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৪
ফেব্রুয়ারি) সকালে জাতীয় বস্ত্র দিবস উদযাপন ও ৬টি টেক্সটাইল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনী
অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভার্চুয়ালি
যুক্ত হন তিনি।
তিনি বলেন,
গার্মেন্টসে যারা কাজ করেন তাদের নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হবে, নতুন নতুন পণ্য উৎপাদন
করতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের পোশাক ব্যবহার করা হয়। নতুন ওই বাজার আমরা খুঁজে
বের করতে পারি। ইতোমধ্যে কিছু পাওয়া গেছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বস্ত্রখাতের অবদান অপরিসীম। আমাদের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ
অর্জিত হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। তৈরি পোশাক
খাতে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে যার ৫৩ শতাংশই নারী। পরোক্ষভাবে
প্রায় ৪ কোটিরও বেশি মানুষ এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন
ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে বস্ত্রখাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশের ৪৫.৭০ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা ২০২১ সালের
তুলনায় ২৭.৬৪ শতাংশ বেশি। ২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পোশাক রপ্তানি
১৫.৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.২২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য পোশাক
খাত থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করা। রাশিয়া-ইউক্রেন
যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই বাংলাদেশ ২০২২ সালে
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে একটি নতুন মাইলফলক অর্জন করেছে। করোনা মহামারির ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত
রাখতে সরকারের পোশাক খাতে ঘোষিত বিশেষ প্রণোদনার ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সঙ্কটেও
এ খাত এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সরকারপ্রধান
বলেন, শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন, শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ন্যূনতম
মজুরি কমিশন শক্তিশালী করা, শ্রম আইন সংশোধন ও শ্রম বিধিমালা জারির মাধ্যমে শ্রমিকদের
অধিকার সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিল্প এলাকায় ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ গঠন কর্মপরিবেশকে
করেছে নিরাপদ। সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপেরে ফলে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশের কারখানাগুলো
সবুজ কারখানার মানদণ্ডে বিশ্বে এগিয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের
হিসাব মতে শীর্ষ ১০০ গ্রিন ফ্যাক্টরির মধ্যে ৫০টিই বাংলাদেশের। আর সেরা ১০ জনের মধ্যে
আটজন এখান থেকেই এসেছেন। এই অর্জন আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। লিডারশিপ ইন এনার্জি
অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত বাংলাদেশে এখন সবুজ কারখানার সংখ্যা
এখন ১৮৭টি ।
তিনি বলেন,
বৈশ্বিক নানা কারণে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ নানা উপকরণের দাম বাড়ছে। এতে করে উৎপাদন
খরচ বাড়ছে। তবে, কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এসব খাতে ব্যয় সাশ্রয় করা সম্ভব। পাশাপাশি
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতি ইউনিট উৎপাদন খরচ সমন্বয় করতে হবে।
তিনি আরও বলেন,
আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি করতে হলে বিশ্ববাজারের সাথে ধারাবাহিকতা রেখে টেক্সটাইল পণ্যের
বৈচিত্রকরণ ও পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করতে হবে। একই সাথে, আমাদের বিদ্যমান পণ্যগুলোর
ক্ষেত্রে ‘ভ্যালু অ্যাড’ এবং দেশের রফতানি আয় বাড়াতে নতুন নতুন
বাজারের সন্ধান করতে হবে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের তালিকা খুব বেশি নয়, অনেকটা পোশাকশিল্প-নির্ভর।
আবার আমাদের রপ্তানি মূলত উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের কয়েকটি দেশ-নির্ভর। আমাদের
রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকা বৃদ্ধির অনেক সুযোগ রয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন দেশে রপ্তানির
সুযোগ তৈরি করতে হবে। এ ব্যাপারে আমি রপ্তানিকারকদের আরও উদ্যোগী হওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
আপনারা এগিয়ে আসুন, আমাদের সরকার সব ধরনের সহায়তা দেবে।
বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব আব্দুর রউফ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭