ইনসাইড থট

রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে সাংবিধানিক বিতর্ক: বিবেকহীন বুদ্ধিজীবী এবং প্রথম আলো


প্রকাশ: 14/02/2023


Thumbnail

নব নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রথম আলো বাহাস শুরু করলেন। এটি আসলে কোন আলাপ আলোচনা কিংবা জ্ঞানীদের তর্ক বিতর্কের বিষয়। গ্রামের মহিলারা যেমন চুলাচুলি করে, প্রথম আলো ঠিক সেই পর্যায়ে নেমে গেল। আজ মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) প্রথম পাতায় তারা শিরোনাম করলেন, ‘রাষ্ট্রপতি পদ লাভজনক কি না, এই প্রশ্নে বিতর্ক’। 

নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে একটি উদাহরণ দিতে হয়। তিনি আগে ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি ছিলেন, পাবনায় সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন, এসব কথা এখন সবাই জানে। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যখন বঙ্গবন্ধুকে দেশি এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীরা সপরিবারে, এমনকি ১০ বছরের শিশু রাসেলকে হত্যা করে, তখন পাবনায় বসে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু তার প্রতিবাদ সংগঠিত করতেই ২০ তারিখে তাকে আটক করে জেলে নেয়া হয় এবং ৩ বছর তিনি তার ওপর অত্যাচার করা হয়। 

বঙ্গবন্ধুর হত্যা মামলা পরিচালনা করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে মামলা পরিচালনা করা হল, এই পরিচালনা কমিটিরও তিনি আহ্বায়ক ছিলেন। তার ২০০১ সালে যখন বিএনপি নির্বাচিত হয়ে সমস্ত দেশের ওপর স্টিম রুলার চালায় সেটি নিয়েও আওয়ামী লীগ একটি ল-কমিশন করে সেখানেও তাকে আহ্বায়ক করা হয়। এভাবেই একের পর এক ধরলে দেখা যায় যে, পাবনা থেকে উঠে এসে মাটি মানুষের সাথে যোগাযোগ রেখে যে ব্যক্তি রাজনীতিতে এসেছেন সেই সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর হাতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। তিনি কিন্তু হাওরে বাওরে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে তারপর রাষ্ট্রপতির হয়েছিলেন। অনেকের ধারণা ছিল যে, এভাবে আর কেউ রাষ্ট্রপতি হবে না। কিন্তু এবার ঠিক তেমনিভাবেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক তার দর্শন দিয়ে রাজনীতির মাঠ থেকে উঠে এসেছেন এমন একজনকে খুঁজে বের করে তারা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিলেন এবং তিনি নির্বাচিত হলেন। 

প্রথম আলো এবং সিপিডি গ্রুপ যাদের দায়িত্বই হচ্ছে কিভাবে শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের খুত বের করা যায়। সবচেয়ে অবাক লাগল যে শুধুমাত্র এখানেই নয়, প্রথম আলোর ৮ নম্বর পৃষ্ঠায় একটি পোস্ট এডিটোরিয়াল স্বনামে লিখেছেন ড. শাহদীন মালিক। যিনি খুব ভদ্র এবং যথেষ্ট জ্ঞানী একজন মানুষ। তার সবচেয়ে বড় একজন পরিচয় হচ্ছে তিনি এ দেশের সংবিধানের একজন বিশেষজ্ঞ। তিনি শিরোনাম দিয়েছেন, ‘নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগ নিয়ে কিছু সাংবিধানিক প্রশ্ন’। অর্থাৎ তিনিও এটিকে একটি বাহাসে রুপান্তরিত করলেন। তিনি তার বিভিন্ন যুক্তি দেখিয়ে বেশি সুবিধা করতে না পেরে শেষে একটি জিনিস লিখেছেন, যেটি আমার কাছে মনে হয়েছে দেশের এবং জাতির জন্য অপমানজনক এবং ক্ষতকর। আমি জানি না রাষ্ট্র তার এই ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি লিখেছেন, ‘কেউ এর সঠিক ব্যাখ্যা দিলে আমরা সবাই বাধিত এবং উপকৃত হব।’ অর্থাৎ, তিনি যে দুদকের কমিশনার ছিলেন সেখান থেকে তিনি রাষ্ট্রপতির পদে আসলেন, যেখানে আগে মামলা হয়েছে, হাইকোর্টে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি পদ কোন লাভজনক পদ নয়। সুতরাং এটি একটি মীমাংসিত বিষয়। একটি মীমাংসিত বিষয়কে তিনি বাহাসে পরিণত করলেন। তাতে আমার কাছে মনে হল, তিনি সংবিধানের বিশেষভাবে অজ্ঞ। নতুন রাষ্ট্রপতির ওপর তাদের কেন এত রাগ? আমি অবশ্য একটি কারণ খুঁজে পেয়েছি এবং এটি আমার কাছে বাস্তব ভিত্তিক মনে হয়। সেটি হচ্ছে, এরা হল আলাদা শ্রেণীর। যেমন, হিন্দুদের মধ্যে থাকে। এরা হচ্ছে ব্রাহ্মণ, এরা হচ্ছে ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। তেমনি তাদের একটি ক্লাস রয়েছে। তারা নিজেদের বিজ্ঞ ভাবেন। এমন অনেকেই আছেন যারা ভাবেন যদি একটু বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুশীল সমাজে নাম করতে হয় তাহলে প্রথম আলো, দ্য ডেইলি স্টারে লিখতে হবে কিংবা তাদের সাথে তাল মেলাতে হবে। এর সাথে যদি সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) তে থাকা যায় তাহলে তো কথাই নেই। শাহাদীন মালিক অবশ্য সিপিডি’র ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য। শাহাদীন মালিকের কাছে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে যে, দার্শনিক শেখ হাসিনা তার দল থেকে এমন একজনকে রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন দিলেন যিনি জেলা পর্যায়ে বা গ্রাম থেকে এসেছেন। তাদের ভদ্র সমাজ বলতে যা বুঝায়, যেখানে তারা একসাথে পাগলা পানি খান সেখান থেকে একজনকে দিলে তাদের গোত্রের হত। এই গোত্রের বাইরে আগেরবার দিলেন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদকে, এবার দিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে।

অর্থাৎ নেত্রী তার এই মাটি মানুষের লোককেই এক নম্বর ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করছেন। এই ব্যাপারটিতেই তারা অনেক ব্যতিত হয়েছেন। তারা ভাবলেন যে, এত লেখাপড়া করলাম, এত কিছু করলাম এগুলো কি কাজে লাগলো। আমার মনে হয় উনার প্রত্যেক লেখাপড়ার ভিতর ভেজাল রয়েছে। এক জ্ঞান থাকা আর একজন সত্যিকারের বিবেকবান মানুষ কিন্তু এক নন। একজনের অনেক জ্ঞান থাকতে পারে, অনেক কিছু জানা থাকতে পারে। কিন্তু তার বিবেক না থাকলে তার সমস্ত জ্ঞান কোন কাজে লাগে না। শাহাদীন মালিক তার এই লেখা দ্বারা প্রমাণ করলেন, তিনি একজন বিবেকহীন বুদ্ধিজীবী। এরা হচ্ছে দেশের ক্ষতিকর এলিমেন্ট। এরা আসলে দেশ বিদ্রোহী, জনগণ বিদ্রোহী, বাংলাদেশের বিপক্ষ শক্তি এবং পাকিস্তানি আদর্শে বিশ্বাসী। নাহলে একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি নিয়ে একটি বাহাসের সৃষ্টি করতে পারে না। তারা এখন এসব করছেন এবং কিছুদিন পরে দেখা যাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের যে সাঙ্গপাঙ্গ আছে তারা বিভিন্ন লেখা শুরু করে এটাকে একটি ইস্যুতে পরিণত করবে। তার আগেই এ ব্যাপারে একটি সঠিক পন্থা গ্রহণ করতে হবে। এমনকি সম্প্রতিকালের ভারতও এরকম একটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যারা দেশের বিরুদ্ধে কাজ করে, সমাজের বিরুদ্ধে কাজ করে, আমাদের মাটি মানুষ থেকে এসেছে যেসব রাজনীতিবিদরা তাদেরকে যারা হেয় করে তাদেরকে ক্ষমা করা অন্যায় হবে। তাহলে আমার মনে হয় এই অন্যায় আওয়ামী লীগ করতে পারে না। 

১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাবে শাহাদীন মালিক শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন। তার মাত্র পাঁচ বছর আগে এ দেশের ইতিহাসে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যিনি আমাদেরকে এই দেশ দিয়েছেন তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। তখন তার এই সাংবিধানিক জ্ঞান কোথায় ছিল? এটি নিয়ে তো একটি লেখাও দেখিনি। অনেক জায়গায় খুজলাম। কিন্তু কোথাও কোন কিছুই পেলাম না যেখানে শাহদীন মালিক এ ব্যাপারে কিছু বলেছেন।

সবচেয়ে বড় কথা তিনি যেহেতু সংবিধান বিশেষজ্ঞ, অন্তত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ যে করেছিল এর বিরুদ্ধে কথা বলতে পারতেন। সেটি তিনি করতে পারেন নি। অথচ একটি মীমাংসিত বিষয় নিয়ে তিনি তার জ্ঞান দেখাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয় তখন তার সংবিধানে কোন অসুবিধা হয়নি। তার কোন কোন লেখা তো দূরের কথা কোনো আলাপ-আলোচনা, এমনকি ১৫ই আগস্ট যখন আসে তখনও শাহাদীন মালিকের কোন লেখা আমার চোখে পড়েনি। এরা হচ্ছে বিদেশীদের ভাটিয়া বুদ্ধিজীবী এবং শাহদীন মালিককে এত নিচু লেভেলে কখনো চিন্তা করিনি। যেহেতু সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে তাদের বলার কোন কিছু নাই সুতরাং একটা জিনিস তাদের আবিষ্কার করতে হবে। 

সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি কঠিন কঠিন সময়ে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। আমি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আরেকজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে বাহাসের পর্যায়ে নিয়ে যেতে দেখি, যিনি দেশের এক নম্বর ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, এটা কারা পারে? এটা পারে শুধুমাত্র পাকিস্তানিরা। 

শুধু এটুকু বলতে চাই যে জিয়াউর রহমান সাহেবের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা টুকু শাহদীন মালিক রেখেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যা নিয়ে একটি কথা উচ্চারণ করেননি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নিয়ে তার কোন মাথাব্যথা ছিল না। তার বিবেকে সেটি কখনো লাগেনি। কিন্তু তার বিবেকে এখন লাগছে যে কিছুই করা গেল না কিন্তু বিদেশীদের থেকে পেমেন্ট তো অনেক পেলাম। এখন এই পেমেন্টের শোধ তো করতে হবে। সুতরাং তারা অন্য পথ অবলম্বন করছে। তাই আমি বলবো যে আমাদের সকলকে এই সকল লোকদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে এবং এসকল লোক যাতে আর বেশি বাড়াবাড়ি না করতে পারে সে জন্য সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি যিনি এখনো শপথ গ্রহণ করেননি, তাকে নিয়ে এমন নোংরা এবং অসভ্য বাহাসের সৃষ্টি করা কোন আইনে আছে সেটি জনগণকে জানাতে হবে। নাহলে জনগণের রোষে যদি তিনি পরেন তার জন্য কাওকে দোষ দিয়ে লাভ হবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭