ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

পুলিশের খাতায় জীবিত হারিছ চৌধুরী


প্রকাশ: 15/02/2023


Thumbnail

পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত্যুর দাবি করা হলেও পলাতক দেখিয়ে হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিস বহাল রয়েছে এখনো। পুলিশ সদর দফতরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই নোটিস বহাল রেখেছে আন্তর্জাতিক সংস্থাটি।

ইন্টারপোলের তথ্যানুযায়ী, প্রতিটি রেড নোটিস নবায়ন করা হয় ৫ বছর পরপর। এই নবায়নের আবেদন করে থাকে পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)। জানা গেছে, ২০২৫ সালে হারিছ চৌধুরীর রেড নোটিসের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি এনসিটি তার মৃত্যুর বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারে তাহলে সেই রেড নোটিস বহাল রাখার আবেদন আবারও করার সম্ভাবনা রয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মনজুর রহমান জানান, তাঁদের কাছে অফিশিয়ালি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কোনো তথ্য নেই। অফিশিয়ালি নিশ্চিত না হতে পারলে হারিছ চৌধুরীর নামে রেড নোটিস থেকে যাবে।

গত বছরের শুরুর দিকে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমে আলোচিত হলে তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সংস্থাটি জানায়, গত বছরের ১৯ জানুয়ারি হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিশ্চিত হতে সিআইডিকে একটি চিঠি দেয় পুলিশ সদর দফতর। এরপর সেটি তদন্ত শুরু করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগ। ২৫ জানুয়ারি সেই বিভাগ থেকে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এক মাসের বেশি সময় ধরে সেটি তদন্ত করেন পুলিশ পরিদর্শক মো. রাসেল। তার তদন্ত শেষে গত বছরের ১৮ মার্চ পুলিশ সদর দফতরে চিঠি পাঠায় সিআইডি। এই চিঠির বিষয়ে এনসিবি বলছে, হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য সিআইডিকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলাটি তদন্ত করেছিল সিআইডি। আর সিআইডির প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে হারিছ চৌধুরীসহ ওই মামলার পলাতক কয়েক আসামির বিরুদ্ধে রেড নোটিস জারির আবেদন করা হয়েছিল।

গতকাল ইন্টারপোলের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাদেশিদের মধ্যে যাদের নামে রেড নোটিস রয়েছে, তাদের তালিকার ১৫ নম্বরে হারিছ চৌধুরীর নাম রাখা হয়েছে। সেখানে তার নাম চৌধুরী আবুল হারিছ লেখা রয়েছে। এতে তার জন্ম তারিখ থেকে শুরু করে জন্মস্থান, জাতীয়তা, উচ্চতা, ওজন, চুল ও চোখের রংসহ শারীরিক বিবরণ রয়েছে। রেড নোটিসে তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যাকাণ্ডের কথাও উল্লেখ রয়েছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের নথিতে হারিছ চৌধুরী মৃত নন। মৃত হিসেবে নথিভুক্ত আছেন মাহমুদুর রহমান। আর এই মাহমুদুর রহমানের লাশটিই হারিছের বলে প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লেগেছেন হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী। কারণ হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর কোনো নথি না থাকলে তার নামে থাকা সম্পদ সন্তানদের নামে স্থানান্তরিত হবে না। আবার মাহমুদুরই যে হারিছ সেটি নিয়েও তারা রহস্যের মধ্যে ছিলেন। কারণ এক মাসের ব্যবধানে ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর হারিছের ছোট ভাই সেলিম চৌধুরীরও মৃত্যু হয়। সেলিম চৌধুরীর বাসা রাজধানীর শান্তিনগরের কনকর্ড টাওয়ারে। ব্রেইন স্ট্রোকে তার মৃত্যু হলে সিলেটের কানাইঘাটে দাফন করা হয়। হারিছ চৌধুরীর পরিবারের ভাষ্য, হারিছ ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। তার আগে ১১ বছর মাহমুদুর রহমান নামে ঢাকার পান্থপথের একটি ফ্ল্যাটে থাকছিলেন তিনি। এই বাসায় হারিছের শ্যালিকা নিশার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। লাশ সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের জালালাবাদের কমলাপুর এলাকায় জামিয়া খাতামুন্নাবিয়িন মাদরাসায় কবরস্থানে ওই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর দাফন করা হয়। দাফনের সবকিছু করেছিলেন হারিছ চৌধুরীর শ্যালক জাফর ইকবাল মাসুম। মিরপুর-১০ এর বেনারসি পল্লীর শওকত কাবাবের পাশের গলির ‘লস্কর বাড়ি’ নামে তিন তলা বাড়িটি তার।

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হতে সিআইডির যেসব কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন, তাদের তথ্যানুযায়ী, ২০২১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এভারকেয়ার থেকে মাহমুদুর রহমান নামে যে মৃত্যুসনদ নেওয়া হয়েছে, তার ঠিকানা লেখা হয়- রাজধানীর উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর রোডের একটি বাসার ২বি ফ্ল্যাট। সেখানে ২বি নম্বরের কোনো ফ্ল্যাট নেই। তবে এবি-২ নম্বরের একটি ফ্ল্যাট আছে। সেই ফ্ল্যাটের মালিকের নাম মাহমুদুর রহমান এবং তিনি জীবিত আছেন। মাহমুদুর রহমান নামে যে পাসপোর্ট নেওয়া হয়েছে সেখানে জন্ম তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। বাবা মৃত আবদুল আজিজ। মা মৃত রোকেয়া বেগম। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর। এসব কাগজপত্র তৈরিতে সহায়তা করেন হারিছের শ্যালক মাসুম। এই মাসুম হারিছের নামে থাকা একটি দুর্নীতি মামলার আসামিও ছিলেন। আর হারিছ নামে থাকা নথিতে জন্ম তারিখ ১৯৫২ সালের ১ নভেম্বর।

জানা গেছে, ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আত্মগোপনে চলে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তাকে ধরিয়ে দিতে ইন্টারপোলে রেড নোটিস জারি করা হয়। ১৫ বছর ধরে এই নোটিস ঝুললেও তার অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না বা তাকে গ্রেফতার করা যায়নি।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭