ইনসাইড পলিটিক্স

নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি: গাধা ঘোলা করেই জল খায়!


প্রকাশ: 16/02/2023


Thumbnail

নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বিএনপি- এমন ঘোষণা বিএনপি বরাবরই দিয়ে আসছিল। সেই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা, সরকার গঠনের রূপরেখার ২৭ দফাসহ বিভিন্ন অজুহাতে রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি বিভাগে সমাবেশও করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে, ঘটেছে অগ্নি-সন্ত্রাস, আহত-নিহতের মতো ঘটনাও। ফলে রাজনৈতিক মাঠে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা। এরই মধ্যে আবার চাউর হয়, সরকারের সাথে বিএনপির নির্বাচনী সমঝোতার খবরও। এছাড়া কোন দিকে যাচ্ছে বিএনপি?- এই নিয়েও রাজনৈতিক মহলে চলছিল নান ধরনের আলোচনা-সমালোচনা। কিন্তু অবশেষে জানা গেলো আন্দোলনের লেজ গুটিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। ফলে প্রসঙ্গতই প্রশ্ন ওঠেছে, তাহলে জনগণের জান-মাল ধ্বংস; রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ এবং শান্তির দেশে কেন অস্থিরতা-আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বিএনপি?

এদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর গুলশানে ইইউভুক্ত ৭টি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেখতে চায়। ‘ইইউ’র সাতটি দেশের সঙ্গে কথা বলেছি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আজকে বৈঠক করা। তারা চায় আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।

‘ইইউ’ আগামী নির্বাচন নিয়ে যা বলছে, এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আপনাদের মতামত কী?- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা একটা কথা পরিষ্কারভাবে বলেছি যেটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার তার বক্তব্যে বলেছেন আগামী নির্বাচন বিশ্বাস যোগ্য, সুষ্ঠু, অবাধ হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশন কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং নির্বাচন কমিশনকে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে আজকে আমাদের বক্তব্যের কোনো ভিন্নতা নেই। প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন আমরা তাই প্রতিধ্বনিত করেছি। একই সঙ্গে আমরা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সিলেট নগরের টিলাগড় এলাকার সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন মন্তব্য করে বলেছেন, আমেরিকা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে কাজ করতে চায়। গত সাত মাসে আমেরিকার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি একের পর দেশে এসে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য কাজ করেছেন। তাঁদের দেশে গিয়ে নেতাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন। এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ়তার জন্য। ভুল-বোঝাবুঝি সব দূর করে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা উভয় দেশের চাওয়া। কূটনীতিকেরা বাংলাদেশকে তাঁদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দেশ বলে মনে করেন। কারণ, বাংলাদেশে ভিন্ন সুযোগ রয়েছে। কোভিডের সময় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় আয়ের দিক থেকে প্রথম ছিল। দেশে নতুন নতুন যে সম্ভাবনা আছে, সেসবের সঙ্গে তাঁরা সম্পৃক্ত হতে চান।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গাধা ঘোলা করেই জল খায়! বিএনপির অবস্থা এখন তেমনই হয়েছে। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার, গুজব ছড়িয়ে এবং বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের বীজ বুনে- চারা রোপণ করে ফল পরিপক্ক করতে পারেনি বিএনপি। বিএনপির বোনা ষড়যন্ত্রের বীজ অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়েছে। বিএনপির অন্যতম একটি শক্তি ছিল আমেরিকা, কিন্তু সেখানেও কাঙ্খিত ফলাফল পায়নি বিএনপি। বিএনপি ভেবেছিল এবং চেষ্টা করেছিল বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকাকে দিয়ে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে একটা চাপে ফেলে তাদের ক্ষমতা দখলের পায়তারা সফল করবে। কিন্তু তাতেও হিতে বিপরীত হয়েছে। আমেরিকান সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ঢাকা সফরে এসে বিএনপির পাশার দান উল্টে দিয়েছেন। সর্বশেষ বিএনপি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) স্বরণাপন্ন হয়েছিল। তাতেও ফলাফল আসেনি। ফলে বাধ্য হয়েই কাল কেউটের গর্তে প্রবেশ করা ছাড়া আর কোনো গতি নেই। 

ইইউভুক্ত ৭ দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ওবায়দুল কাদের জানান, আমরা যে ইনফরমেশন পাচ্ছি তাতে বিএনপি ২০১৪-১৫ সালের মতো আবারও আগুন সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের ওপর ভর করে সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করছে। বিএনপি আন্দোলনের নামে দেশের স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করছে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের পায়তারা করছে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতাটা ছিল তা হচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং তিনজন কমিশনার সিলেক্টর ছিলেন তিনি। সেই ক্ষমতার বলে তিনি আইনগতভাবে সার্চ কমিটি গঠন করেন ইন্ডিপেন্ডেন্ট লোকজনকে নিয়ে। তার মানে বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের পরে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই এই উদ্যোগ নিয়েছেন। কাজেই আমরা ভালো একটা ইলেকশন চাই। ইলেকশন ব্যবস্থায় গণতন্ত্রকে আমরা আরও ম্যাচিউর দেখতে চাই। সে লক্ষ্যে যা যা প্রয়োজন আমরা তা করছি। 

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল। এতে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১%। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) জয় লাভ করে এবং ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৭৮টি আসন লাভ করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বর্জনের মুখে যে কয়েকটি একতরফা এবং বিতর্কিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এমন পটভূমি আর কোনো দিন বাংলাদেশে সৃষ্টি হবে না- যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তৃতায় একাধিকবার বলেছেন। বিএনপি নির্বাচনে কারচুপির ব্যাপারে যে অভিযোগ আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দীর্ঘদিন থেকে করে আসছে, সেটিও এবারের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহল পর্যবেক্ষণ করবে- যা ইতিমধ্যেই বিশ্ব মোড়ল রাষ্ট্র আমেরিকাও ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতেও আন্তর্জাতিক মহলের একটা চাপ থাকছে। ফলে কোনোভাবেই বিএনপি নির্বাচন বর্জন করতে পারছে না। বিএনপি যদি নির্বাচন বর্জনও করে, তা-ও বিএনপির জন্য শুভকর হবে না। ফলে বাধ্য হয়েই বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে হবে। এখন কেবলই দেখার অপেক্ষার বিষয়, কি করবে বিএনপি?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭