ইনসাইড গ্রাউন্ড

টানা পঞ্চমবার বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় বাঘিনীদের


প্রকাশ: 18/02/2023


Thumbnail

দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর শুরুর পূর্বে বাংলাদেশ নারী দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতির কণ্ঠে ছিলো বেশ আত্নবিশ্বাস। কারণ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসর হলেও বাংলাদেশের জন্য ছিলো এটি পঞ্চম বিশ্বকাপ আসর। আগের চার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে খেলা বাংলাদেশ জয় পেয়েছিলো মাত্র দুইটি ম্যাচে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পেয়েছিলো ওই দুইটি জয়। তাই টাইগ্রেস অধিনায়ক বলেছিলেন আগের আসরগুলো থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজেদের পঞ্চম আসর করে রাখতে চান স্মরনীয়,জয় উপহার দিতে চান বাংলাদেশের মানুষদের। তবে অধিনায়কের কথার সাথে  মিলেনি মাঠের পারফরম্যান্স। বাংলাদেশ হেরেছে গ্রুপ পর্বের প্রথম তিন ম্যাচেই। শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিশ্চিত হয় নিগার সুলতানা জ্যোতির দলের।

২০১২ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পথচলা শুরু হয়ে বাংলাদেশ নারী টি-টোয়েন্টি দলের। প্রথম ম্যাচে জয় তুলে নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে জানান দিলেন বিশ্বক্রিকেট রাঙ্গাতে আগমন হচ্ছে বাংলার বাঘিনীদের। সেটা যে মিথ্যা নয় সেটি প্রমাণ করলেন এর ছয় বছর পরেই। ২০১৮ সালেই অর্জন করে নিয়েছিলেন এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব। নারী ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তির দেশ ভারতকে হারিয়ে ফাইনালে এশিয়ান শিরোপা জিতেছিলেন সালমা খাতুন-ফারজানা হকরা। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটে নারী-পুরুষ দুই বিভাগে সেটিই সেরা সাফল্য। সালমা খাতুনরা এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেও সাকিব-তামিমরা এখনো পিছিয়ে সে দিক দিয়ে। তাই দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রত্যাশার চাপ ছিলো নিগারদের উপরে। তবে সে চাপ সামলে উঠতে পারেনি টাইগ্রেসরা টানা তিন পরাজয়ে বিদায় হয়েছে বিশ্বকাপ থেকে।

অথচ বিশ্বকাপের জন্য বেশ শক্তিশালী স্কোয়াড ঘোষণা করেছিলো বাংলাদেশ। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিক নিগার সুলতানা জ্যোতির কাঁধে দেন দলের দায়িত্ব। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার জাহানারা আলম সালমা খাতুনরা ছিলেন স্কোয়াডে। নারী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেরা চার সফল ক্রিকেটার ছিলেন দলে। শ্রীলঙ্কা নারী দলকে এশিয়াকাপের ফাইনালে তোলা কোচ হাসান তিলকারাত্নকেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের চিন্তা মাথা রেখেই। এরপরেও বাঘিনীদের এমন ব্যর্থতা। বিশ্বকাপের তিন ম্যাচেই বলা যায় শোচনীয় পরাজয় পেয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে উইকেট, আর দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে উইকেটে হারার পর, তৃতীয় ম্যাচে নিউজল্যান্ডের বিপক্ষে হেরেছে ৭১ রানের বিশাল ব্যবধানে।

বিশ্বকাপ পয়েন্ট টেবিলে সব দলের জয় থাকলেও বাংলাদেশ জয়হীন পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্স মাঠের ক্রিকেটেও দেখালেন বাঘিনীরা। দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা  বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের মালিক অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি। তিন ম্যাচে ৩১ গড়ে মোট ৯৩ রান করেছেন তিনি। এছাড়াও চলতি নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটি রেকর্ড করেছেন নিগার। বিশ্বকাপ মঞ্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম বাংলাদেশি নারী ক্রিকেটার হিসেবে করেন অর্ধশতক। এছাড়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪০ রান এসেছে সোবহানা মোসতারির ব্যাট থেকে। তিন ইনিংস মিলিয়ে রান করেন সোবহানা। বল হাতে উল্লেখ যোগ্য কোন পারফরম্যান্স নেই বাংলাদেশের। তবে অভিজ্ঞ সালমা জাহানারা আলমদের ছাপিয়ে তিন ম্যাচ খেলে উইকেট শিকার করেছেন তরুণী মারুফা আক্তার। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই  নিয়েছেন তিন উইকেট।

শুধু বিশ্বকাপ মঞ্চ নয় ধারাবাহিক ভাবে গেলো কয়েক বছর মাঠের ক্রিকেটে তেমন সাফল্য নেই বাংলাদেশ নারী দলের। ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে জিতেছিলো মাত্র দুইটি ম্যাচ তাও দুর্বল প্রতিপক্ষ মালেশিয়া থাইল্যান্ডের বিপক্ষে। আর সবশেষ নিজেদের দশ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় মাত্র এশিয়া কাপের ওই দুইটি ম্যাচেই। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৯৫ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ যার মধ্যে ৫৮ হারের বিপরীতে জয় পেয়েছে ৩৭ ম্যাচে।

তাই বলা যায় আগের চার বিশ্বকাপের ধারবাহিকতায় এবারও গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে বাংলার বাঘিনীদের। তবে এমন ব্যর্থতা আর কতবার? সে প্রশ্নই তোলা থাকুক নারী ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭