ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দেউলিয়া হয়ে ঋণ শোধ করতে না পারলে কী হবে পাকিস্তানের?


প্রকাশ: 18/02/2023


Thumbnail

চরম বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তান। গত কয়েক মাস ধরে ইতিহাসে সবথেকে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে ইসলামাবাদ। বিশেষ করে গত বছর মারাত্মক বন্যা পাকিস্তানের অবস্থা আরও বেহাল করে দিয়েছে। ঋণ দেওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পাকিস্তানের সামনে কড়া শর্ত দিয়েছে। যা পূরণ করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করছে ইসলামাবাদ। কারণ তাদের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডারও একেবারে তলানিতে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের সামনে বড় মাপের ঋণ খেলাপির ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এমনটাই পূর্বাভাস দিয়েছে আমেরিকার নিউইয়র্ক-ভিত্তিক বৈশ্বিক রেটিং সংস্থা ‘ফিচ’। সব মিলিয়ে দেউলিয়া হওয়ার মুখে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান।

মঙ্গলবার ‘ফিচ’-এর পক্ষ থেকে পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ খেলাপির রেটিং ‘সিসিসি+’ (CCC+) থেকে কমিয়ে ‘সিসিসি-‘ করেছে। অর্থাৎ, এতদিন যাও বা পাকিস্তানের পক্ষে বৈদেশিক ঋণ শোধ করার সামান্য সম্ভাবনা ছিল, এখন তাও আর দেখা যাচ্ছে না। সংস্থাটি বলেছে, “আমাদের আশঙ্কা পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার নিম্ন স্তরেই থাকবে। যদিও আমরা প্রত্যাশিত বৈদেশির মুদ্রার প্রবাহ এবং সম্প্রতি এক্সচেঞ্জ রেট ক্যাপ অপসারণের ফলে ২০২৩ অর্থবর্ষের বাকি সময়ে পরিমিত হারে পাকিস্তানের অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পূর্বাভাসও দিয়েছি।” ফিচের আশা আইএমএফ প্রোগ্রামের নবম পর্যালোচনার পর, তাদের শর্ত পূরণে সফল হবে পাকিস্তান। তবে তারপরও ফিচ সতর্ক করে বলেছে, “আমাদের মতে, পাকিস্তানের ঋণ খেলাপির সম্ভাবনা ক্রমে বাড়ছে।”

ঋণ খেলাপি হলে পাকিস্তানের কী হবে? বিপুল পরিমাণ বাণিজ্যিক ঋণের বোঝা রয়েছে পাকিস্তানের ঘাড়ে। ঋণ খেলাপির অর্থ তারা এই বাণিজ্যিক ঋণ আংশিকভাবে বা পুরোটাই পরিশোধ করতে পারবে না। পাক সংবাদপত্র ‘ডন’-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ভান্ডার এমন পর্যায়ে নেমে যায়, যে বাণিজ্যিক ঋণ খেলাপি হয়, তবে পাকিস্তান সরকারের সামনে সেই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে বাণিজ্যিক ঋণদাতাদের ঋণ পরিশোধ করতে নিষেধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না। মার্কিন ডলারের প্রবাহও কমে যাবে। ফলে, বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তৈরি হবে। ফলে অর্থনৈতিক উৎপাদনের ক্ষতি হবে এবং মুল্যবৃদ্ধি চরম সীমায় পৌঁছবে। শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতির কারণে, বিপুল সংখ্যক কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনাও তৈরি হবে। একটা বড় অংশের মানুষের হাতে খরচ করার মতো কোনও অর্থই থাকবে না। দেউলিয়া হয়ে যাবে দেশ।

কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ঋণ খেলাপ করলে তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ঋণ দাতারা। তবে কোনও দেশের ক্ষেত্রে খেলাপি হলে তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা যায় না। কোনও দেশের সরকারকে ঋণ পরিশোধে বাধ্যও করা যায় না। তবে ওই দেশের বিদেশে থাকা সম্পদের ক্ষেত্রে এই নিশ্চয়তা নেই। ২০১২ সালে আর্জেন্টিনার ঋণ খেলাপি হওয়ায়,  ঘানায় থাকা সেই দেশের নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ জাহাজ বাজেয়াপ্ত  করা হয়েছিল। এই অবস্থায় দেনাগ্রস্ত দেশের সঙ্গে ঋণদাতারা আলোচনার মাধ্যমে ঋণের শর্ত নতুন করে নির্ধারণ করতে হয়। আগে যে বন্ডে ঋণ নেওয়া হয়েছিল সেটি বাতিল করে ঋণদাতার প্রতি নতুন বন্ড ইস্যু করতে হয়। নতুন বন্ডের মূল্য সাধারণত পুরোনোটির থেকে কম হয়।

এই অবস্থায় খুব সামান্য ব্যবধানে হলেও ঋণ খেলাপি এড়ানোর চেষ্টা চলছে। ইসলামাবাদের অর্থনীতিবিদ আসাদ আইজাজের গবেষণা বলছে, সামান্য ব্যবধানে ঋণ খেলাপি এড়ানোও পাকিস্তানের অর্থনীতিকে রক্ষা করতে পরে। কারণ, সেই ক্ষেত্রে আইএমএফের মতো বহুপাক্ষিক আর্থিক সংস্থাগুলি পাকিস্তানকে কিছু নগদ দিয়ে সহায়তা করতে পারে। সেই ক্ষেত্রে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। ঋণ খেলাপি এড়াতে আইএমএফ-এর কাছ থেকে ১১০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ চেয়েছে। এই নিয়ে গত সপ্তাহে পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয় আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদের। কিন্তু ১০ দিনের আলোচনার পরও এই বিষয়ে কোনও চুক্তি আদায় করতে পারেনি ইসলামাবাদ। পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, “আইএমএফ ঋণ দেওয়ার জন্য যে শর্ত দিয়েছে, তা পূরণ করা আমাদের কল্পনাতীত। কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কোনও বিকল্প নেই।”



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭