ইনসাইড গ্রাউন্ড

চ্যাম্পিয়নস লিগের ব্যর্থতায় কি নেইমারকে বিদায় বলছে পিএসজি ?


প্রকাশ: 20/02/2023


Thumbnail

বর্তমান বিশ্বে সেরা ফুটবলারদের মধ্যে তালিকা করলে শীর্ষদের জায়গা থাকবেন আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসি, ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে, বা পর্তুগিজ তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। এরপরেই যার নামটা আসবে তিনি নেইমার জুনিয়র। লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর মতো ব্যক্তিগত অর্জন খুব একটা না থাকলেও ফুটবল মাঠে পায়ের জাদুতে সমর্থকদের বিমোহিত করার এক অসীম ক্ষমতা রয়েছে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড নেইমারের। জাতীয় দলের হয়ে কখনো জেতা হয়নি বিশ্বকাপ কিংবা মেসি, রোনালদোর মতো জিততে পারেননি  ব্যালন ডি'অর ট্রফি। এরপরেও সাবেক ফুটবল বোদ্ধাদের অনেকের মতে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলের সমতুল্য নেইমারের মাঠের খেলা।

মাঠে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের বোকা বানানো, দ্রুত গতিতে দৌড়ানো, প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগ ভেদ করে ডি বক্সে বল নিয়ে ছুটে যাওয়া। সব মিলিয়ে ফুটবল মাঠে  নেইমারের পায়ের জাদুতে ফুটে উঠা শৈল্পিক দৃশ্য উপভোগ করে সমর্থকেরা। নেইমারের এমন প্রতিভা চোখ এড়ায়নি ফরাসি ক্লাব পিএসজিরও। তাইতো ২০১৭ সালে ইতিহাস গড়া ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে ব্রাজিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডকে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা থেকে নিয়ে আসে ফরাসি ক্লাব পিএসজি। ২০২২ সালে  নেইমারের সাথে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া পুনরায় ২০২৫ সাল পর্যন্ত  চুক্তি নবায়ন করে ফরাসি জায়ান্ট ক্লাবটি। কিন্তু দীর্ঘ অর্ধযুগের সম্পর্ক এখন অন্তিম পর্যায়ে। পিএসজি নেইমারকে ছেড়ে দিবে এমন খবর ভেসে বেড়াচ্ছে ফরাসি দৈনিকগুলোতে। আবার নেইমার ও খুঁজছেন নতুন ঠিকানা। কেনো নেইমারের কে বেচে দিতে চায় পিএসজি অথবা কেনই বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চলে যেতে চান নেইমার। আজকের আলোচনায় থাকবে সে বিষয়।

স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনা থেকে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো। যেটি বাংলাদেশি টাকায় ২ হাজার ৮৭ কোটি ৪৫০ লাখের ও বেশি। বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ২০১৭ সালের আগস্টের শুরুর দিকে পিএসজিতে নাম লেখান নেইমার। এত বিশাল অর্থ ব্রাজিলের পোস্টার বয়ের পেছনে খরচ করে পিএসজি কি পেলো? এটি এখন বড় প্রশ্ন। ব্রাজিলিয়ান এ তারকাকে নেওয়ার আগেও ফ্রেঞ্চ কাপ, ফ্রেঞ্চ লিগ, ফ্রেঞ্চ লিগ কাপ ট্রফি সবই জিতেছিলো ফরাসি ক্লাবটি। যেটা জিতেনি সেটা হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। মূলত চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জয়ের উদ্দেশ্যে বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করে ব্রাজিলিয়ান তারকাকে দলে ভেড়ায় পিএসজি। তবে সে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো ফরাসি ক্লাবটির। সবশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচেও বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে হেরে যায় ক্লাবটি। এর আগেও ২০১৯-২০ মৌসুমে এই বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ফাইনাল হেরেই চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো পিএসজি। সেবার জিতলে হয়ত পিএসজির হয়ে নেইমারের নামের পাশেও একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা থাকতো। সম্প্রতি চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচের আগে মোনাকোর বিপক্ষে খেলা ম্যাচটি নিয়ে বেশ বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন নেইমার। নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কথার লড়াইয়ে ঝগড়া করেছিলেন পিএসজির ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে৷ মেজাজ হারিয়েছেন সতীর্থদের সাথেও। তাইতো ফরাসি ক্লাবটির মালিক উঠে পড়ে লেগছেন নেইমারকে ছেড়ে দিতে। এমনকি নেইমারকে ছাড়তে বিশাল অঙ্ক দাবি করছেন না পিএসজির মালিক। ২২২ মিনিয়ন ইউরোর ৬০ শতাংশ পেলেই নেইমারকে ছেড়ে দিতে রাজি ক্লাবটি। তাহলে শুরু ধারণায় সত্যি হলো চ্যাম্পিয়নস লিগ এনে দিতে না পারায় নেইমারের পেছনে আর বিনিয়োগ করতে চায় না পিএসজি। গতবছর পিএসজির মালিক নিজের মুখেও শিকার করেছেন ইউরোপ সেরা শিরোপা না জিতলে এত অর্থ ব্যয় করার কোন মানেই হয় না। পিএসজিতে বর্তমান মেসির মূল্যের চেয়েও বেশি নেইমারের মূল্য। তাই খরচ কমাতে নেইমারকে ছেড়ে দিতে চায় পিএসজি।

২০১৭ সালে পিএসজিতে অভিষেকটা দারুণ করেছিলেন নেইমার জুনিয়র। ২০১৭-২০১৮ মৌসুমে পিএসজির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ২৮ ম্যাচে করেছিলেন ৩০ গোল এসিস্ট করেছিলেন ১৬ টি। কিন্তু ইনজুরি সঙ্গী হওয়ায় ২০১৮-১৯ মৌসুমে খেলতে পারেননি সবগুলো ম্যাচ এরপরেও ২৩ গোলের পাশাপাশি ১১ টি আসিস্ট করেছিলেন এই ফরোয়ার্ড। পিএসজিকে এনে দিয়েছিলেন লিগ ওয়ান, ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ ও কোপা দেলরের শিরোপা। ক্লাবটির মধ্যমণি তখনো ছিলেন নেইমার। কিন্তু ততদিনে রাশিয়া বিশ্বকাপে আলো ছড়িয়ে বিশ্বফুটবলে জায়গা করে নেন ফরাসি তারকা কিলিয়ান এমবাপ্পে। পিএসজির চোখ ও গিয়ে পড়ে এমবাপ্পের উপরে। অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জয়ের স্বপ্নে বুদ হয়ে থাকা পিএসজি শক্তি বাড়াতে, ২০১৮-১৯ মৌসুমে দলে ভেড়ায় এমবাপ্পেকেও। সে থেকেই নেইমার যেনো ফরাসি তারকার ছায়া হয়ে রইলেন। দুইজনের রসায়নটা খুব একটা ভালো নয়। গত মৌসুমের শুরু থেকে নেইমার-এমবাপ্পের দ্বন্দ্ব ছিল সংবাদের শিরোনামে। এমনকি এমবাপ্পে নাকি পিএসজিতে থাকার জন্য নেইমারকে বিক্রির শর্তও দিয়ে রেখেছেন। এসব কিছু হয়ত আর সহ্য হচ্ছে না ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের তাই তিনি নিজেও চাচ্ছেন ঠিকানা বদলের।

ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় নিয়মিত সাফল্য পেলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বরাবরই ব্যর্থতার বৃত্তে খাবি খাচ্ছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন। নেইমার জুনিয়রকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার জন্য দলে নিলেও  ২০১৯-২০ মৌসুমে রানারআপ হওয়াই এখন পর্যন্ত প্রতিযোগিতায় ফরাসি ক্লাবটির সর্বোচ্চ সাফল্য। ২০২০-২১ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের প্রথম লেগে পার্ক দেস প্রিন্সেস স্টেডিয়ামে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ১-২ গোলে হেরেছিল পিএসজি। ইতিহাদ স্টেডিয়ামে ফিরতি লেগে  ০-২ গোলে হেরে আবারও স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ফরাসি জায়ান্টদের। পিএসজির হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সব মৌসুম মিলিয়ে মোট ৪১ ম্যাচে মাঠে নেমে ২২ গোল করেন নেইমার। লিগ ওয়ানে পিএসজির হয়ে ৪৬ এসিস্ট করা নেইমার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ছিলেন এসিস্ট বিহীন। পিএসজির হয়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৭২ ম্যাচে ১১৭ টি গোল করেছেন এই তারকা। যেখানে এসিস্ট করেছেন ৭৬ টি। পরিসংখ্যান বলছে বার্সেলোনা থেকেও ১৪ ম্যাচ কম খেলা পিএসজিতে বেশি উজ্জ্বল ছিলেন নেইমার। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় ১৮৬ ম্যাচ খেলে গোল পেয়েছেন ১০৫ টি এসিস্ট করেছেন ৭৬টি। ফরাসি ক্লাবটিকে হয়ত আরও বেশি কিছু দিতে পারতেন নেইমার তবে তা পূরণ করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান এই ফুটবলার। তবে এর দায়টা যতটা নেইমারের, ততটাই তাঁর দুর্ভাগ্যেরও। কারণ, পিএসজির লক্ষ্যপূরণ কিংবা মাঠের ফুটবলে নেইমারের সেরাটা দেওয়ার ক্ষেত্রে বারবার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে নেইমারের চোট।

লিগ ওয়ানের সবশেষ ম্যাচেও চোটে পড়ে মাঠের বাইরে নেইমার জুনিয়র। এ চোট কি পিএসজির বাহিরে নিয়ে যাবে নম্বর টেনকে সে প্রশ্ন তোলা থাকুক সময়ের কাছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭