ইনসাইড গ্রাউন্ড

রেকর্ড বইয়ে অনবদ্য অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি, থাকবে সবার শীর্ষে


প্রকাশ: 21/02/2023


Thumbnail

জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড ইংল্যান্ডের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম জুটি। ১৪৬ বছরের টেস্ট ইতিহাসে এমন জুটি এর আগে দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে জেমস অ্যান্ডারসন ও স্টুয়ার্ট ব্রড ইংল্যান্ডকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। যেখানে যেতে অন্য টেস্ট খেলুড়ে দেশকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। সেখানে ১৩৩ ম্যাচেই এমন কীর্তি গড়লেন অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি। বর্তমানে টেস্ট সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড দল অবস্থান করছে নিউজল্যান্ডে। ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই দলের মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচও। মাউন্ট মঙ্গানুই অনুষ্ঠিত দুই দলের মধ্যেকার প্রথম টেস্ট ম্যাচে অ্যান্ডারসন-ব্রড ভেঙ্গে ফেললেন টেস্ট ইতিহাসের পুরানো এক রেকর্ড। পুরানো রেকর্ড ভেঙ্গে রচনা করেছেন নতুন রেকর্ড। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি গ্লেন ম্যাকগ্রা এবং শেন ওয়ার্ন জুটিকে পেছনে ফেলে এখন সাদা পোশাকে সর্বোচ্ছ উইকেট শিকারির মালিক অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি।

ইতিহাসের দ্বিতীয় বোলিং জুটি হিসেবেও এক হাজার টেস্ট উইকেট’র এলিট ক্লাবে ঢুকে গেলেন ইংলিশ এই দুই কিংবদন্তি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনে নীল ওয়াগনারকে আউট করেন ব্রড। আর, এর মাধ্যমে গ্লেন ম্যাকগ্রা-শেন ওয়ার্নের পর ইতিহাসের দ্বিতীয় বোলিং জুটি হিসেবে এক হাজার টেস্ট উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন অ্যান্ডারসন-ব্রড। গ্লেন ম্যাকগ্রা-শেন ওয়ার্ন জুটি ১০৪ ম্যাচ খেলে ১০০১ উইকেট শিকার করেছিলেন অজিদের জার্সি গায়ে। আর ইংলিশদের জার্সিতে অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটি ১৩৩ ম্যাচে ১০০২ উইকেট শিকার করে উঠে গেলেন সবার শীর্ষে। এখন সবাইকে ছাড়িয়ে যৌথভাবে তাঁদের উইকেট ১০০৯টি। এ রেকর্ড ভাঙ্গতে শেন ওয়ার্ন-ম্যাকগ্রা থেকে অ্যান্ডারসন-ব্রডদের ২৯ ম্যাচ বেশি লাগলেও ইংলিশ জুটিটি অনন্য এক জায়গায়। কারণ পেস জুটি হিসেবে এক হাজার টেস্ট উইকেটের মাইলস্টোনে যে তারাই প্রথম জুটি।

২০০৩ সালে ঘরের মাঠ লর্ডসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে অভিষেক হয় জেমস অ্যান্ডারসনের। তখন অ্যান্ডারসন ছিলেন ২১ বছর বয়সী এক তরুণ। কে জানতো সে তরুণ ছেলেটি হয়ে উঠবেন ইংল্যান্ড টেস্ট ক্রিকেটের প্রধান বোলিং অস্ত্র। অথবা কে ভেবেছিলো ইংল্যান্ডের হয়ে খেলবেন দীর্ঘ ২০ বছর। তবে সবার ভাবনা কিংবা কল্পনা যাই হোক ইংল্যান্ড দলে সাদা পোশাকে এখনো বল হাতে মাঠে নামেন ৪০ বছর বয়সী অ্যান্ডারসন। ধীরে ধীরে ইংলিশদের ভরসার প্রতীক হয়ে উঠা অভিজ্ঞ এই ডানহাতি বোলার এখন ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে। গতির সাথে বলে সুইং দিয়ে ব্যাটসমানকে বোকা বানানোর এক অসাধারণ দক্ষতা রয়েছে অ্যান্ডারসনের। ইউরোপ কিংবা এশিয়ার মাটিতে স্লোয়ার অথবা বাউন্সি সবই প্রয়োগ করতে জানেন ইংল্যান্ডের হয়ে ১৭৮ টেস্ট ম্যাচ খেলা এই ক্রিকেটার। ক্যারিয়ারে সব মিলিয়ে ৬৮২ টি উইকেট শিকার করেছেন অ্যান্ডারসন। এর মধ্যে এক ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করেছেন ৩২ বার এবং দশ উইকেট নিয়েছেন ৩ বার। ইংল্যান্ডের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ অ্যাশেজ টেস্ট সিরিজটি খেলা হয় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি দেশ অস্ট্রেলিয়া। আর তাদের বিরুদ্ধেই বেশ সফল অ্যান্ডারসন। অজিদের বিপক্ষে মোট ৩৫ টি ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১১২ উইকেট। আবার এশিয়ার দেশ ইন্ডিয়ার বিপক্ষে যেনো আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে অ্যান্ডারসনের বোলিং। এশিয়ার এ দেশটির বিপক্ষে সর্বোচ্চ ১৩৯ টেস্ট উইকেট শিকারের রেকর্ড রয়েছে ডানহাতি এ পেসারের। তবে বিদেশের মাটিতে ইংলিশ এ তারকার স্মৃতি তেমন সুখকর নয় কারণ ১৭৮ টেস্ট ক্যারিয়ারে ৬৮২ উইকেটের ৪২৯ টি নিয়েছেন নিজেদের মাটিতেই। ইংলিশ এ তারকা ৬৫০ পঞ্চাশের উপরে উইকেট নেওয়া খেলোয়াড়দের তালিকায় তৃতীয় হলেও ফাস্ট বোলার হিসেবে প্রথম।

জেমস অ্যান্ডারসনের ৫ বছর পরে ইংল্যান্ডের হয়ে সাদা পোশাকে অভিষেক ঘটে আরেক কিংবদন্তি বোলার স্টুয়ার্ট ব্রডের। শারীরিক গঠনে হাল্কা পাতলা হলেও শারীরিক উচ্চতায় অ্যান্ডারসনের চেয়ে দীর্ঘ ব্রড। ২২ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে স্টুয়ার্ট ব্রডের। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের হয়ে খেলেছেন ১৬০টি টেস্ট ম্যাচ। ৩৬ বছর বয়স হলেও মাঠের পারফরম্যান্সে রয়েছে তারুণ্য। তাইতো ইংল্যান্ডের হয়ে খেলে যাবেন হয়ত আরও কয়েক বছর। রেকর্ডে ছাড়িয়ে যাবেন অনেক কিংবদন্তিদের। তবে এখন পর্যন্ত যা রেকর্ড করেছেন তাতেও ইংলিশদের কিংবদন্তি হয়ে থাকবেন ব্রড। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলা খেলোয়াড়দের তালিকার নয় নম্বরে থাকা ব্রড নিজের ঝুলিতে নিয়েছেন ৫৭১ উইকেট। ১৫ রান দিয়ে ৮ উইকেট শিকার ব্রডের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। ৩৬ বছর বয়সী এই পেসার টেস্ট ক্যারিয়ারে ৫ উইকেট ১৯ বার ও দশ উইকেট নিয়েছেন ৩ বার। ১০০৯ উইকেট শিকার করা সতীর্থের সঙ্গে ক্যারিয়ারের অনেকটা মিল রয়েছে ব্রডের। অ্যান্ডারসনের মতোই দেশের মাটিতে বেশ সফল ব্রডও। কারণ ৫৭২ উইকেটের ৩৭০ টি উইকেটেই শিকার করেছেন ঘরে মাটিতেই। টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে ব্রডের প্রিয় প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া। অজিদের বিপক্ষেই বেশ সফল ব্রড। স্মিথ-ওয়ার্নারের দেশের বিপক্ষ সেরা বোলিং ফিগার সহ ব্রডের সংগ্রহে আছে ১৩১ উইকেট। ডানহাতি এই বোলারের রয়েছে আরও একটি কীর্তি। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ৫০০ উইকেট শিকার করেছেন ক্যারিয়ারের ১৪০ তম টেস্ট ম্যাচে। কম ম্যাচ খেলে ৫০০ উইকেট শিকার করেছে এমন তালিকার ৭ম স্থানে আছেন ইংলিশ এই ক্রিকেটার।

২০০৮ সালে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবার একসঙ্গে খেলেন দুজনে। তিন ম্যাচের সে টেস্ট সিরিজ ইংল্যান্ড জিতেছিলো ২-১। এরপর ১৫ বছর আর নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জেতা হয়নি ইংলিশদের। ঠিক ১৫ বছর পরে সে নিউজল্যান্ডের মাটিতে দেশকে টেস্ট জিতিয়ে দুইজনে করলেন অবিস্মরনীয় রেকর্ডও। কিংবদন্তি এই জুটির এখন উইকেট সংখ্যা ১০০৯টি। যার মধ্যে ৫২৫ উইকেট শিকার জেমস অ্যান্ডারসনের আর ব্রডের শিকার ৪৮০ উইকেট। টেস্ট ক্রিকেটে সফলতম জুটির তালিকায় তিনে আছে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন ও চামিন্ডা ভাস। একসঙ্গে শ্রীলঙ্কান এই জুটির টেস্টে উইকেট সংখ্যা ৮৯৫টি। এরপর ৭৬২ উইকেট নিয়ে চারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেস জুটি কোর্টনি ওয়ালশ ও কার্টলি অ্যামব্রোস। শীর্ষ পাঁচে থাকা অস্ট্রেলিয়ান  জুটি মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়ন। এ দুজন একসঙ্গে নিয়েছেন ৫৮০টি উইকেট।

মিচেল স্টার্ক ও নাথান লায়ন টেস্ট ক্রিকেটে এখনো খেলা চালিয়ে গেলেও অ্যান্ডারসন-ব্রড জুটির ১০০৯ উইকেটের রেকর্ড ভাঙ্গার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তাই বলা যায় ইংলিশ এই জুটির রেকর্ড টেস্ট ক্রিকেটে এক অনবদ্য কীর্তি। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এটিই হয়ত শীর্ষস্থান দখল করে রাখবে রেকর্ড বইয়ের পাতায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭