ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদা জিয়া ইস্যু: রাজনীতি ও নির্বাচন প্রসঙ্গ


প্রকাশ: 22/02/2023


Thumbnail

দীর্ঘদিন অসুস্থতা ও কারাভোগের কারণে দেশের রাজনীতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো আলোচনা না হলেও সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের পর পর কয়েকটি বক্তব্যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক মহলে বেগম খালেদা জিয়া এখন হটকেক। গণমাধ্যমেও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি এবং নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।          

গত রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (জেএটিআই) আয়োজিত নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন না, তাঁর মুক্তির সময় এমন কোনো শর্ত ছিল না। তবে দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় সংবিধান অনুযায়ী তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাঁকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবে- এ রকম শর্ত সেটার (খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন) মধ্যে ছিল না।’

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর ভিত্তিতে খালেদা জিয়াকে বাসায় নেওয়া হয়েছে। তখন শেখ সেলিমের এই বক্তব্যকে ‘অপপ্রচার, বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে নাকচ করে দিয়েছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ, তিনি কী করবেন, সেটা আমার বলে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু তাঁকে যখন (ফৌজদারি কার্যবিধি) ৪০১ ধারায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি অসুস্থ হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। সেখানে লিখে রাখিনি তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যদি কার্যক্রমের কথাই বলি- তিনি নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তাহলে সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেতে হবে। ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’

তাহলে কি খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন? এমন প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির সময় যে চিঠি লেখা হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, ওনার শারীরিক অবস্থা এমন, সুচিকিৎসা না হলে তাঁর জীবন বিপন্ন হবে। আপনারাই বিচার করেন, যিনি অসুস্থ, তিনি কি রাজনীতি করতে পারেন? যদি আপনাদের (সাংবাদিকদের) বিবেচনায় মনে হয় তিনি রাজনীতি করতে পারেন, তাহলে আপনাদের বিবেচনা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে। তিনি অসুস্থ, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এটাই মনে হচ্ছে বেস্ট জাজমেন্ট।’

সূত্র জানায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জেলে যান খালেদা জিয়া। এই মামলায় তার পাঁচ বছর কারাদণ্ড হয়। একই বছর ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় তাঁর সাত বছর জেল হয়। সেই হিসেবে খালেদা জিয়ার কারাবাসের মেয়াদ পাঁচ বছর হলো ৮ ফেব্রুয়ারি। একটি মামলায় উচ্চ আদালত তাঁর শান্তির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। বিএনপির দাবি, দুটো মামলাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। খালেদা জিয়া কোনো দুর্নীতি করেননি। দুটো মামলায় হাইকোর্ট রায়ের পর লিভ টু আপিল দায়ের করলেও তিন বছর ধরে তা ঝুলে আছে। বিএনপি একটিরও নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা করছে না। তাদের ভয়, আপিল বিভাগে নাকচ হলে আইনি লড়াইয়ের শেষ সুযোগটিও থাকবে না। আওয়ামী লীগের অভিযোগ, বিএনপিই খালেদা জিয়ার মুক্তি চায় না বলে লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করছে না।

এসব বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রথম জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় হয়। তখন বিএনপির কোনো নেতা-কর্মীরা কেউ ভাবেনি, বেগম খালেদা জিয়াকে এতোদিন কেউ আটকে রাখতে পারবে। হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন। আবার বিএনপি নেতারা বলেছিলেন, লড়াই-সংগ্রাম আন্দোলনের মাধ্যেমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা হবে। কিন্তু সেটিও তারা পারেনি। যখন কোভিড শুরু হলো, তখন শামীম ইস্কান্দর এবং জাহানারা মিলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে আশ্বস্ত করলেন। পরে বিশেষ বিবেচনায় ফৌজধারী কার্যবিধি ৪০১ অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় ৬ মাসের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে জামিন দেওয়া হলো। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৯টি মামলা রয়েছে, এর মধ্যে ৩৭টি মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন এবং ২টি মামলায় তার সাজা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেই মোতাবেক বেগম খালেদা জিয়া আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। তবে তিনি চাইলে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন। এখন অপেক্ষার পালা আসলে কী করবেন বেগম খালেদা জিয়া?  



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭