ইনসাইড পলিটিক্স

কার পক্ষে খেলবেন খালেদা জিয়া?


প্রকাশ: 22/02/2023


Thumbnail

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা–না পারা প্রশ্নে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাদের তর্কের লড়াইয়ের মধ্যে প্রশ্ন উঠছেন কার পক্ষে খেলবেন খালেদা জিয়া? উল্লেখ্য যে, গত রোববার ঢাকায় নবনিযুক্ত সহকারী জজদের ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাঁকে (খালেদা জিয়া) মুক্ত করা হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না বা রাজনীতি করা থেকে বন্ধ থাকতে হবে, এ রকম শর্ত সেটার (খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে করা আবেদন) মধ্যে ছিল না।’ এরপর থেকেই তার (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করতে পারা–না পারা নিয়ে নানা রকম আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। এ আলোচনার মধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রশ্ন তুলেছেন যে, খালেদা জিয়া রাজনীতি করলে তিনি কার পক্ষে খেলবেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন না করার ঘোষণা করেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আদায় করেই নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে দলের পক্ষ থেকে। অন্যদিকে সংবিধানের অধীনেই আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে সরকার তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সরকার সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো কিছু করবে না বলে সুস্পষ্টভাবে বলছে। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপিকে ছাড়াই যদি আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেক্ষেত্রে এ ধরনের এক তরফা নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। ফলে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়বে এবং নিষেধাজ্ঞারও একটা আশঙ্কা তৈরি হবে। যদি সে রকম কিছু হয় তাহলে এমন পরিস্থিতিতে অনির্বাচিত সরকার গঠনের একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। অর্থাৎ ২০০৭ সালের মতো আরেকটি এক-এগারো সরকার ক্ষমতায় আসার সুযোগ পাবে। আর এক্ষেত্রে অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে এক-এগারো কুশলীবরাও এখন বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এক-এগারো সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সেটি রাজনীতিতে আরও অশনি সংকেত নিয়ে আসবে। সেটা আওয়ামী লীগ-বিএনপি দু’দলের জন্যই ক্ষতিকর হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এদেশে এক-এগারো সরকার প্রতিষ্ঠার ফলে সবচেয়ে ভুক্তভোগী ব্যক্তি ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, এক–এগারোর পর সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে আরাফাত রহমান (কোকো) মারা গেছেন। শুধু তাই নয়, এক-এগারো সরকারের করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলায় দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এখন নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন। এক-এগারো সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়াকে আটক করা হয় এবং জাতীয় সংসদ ভবনের একটি বাড়িকে সাব জেল বানিয়ে সেখানে বন্দি রাখা হয়। অর্থাৎ এটি পরিষ্কার যে, এক-এগারো সরকারের সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন খালেদা জিয়াই। ওই সরকারের অত্যাচারে তিনি তার কনিষ্ঠ পুত্র কোকো হারিয়েছেন এবং আরেক পুত্র তারেক জিয়া নির্বাসন জীবন কাটাচ্ছেন। ফলে এমন বাস্তবতায় আবার দেশে কোনো এক-এগোরো সরকার প্রতিষ্ঠা হোক সেটি তিনি নিশ্চিয় চান না।

এখন প্রশ্ন হল তাহলে কি তিনি আগামী নির্বাচনে অংশ নিবেন? কিন্তু সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে বলা আছে, যদি নৈতিক স্খলনের দায়ে কেউ দুই বছর বা তার বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তিনি সাজা ভোগের পর পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।’ সে বিবেচনায় তিনি আগামী নির্বাচনেও অংশ গ্রহণ করতে পারবেন না। তাহলে কি তিনি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করবেন? উল্লেখ্য যে, খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ্য। (ফৌজদারি কার্যবিধি) ৪০১ ধারায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় সাজা স্থগিত রেখে দুটি র্শতে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই সময় যে দুটি শর্তে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে পারবেন না। দেশে থেকে বাসায় চিকিৎসা নেবেন। কিন্তু খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা নেওয়া আবেদন করলে সরকার অনুমতি দেয়নি। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতারা এবং সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত সংশ্লিষ্টরা বলে আসছিলেন যে অসুস্থতার জন্য মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়া মুক্ত রয়েছেন। ফলে বিএনপি নেত্রী অন্য কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না। কিন্তু  খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে পারা না–পারা প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে রাজনৈতিক মহলে এখন নতুন প্রশ্ন উঠছে যে, খালেদা জিয়া কি দলকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার শর্তে বিদেশে চিকিৎসা করতে যাওয়া সুযোগ নিবেন? নাকি তিনি আরেকটি এক-এগারো সরকার কামনা করছেন অর্থাৎ এখন তিনি কার পক্ষ হয়ে খেলবেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭