ইনসাইড পলিটিক্স

বেগম জিয়া মাইনাস: তারেক না বিএনপি চায়?


প্রকাশ: 22/02/2023


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। সেইসঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়েও বিএনপির মধ্যে সন্দেহের ডালপালা ছড়িয়েছে। বিশেষ করে এই সময়ে খালেদা জিয়ার বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে দলটির নেতাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে। এর মাধ্যমে সরকার কোনো কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বলেও মনে করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্য। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হলে তারেকের ক্ষমতা খর্ব হবে- তাই বেগম জিয়াকে দল থেকে মাইনাস করতে চায় বিএনপির একাংশ। বিএনপির একাধিক সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে।  

এদিকে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, শর্তসাপেক্ষে অসুস্থতার কারণ দশিয়ে খালেদা জিয়া সরকারে অনুকম্পায় এবং বিশেষ বিবেচনায় যে জামিন নিয়েছেন, তাতে বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় নেই। বেগম জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার পেছনে একটি কারণ হতে পারে- সেটি হলো তার অসুস্থতা। কিন্তু অসুস্থ হলেই কি বক্তৃতা বা বিবৃতি দেয়া যায় না?- বিএনপির মধ্যে এ ধরনের অসংখ্য প্রশ্ন এবং সন্দেহের ডালপালা ইতিমধ্যেই গজিয়ে ওঠেছে। কেউ কেউ মনে করছেন বিএনপি বা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান খালেদা জিয়াকে বিএনপি থেকে মাইনাস করতে চাইছেন। বাংলাদেশে বসবাসরত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের সমঝোতা হয়েছে বলেও কেউ কেউ মনে করছেন।
         
সূত্র জানায়, গত সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক বৈঠক বসে। ভার্চুয়াল ওই বৈঠকের শুরুতে অনির্ধারিত বিষয় হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা, না করা নিয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্য আলোচনায় স্থান পায়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্য তাঁদের বক্তব্যে বলেছেন, সরকার কী কারণে বিষয়টি সামনে এনেছে, তা পরিষ্কার নয়। এর আগে একাধিকবার সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলেও পরিষ্কার কোনো জবাব দেননি আইনমন্ত্রী। এবার তিনি হাসিমুখে যেভাবে খোলামেলা কথা বলেছেন, তাতে সন্দেহ হওয়াই স্বাভাবিক।

বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, বৈঠকে দুই নেতা বলেছেন, এ বিষয়ে বিএনপির কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত হবে না। তাঁদের যুক্তি, কী কারণে সরকার বিষয়টি সামনে এনেছে, কিছুদিনের মধ্যে তা অবশ্যই স্পষ্ট হবে। ততো দিন পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করাই ভালো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, সরকারের এক মন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে বিএনপি কোনো মন্তব্য কিংবা বক্তব্য দেবে না, এটা দলের সিদ্ধান্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতা বলেছেন, বিষয়টি স্পর্শকতার। খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সঙ্গে বিএনপির রাজনীতিতে তারেক রহমানের ক্ষমতা খর্ব হওয়ার বিষয়টি যুক্ত। কারণ তারেক রহমান এখন এক হাতে দল চালাচ্ছেন। সব সিদ্ধান্ত তিনিই নিচ্ছেন। খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হলে এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। তাই এ নিয়ে দলের সবার সঙ্গে খোলামেলা কথাও বলা যাচ্ছে না।

বিএনপি নেতাদের বিশ্লেষণ, অন্তত চারটি কারণে এখন এ বিষয়টি আলোচনায় এনেছে সরকার। (এক) খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে বাধা না দিতে বিদেশিদের চাপ থাকতে পারে। (দুই) সরকারের কথায় রাজনীতিতে সক্রিয় হলে খালেদা জিয়া অসুস্থ নন এ প্রেক্ষাপটে তাঁকে আবার কারাগারে পাঠানো হতে পারে। কারণ অসুস্থতার শর্তে তাঁর সাজা স্থগিত করা হয়েছিল। (তিন) বিএনপিকে নির্বাচনে আনার শর্ত হিসেবে খালেদা জিয়াকে রাজনীতি করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে। আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি করার জন্য এ বক্তব্য দেওয়া হয়েছে। (চার) সরকারবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে নতুন বিতর্ক তুলে বিএনপিকে ব্যস্ত রাখা। মার্চে বিএনপি বড় আন্দোলনে যেতে চায়- বিষয়টি মাথায় নিয়ে সরকার এই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

বিএনপির এসব সন্দেহের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলের নেতারা বলেছেন, এর আগেও বিভিন্ন সময় সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে অনেকেই বলে আসছিলেন, অসুস্থতার জন্য মানবিক কারণে সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত আছে। ফলে খালেদা জিয়া অন্য কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবেন না। এত দিন বিএনপি এ নিয়ে নানা কথা বললেও বিষয়টি আইনমন্ত্রী স্পষ্ট করেননি। এখন কেন তিনি বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বললেন?

আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের এক দিন পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও একই রকম মন্তব্য করেছেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকায় অমর একুশে বইমেলায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্টল পরিদর্শন শেষে বিএনপি নেত্রীর রাজনীতিতে ‘ফেরার’ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘তিনি বিএনপির নেতা হিসেবে যদি রাজনীতি করতে চান, সে ক্ষেত্রে যে শর্তে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটি মেনে করতে হবে।’

এর আগে গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা ও সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছিলেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না, এমন মুচলেকা দিয়েছেন। বিএনপি তখন সভা-সমাবেশে জোরগলায় শেখ সেলিমের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছে।

তবে বিএনপির এক নীতিনির্ধারক বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের নেতারা সচরাচর দেখা করতে পারেন না। তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নজর এড়িয়ে যেতে হয়। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশের আগে তাঁর বাড়ির সামনে তল্লাশিচৌকি বসানো হয়েছিল। এসব দেখে তো মনে হয়, সরকার খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দিতে চায় না।
 
এসব বিষয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিএনপির রাজনৈতিক দিক নির্দেশক হিসেবে কাজ করছেন। তারেক অনুসারীরা আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোর বিরোধী। কিন্তু বেগম জিয়ার অনুসারীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী। এ নিয়ে বিএনপিতে একটি দ্বন্দ্ব ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। যে কারণেই তারেক অনুসারীরা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে দল থেকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র করছেন। এবং যেহেতু বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন, সেক্ষেত্রেও তারেক এবং তার অনুসারীদের মধ্যে বেগম জিয়াকে নিয়ে একটি সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে যে, সরকারের সঙ্গে কোনো ধরনের আঁতাত করেছেন বেগম জিয়া। যে কারণেই বেগম জিয়াকে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে দিচ্ছেন না তারেক এবং তার অনুসারীরা। এখন দেখার বিষয় খালেদা পন্থীরা তারেকের সন্দেহের জাল ভেদ করে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে পারবেন, নাকি মাইনাস হবেন বেগম জিয়া?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭